চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে চসিকে ঠিকাদারি ও দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত প্রকৌশলী হচ্ছেন সারোয়ার আলম খান। তিনি চসিকের বিদ্যুৎ শাখায় উপ–সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চসিক প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো নির্দেশনাটি গতকাল চসিকে পৌঁছে। এতে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামত ও তথ্য প্রমাণসহ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, সারোয়ার আলম খানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদান, নিজ নামে ট্রেড লাইসেন্স সৃজন করে চসিক থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ গ্রহণ এবং দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি আমার চোখে পড়েনি। কাল দেখব। যেভাবে নির্দেশনা আছে সেভাবে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে অভিযোগপত্রে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ অনুযায়ী, কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেয়া বেআইনি। অথচ মেসার্স অলটেক কর্পোরেশন নামে সরওয়ার আলম খান ও তার পার্টনার ঠিকাদারি করেছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাফিক সিগন্যালের অচল মোড়সমূহের পোল উত্তোলন ও আনুষাঙ্গিক কাজ, চসিক আওতাধীন মেমন হাসপাতালের পুরাতন ও নষ্ট এয়ার কন্ডিশন মেরামত ও সার্ভিসিং কাজ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখায় হিসাব (৩০০৮১১১০০০০৬১১৩) খোলা হয়। এই হিসাবে মেসার্স অলটেক কর্পোরেশনের নামে চসিক থেকে প্রাপ্ত দুটি চেক ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ ও একই বছরের ৩০ জুন আরেকটি চেক জমা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, আগ্রাবাদ এঙেস রোড ও পিসি রোড সম্প্রসারণ হওয়ায় পিডিবির পোলসমূহ স্থানান্তর কাজের জন্য দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে যথাক্রমে ১ কোটি ৭৭ লাখ এবং ৯৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাক্কলন মেনে নতুন কোনো মালামাল অর্থাৎ পিসি পোল, পিডিবির সঞ্চালন লাইনের ক্যাবল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মালামাল নতুন দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে পূর্বের স্থিত মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই পুরাতন মালামাল স্টোরে জমা দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে অভিযুক্ত প্রকৌশলী পুরাতন মালামাল ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, সরোয়ার খান চসিকে চাকরি নেওয়ার সময় ২০০৩–২০০৪ সেশনে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ জমা দেয়। অথচ একই সেশনে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে অনার্স সনদ অর্জন করেন। যা জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনা বিরোধী। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, একই শিক্ষাবর্ষে দুটি ডিগ্রি অর্জন করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রকৌশলী সরোয়ার আলম খান আজাদীকে বলেন, আমাকে হয়রানি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ পোল নিয়ে আগেও অভিযোগ করে, যার সত্যতা মিলেনি। আমার নামে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও নাই। একই সেশনের দুটি সনদ প্রসঙ্গে বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশনের ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি নিয়েছি। অন্য কোনো সনদ তো দিইনি। সেক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা না।