নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কিনছে বিএসসি

ব্যয় হবে প্রায় ৮শ কোটি টাকা, ধারণ ক্ষমতা ৫৫-৬৬ হাজার টন

হাসান আকবর | রবিবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সাড়ে ৭শ থেকে ৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। ৫৫ থেকে ৬৬ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুই বাল্ক কেরিয়ার নিজস্ব বহরে যুক্ত করার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার পর বোর্ড উপরোক্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। বিএসসি ইতোমধ্যে জাহাজ দুটি কেনার ব্যাপারে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়ে বলেছে, নিজস্ব সক্ষমতায় জাহাজ দুটি কেনা হবে।

সূত্রে জানা যায়, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে একসময় ৪৪টি জাহাজ ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতিতে বিএসসির বহরে জাহাজ কমতে থাকে। একসময় জাহাজ বিক্রি করে সংস্থার কর্মকর্তাকর্মচারীদের বেতনভাতার যোগান দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। ২০১৮ সালে এসে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র দুটিতে।

২০১৯ সালে বিএসসি ছয়টি নতুন জাহাজ কিনে বহরে জাহাজের সংখ্যা ৮টিতে উন্নীত করে। এর মধ্যে ২০২২ সালে ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বিএসসি এই জাহাজের বীমার টাকাসহ ক্ষতিপূরণ আদায় করলেও বহরে জাহাজের সংখ্যা নেমে আসে ৭টিতে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা ডলফিন জেটিতে জ্বালানি তেল খালাসকালে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাইটার জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি। ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হন। এর পাঁচদিনের মাথায় বিএসসির অপর জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভে একই স্টাইলে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিএসসি ইতোমধ্যে ৩৭ বছরের পুরনো এবং আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া জাহাজ দুটি বহর থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা পাঁচটিতে নেমে আসে। এগুলো বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। বিএসসি একটি অয়েল ট্যাংকার ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের জ্বালানি তেল লাইটারিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে নানামুখী চেষ্টা চলছে। তবে দুটি খোলা পণ্যবাহী জাহাজ কেনার ব্যাপারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসসি। বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ দুটি ক্রয় করবে।

বিএসসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বে তিন ধরনের জাহাজ কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে কোনো শিপ বিল্ডিং ইয়ার্ডকে নতুন জাহাজ নির্মাণের অর্ডার দেওয়া। দ্বিতীয় হচ্ছে কোনো ইয়ার্ডে নির্মাণাধীন জাহাজ পছন্দ করে ক্রয় করা। তৃতীয় হচ্ছে পুরনো জাহাজ পছন্দ করে ক্রয় করা। বিএসসি উপরোক্ত তিন ধরনের জাহাজ থেকে পছন্দের জাহাজ কেনার ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে। পুরনো জাহাজ কেনা হলেও তা যেন কোনোভাবেই পাঁচ বছরের বেশি পুরনো না হয় সেই নির্দেশনা বোর্ড থেকে দেওয়া হয়েছে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক আজাদীকে বলেন, গত বোর্ড সভায় আমরা দুটি জাহাজ কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই দুটি জাহাজ নিজস্ব সক্ষমতায় ক্রয় করব। এটি একটি বিশাল ব্যাপার যে, বিএসসি নিজস্ব সক্ষমতায় জাহাজ কিনতে পারছে। তিনি বলেন, আমরা ৫৫ থেকে ৬৬ টন ধারণক্ষমতার দুটি বাল্ক কেরিয়ার কিনব। এতে সাড়ে সাতশ থেকে আটশ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এখন কী ধরনের জাহাজ কোত্থেকে কিনব তার খোঁজখবর করা হচ্ছে। বিএসসি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাই ২৮ রাউন্ড গুলি ছোড়েন তৌহিদ
পরবর্তী নিবন্ধএক বছরের মধ্যে নির্বাচন চায় ৬১ শতাংশ মানুষ