চট্টগ্রাম ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর ৫ বছরের শিশু আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পিবিআই। মুক্তিপণের জন্য অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় আয়াতকে। পরে ওই শিশুকে ছয় টুকরো করে কাট্টলী সাগরপাড়ে ফেলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে শিশুটির পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে আয়াতকে অপহরণ করে। অপহরণের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা এবং মরদেহটি ৬ টুকরো করে। হত্যার পর মরদেহ বাজারের ব্যাগে নিয়ে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এলে সে সূত্র ধরে ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে পিবিআই। সে ফুটেজের সূত্রে ওই শিশুর মরদেহে সন্ধানে একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আবির ও তার বন্ধু হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
ঘটনার দিনের কথা বর্ণনা দিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, অভিযুক্ত আবিরের বাবা-মা আট মাস আগে আলাদা হয়ে যায়। এ সময় বাবা এখানে থাকলেও মা পকেট গেট এলাকায় বাসায় নেয়। ঘটনার দিন আয়াত আরবি পড়তে যাওয়ার আগে অপহরণের উদ্দেশ্যে আবির তাকে একবার কোলে নেয়। কিন্তু লোকসমাগম থাকায় সেদিন ব্যর্থ হয়। এর কিছুক্ষণ পরে কৌশলে আয়াতকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়।
এ সময় তার মুখ চেপে ধরলে ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যায় আয়াত। এ সময় আবির বাজারের ব্যাগে করে মরদেহ তার মায়ের নতুন বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে সানসেটের ওপর রাখে। এরপর বাজার থেকে এন্টিকাটার এনে আয়াতের মরদেহ ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
মূলত মুক্তিপণের আশায় অপহরণের পর আয়াতকে হত্যা করা হয় জানিয়ে নাইমা সুলতানা বলেন, ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইমপেট্রোল ও সিআইডি দেখে এ হত্যার পরিকল্পনা করেছে আবির। এমন কী এভিডেন্স নষ্ট করার কৌশলও সে এসব সিরিয়াল থেকে আয়ত্ত করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে অভিযুক্ত।
১০ দিন আগে নিখোঁজ আয়াত আর জীবিত নেই নিশ্চিত হওয়ার পর তার খণ্ডিত মরদেহের সন্ধানে অভিযুক্ত আবিরকে নিয়ে কখনও চরে কখনও সাগরের হাঁটু পানিতে কিংবা ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় চট্টগ্রামের পিবিআই টিম। প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এ অভিযানে ইপিজেড এলাকায় আয়াতকে টুকরো করার এন্টিকাটার উদ্ধার করে পিবিআই। এছাড়া মরদেহের টুকরোগুলো যে বেড়িবাঁধ ও সমুদ্রের পাড়ে ফেলেছে সেখানেও অনুসন্ধান করে পিবিআই।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা আজহারুল ইসলাম।