নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাত দৃশ্যমান

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাত দৃশ্যমান, অস্তিত্ব নেই হকারদের! গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দৃশ্য এটি। অথচ বুধবার রাত পর্যন্ত এখানকার সব কটি সড়কের ফুটপাত দেখে মনে হতো যেন মার্কেট। এসব ফুটপাত দখল করে মার্কেটের দোকানের মতো পসরা সাজিয়ে বসেছিল হকাররা। পথচারীদের বাধ্য হয়েই হাঁটাচলা করতে হতো ব্যস্ত সড়ক দিয়ে। এতে প্রায়ই ঘটতো দুর্ঘটনা। গতকাল উচ্ছেদ অভিযানের পর তাই নিউমার্কেট ও এর আশেপাশের দেড় কিলোমিটার দেখে মনে হচ্ছিল ঈদের ছুটি। আশেপাশের এলাকার মানুষ ফুটপাত ধরে হাঁটছিল বন্ধুদের নিয়ে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট কিংবা রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহারি সব মার্কেটে ক্রেতাবিক্রেতাদের ভীড় লেগেই থাকে নিত্যদিন। এমন ভীড়ের মাঝখানে দেখা যায়, ফুটপাতে নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে হকার। নিম্নমানের পণ্যের পসরা সাজিয়ে নিম্নআয়ের ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের জনপ্রিয়তাও পায় ফুটপাতের হকার। ফলে মানসম্পন্ন পণ্যের সঙ্গে নিম্নমানের পণ্যের এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলে বনেদি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের। হকাররা প্রথমদিকে ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজাতো। পরে রীতিমতো ফুটপাতকেই মার্কেট বানিয়ে ফেলে। আর পুরো ফুটপাতই চলে যায় হকারদের পেটে।

গতকাল সন্ধ্যায় নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিউমার্কেট মোড়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের সামনের সড়ক, নুপুর সিনেমা হল, মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সামনে, জলসা মার্কেট, আমতল, স্টেশন রোড, জুবিলী রোড, শাহ আমানত মার্কেট এবং জিপিও মোড় ছাড়িয়ে হকার উধাও। তবে কিছু কিছু জায়গায় হকার সংগঠনের নেতারা জটলা পাকিয়েছেন।

কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হকার্স লীগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার সমিতি ও চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতি। এই তিন সংগঠন মিলে অন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে। সেটির নাম চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশন। পুরো নগরীতে এই হকার সমিতির বিস্তৃতি থাকলেও নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ফুটপাতে বসানো হয়েছে প্রায় তিন হাজারের বেশি হকার। তাদের কাছ থেকে সমিতির ব্যানারে দৃশ্যমান দৈনিক ১০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হতো। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তোলা হতো ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বিপুল পরিমাণ এই চাঁদার ভাগ যায় সমিতির নিয়োগ দেওয়া কিছু লোকজনের পকেটে। বাকি টাকা বিদ্যুৎ বিল, পুলিশ, রাজনৈতিক দলের নেতাক্যাডার এবং সমিতির নেতাদের পকেটে। প্রতিদিন লাখো টাকার বাণিজ্য চলে তলে তলে। আবার সেই টাকার ভাগ জ্যামিতিক হারে বাড়ে রমজান মাসের আগে। প্রতিবছর রমজান মাসকে কেন্দ্র করে হকারদের ভাসমান দোকানগুলোর কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার কিংবা তার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হয়। এসব ফুটপাতের দোকানের কারণে যানজট সৃষ্টি, পথিকদের চলাচলে সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা হলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন।

২০১৫ সালে নগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল নগরীর বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে পারেননি। এর আগে ওয়ানইলেভেন সরকার আমলেও ওই এলাকার হকারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।

নিউমার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা দীর্ঘদিনের পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাড়াবাড়ি রকমের সমস্যা হচ্ছিল ফুটপাত পুরোটা দখল করার কারণে। সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো। মার্কেটের প্রবেশমুখগুলো হকারদের দখলে যাওয়ায় ক্রেতারা আগের মতো মার্কেটমুখো হচ্ছিল না। বেশির ভাগ অবস্থাসম্পন্ন রুচিশীল ক্রেতা হকারদের শোরচিৎকারে কানে আঙুল দিয়ে মার্কেট পর্যন্ত আসতে পছন্দ করতো না। তারা অন্য মার্কেটের দিকে ঝুঁকছিল। অথচ, চট্টগ্রামের অভিজাত অনেক মার্কেটের চেয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মার্কেটে তুলনামূলক কম দামে মানসম্পন্ন পণ্য পান ক্রেতারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে ১৫১ কি.মি. ফুটপাতের বেশিরভাগ হকারের দখলে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে এমপি হতে চান তৃতীয় লিঙ্গের ফাল্গুনী