না ফেরার দেশে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন

আজাদী অনলাইন | রবিবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ৯:১৬ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই।
৮৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ রবিবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার বনানীতে নিজের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রাবেয়া খাতুন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের মা। বিডিনিউজ
অর্ধ শতাধিক উপন্যাসের রচয়িতা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করতেন, সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমির পর্ষদ সদস্য ছিলেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৯৩ সালে একুশে পদক এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাবেয়া খাতুনের মরদেহ রাখা হবে। দুপুর ২টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
রাবেয়া খাতুনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে; তার পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। শৈশবে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই চলচ্চিত্র পরিচালক এ টি এম ফজলুল হকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তানের মধ্যে ফরিদুর রেজা সাগর ছাড়াও রয়েছেন কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।
রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় স্কুলের গণ্ডির পর কলেজে যেতে পারেননি রাবেয়া খাতুন; কিন্তু লেখালেখিতে তা পুষিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ছোট গল্প দিয়ে সাহিত্যে রাবেয়া খাতুনের বিচরণ ‍শুরু হয়। তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘নিরাশ্রয়া’।
জাহানারা ইমামের পাক্ষিক পত্রিকা ‘খাওয়াতীন’ এ কাজ করার সময় সম্পাদক ও চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সঙ্গে তার পরিচয়, পরে পরিণয়। তখন স্বামীর সঙ্গে সিনে ম্যাগাজিনে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সিনেমা দেখার সঙ্গে সঙ্গে লেখালেখিও চলতে থাকে।
ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা।
২০০৮ সালে চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক পান রাবেয়া খাতুন। অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর কাছ থেকে পদক নেন তিনি। আজ দুজনই প্রয়াত। (ফাইল ছবি)২০০৮ সালে চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক পান রাবেয়া খাতুন। অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর কাছ থেকে পদক নেন তিনি। আজ দুজনই প্রয়াত। (ফাইল ছবি)
রাবেয়া খাতুনের উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- মধুমতী, সাহেব বাজার, অনন্ত অন্বেষা, রাজারবাগ শালিমারবাগ, মন এক শ্বেত কপোতী, ফেরারী সূর্য, অনেকজনের একজন, দিবস রজনী, সেই এক বসন্তে, মোহর আলী, নীল নিশীথ, বায়ান্ন গলির একগলি, পাখি সব করে রব, সে এবং যাবতীয়, হানিফের ঘোড়া, চাঁদের ফোটা, বাগানের নাম মালনিছড়া, সৌন্দর্যসংবাদ, মেঘের পর মেঘ, যা কিছু অপ্রত্যাশিত, দূরে বৃষ্টি, শুধু তোমার জন্য, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, আকাশে এখনো অনেক রাত, মহা প্রলয়ের পর, শহরের শেষ বাড়ি, নষ্ট জ্যোস্নার আলো।
ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন দুঃসাহসিক অভিযান, সুমন ও মিঠুন গল্প, তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা, একাত্তরের নিশান, দূর পাহাড়ের রহস্য, লাল সবুজ পাথরের মানুষ, সোনাহলুদ পিরামিডের খোঁজে, চলো বেড়িয়ে আসি, রক্তমুখী শিলা পাহাড়, সুখী রাজার গল্প, হিলারী যখন ঢাকায় আমরা তখন কাঠমুন্ডুতে, রোবটের চোখ নীল৷
রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের অন্যতম লেখক। কর্মজীবনে অনেক মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি। উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যাদের দ্বারা স্মৃতিমূলক রচনার মধ্য দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্বকে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন।
রাবেয়া খাতুনের লেখা কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’, ‘ধ্রুবতারা’। এছাড়া অসংখ্য নাটকও নির্মিত হয়েছে তার লেখা ধরে।
রাবেয়া খাতুন জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির পর্ষদ সদস্যের দায়িত্বও পালন করেন।
বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, জসিমউদ্দিন পুরস্কার, শেরে বাংলা স্বর্ণপদক, চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পুরস্কার, ঋষিজ সাহিত্য পদকসহ আরও বহু পুরস্কারে ভূষিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাকচাপায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু, আহত ২
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানে মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা