সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ নাফিসা হোসেন এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরীক্ষার ফল পেয়ে যখন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা তখন কেবলই চোখের জল ফেলছে তার পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পরিবার জানতে পারে নাফিসা হোসেন মারওয়া জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। খবর বাংলানিউজের।
১৭ বছরের নাফিসা চলতি বছর গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সাভারের নামাবাজার এলাকায় মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় একজন চা দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে বাবা আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নাফিসার মা কুলসুম বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক বছর আগে। গত ৩ আগস্ট নাফিসা পরিবার সবাইকে না জানিয়ে সাভারে তার মামার বাসায় এসে সহপাঠীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠে। এ সময়ও পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লোকজন আন্দোলনে গুলি চালায়। নাফিসা এ সময় শহীদ হন।
নাফিসার বাবা আবুল হোসেন বলেন, মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তাকে কখনো রান্না করতে দিতাম না। নিজে ছোট্ট চায়ের দোকানে যা আয় হতো পুরোটাই মেয়েদের পড়াশুনা আর দেখভালে খরচ করেছি। ১৮ জুলাই আমাকে না বলেই নাফিসা উত্তরায় ছাত্র আন্দোলনের যোগ দেয়। পরে প্রতিবেশীদের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাঁধা দিই। কিন্তু মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আগস্টের ৩ তারিখ সাভারে তার মামার বাসায় বেড়াতে যায়। নাফিসার স্কুল সাভারে হওয়ায় সেখান তার অনেক বন্ধু–বান্ধবী ছিল। তাদের সাথেই আমার মেয়ে সাভারে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিতে শহীদ হয়েছে। কিন্তু একটাই কষ্ট যেই স্বাধীনতার জন্য আমার মেয়েটা প্রাণ দিল সেই স্বাধীন দেশেই আমার মেয়ে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেতে পারেনি।
গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন নাফিসা। তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। আবুল হোসেন মেয়ের মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার কবরস্থানে দাফন করেন।