গত ৪ ফেব্রুয়ারি ‘শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করা জরুরি’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছিলো দৈনিক আজাদীতে। এতে আমরা বলেছিলাম, নিজস্ব স্থাপনা, বাড়ি, আঙিনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির আধার বিনষ্ট না করা এলাকাবাসীর নাগরিক দায়িত্ব। বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত নাগরিক বলতে কোনো দেশের, নগরের বা শহরের অধিবাসীকে বোঝানো হয়। এর অর্থ ব্যাপক। অর্থাৎ কোন রাষ্ট্রে বা দেশে বর্তমানে বসবাসরত সকল অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। সাধারণভাবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক বলতে একজন ভালো নাগরিককে বোঝায়। প্রথমত মানুষটাকে সব অর্থে ভালো, সৎ ও দায়িত্ববান; নিজের এবং সপরিবারে, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে হওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ভালো বা সুনাগরিক তাকেই বলা যায়– যার অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান এবং সুদৃষ্টিবোধ আছে বা থাকে। একজন ভালো নাগরিকের সূচনা বা চর্চা পরিবার ও স্কুল থেকেই শুরু যেমন ক্লাস রুমে নিজের পড়াটা তৈরি করা, শিক্ষক এবং বড়কে শ্রদ্ধা করার বিষয়গুলো যে কেউ তার স্কুল জীবনের শুরুতে চর্চা করার ও বোঝার সুযোগ পায়। দায়িত্বও পায়। অনেকের মতেই একজন মানুষ তার স্কুল জীবনের শুরুতে কেমন আচরণ করে এবং কি শেখে, সেটা নির্ধারণ করে দেয় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তার নাগরিক ভূমিকা কি অথবা কেমন হতে পারে। এ মতের পক্ষে মত বা দ্বিমত যুক্তি, তর্কও আছে। দায়িত্বশীল নাগরিক হঠাৎ করে হওয়া সম্ভব না, এটাও ঠিক। পরিবেশ–পারিপার্শ্বিকতার নানা বিষয়ও একজন দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখে।
এদিকে, ৫ মে ‘খাল–নালায় গৃহস্থালী বর্জ্য নাগরিক দায় কতটুকু’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, ‘নগরের কোনো খাল–নালা আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকলে নগরবাসী দোষারোপ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক)। তাদের দাবি, এসব পরিষ্কারের দায়িত্ব চসিকের। অথচ চসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীরা পরিষ্কারের সময় খালে বিভিন্ন গৃহস্থালী পণ্য দেখতে পায়। এর মধ্যে থাকে লেপ–তোষক, বাথরুমের ভাঙা কমোড থেকে শুরু করে ভাঙা চেয়ার–টেবিলও। অর্থাৎ খাল–নালাকে ‘ডাস্টবিন’ বানিয়ে সেখানে সবকিছু ফেলে কোনো কোনো নাগরিক। তাই চসিকের দায়িত্বশীলরা নাগরিক অসচেতনতাকে দায়ী করেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, সব দোষ কি কেবল চসিকের? এক্ষেত্রে নাগরিকের কোনো দায় নেই?
এ অবস্থায় খাল–নালায় যারা ময়লা–আবর্জনা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে চসিক। এর অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে সংস্থাটির একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যার নেতৃত্বে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে খাল–নালায় যারা ময়লা–আবর্জনা ফেলবে তাদের শাস্তির আওতায় আনবেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ যদি খাল–নালায় ময়লা ফেলা কোনো ব্যক্তির তথ্য–প্রমাণ দেয় সেক্ষেত্রেও অভিযান চালিয়ে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ‘এমন কোনো জিনিস নেই নালা–নর্দমায় ফেলা হচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, মানুষের দুর্ভোগ হয়। তাই জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করি।
তিনি বলেন, বাসা–বাড়ি থেকে তো পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এরপরও যেখানে–সেখানে কেন ময়লা ফেলবে? অনেকে আছে যারা বাসার পাশ দিয়ে যাওয়া খাল–নালায় ঘরের যাবতীয় পণ্য ফেলে দেয়। এটা তো উচিত না। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যেভাবে কড়া অবস্থানে আছি একইভাবে খাল–নালায় যারা ময়লা–আবর্জনা ফেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান থাকবে আমার। খালে ময়লা না ফেলতে মানুষকে অনেক সচেতন করেছি। এখন আইনের প্রয়োগ করা হবে। আমরা পরিষ্কার করতে থাকব, আর মানুষ ফেলতে থাকবে সেটা হবে না। খালে ময়লা ফেলার সময় কেউ যদি ভিডিও করে আমাদের দেয় সাথে সাথে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাব।’
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের দেশে বর্তমান অগনিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এ সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, কিছু কিছু দায়িত্ব নাগরিকের উপর বর্তায়। তাই সকল নাগরিককে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হলে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়ে নিজের পরিবারে, নিজের সমাজে, নিজ অঞ্চলে এবং সমগ্র দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। আমরা যদি ভালো হই, যদি সৎ হই, দেশপ্রেমিক হই, নিঃসন্দেহে পৃথিবীর মানচিত্রে এ দেশের নাগরিদের কল্যাণে এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে সন্দেহ নেই। যদি দেশের সকল নাগরিক নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে আপামর জনসাধারণের কথা ভেবে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে শুধু দেশের জন্য এবং দশের জন্য কাজ করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই দেশে শান্তি আর সুখ ও কল্যাণ ফিরে আসবে। এজন্য সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে, তা পালন করতে হবে।