চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরীর উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। গত রোববার সিটি মেয়র ডা. শাহাদত হোসেনের সাথে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নূরুল করিম।
সভায় সিডিএ‘র ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্লান প্রকল্পের’ ওপর আলোকপাত করেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু ঈসা আনছারী। তিনি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পুকুর খাল পাহাড় সহ পরিবেশগত দিকগুলোর সংরক্ষণে সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাজের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নগরীর উন্নয়নে সিটি করপোরেশন ও সিডিএর যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার বারবার করা হলেও তা বাস্তবারন হয়নি আগে কখনো। এবার নগরবাসী প্রত্যাশা করে দুটি সংস্থা এখন থেকে যৌথভাবে কাজ করে যাবে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বাগান–উদ্যান, পার্ক, সবুজ গাছপালা ও ফাঁকা খোলা জায়গা ইতাদি নাগরিকদের জন্য এক মৌলিক প্রয়েজনীয় চাহিদা। নগরবাসীর জন্য এটি এক মৌলিক অধিকারও বটে। নগর জীবনের কোলাহলময় ব্যতিব্যস্ত জীবনধারায় এইসব পার্ক বা উদ্যান ছোটো বড় সকলের জন্য শান্তিময় প্রাকৃতিক অবসর বিনোদন স্থল। এসব পার্ক বা উদ্যান নগরবাসীদের নন্দনতাত্ত্বিক স্বস্তি জোগায়, তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে, আয়ু বৃদ্ধি করে, ভ্রমণ বিলাসী বক্তিদেরকে আকৃষ্ট করে, তাদের অনন্দ দান করে এবং তাদের নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রেখে দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। বড় ধরনের সংকট এড়িয়ে, কংক্রিটসম পরিবেশের মাঝে এ পার্কগুলো শ্যামল মরু–উদ্যানের মতো স্বস্তি জোগায়। এবিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ভাবতে হবে।
আরেকটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমরা আহ্্বান জানাবো। বিষয়টি হলো জনস্বাস্থ্য। অনেকের মতে, নগরীর বর্তমান পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ঢাকার মতো না হলেও চট্টগ্রাম নগরী দেশের যেকোনো শহরের চেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে যে কোনো অসচেতনতা, সময়মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা ইত্যাদির কারণে ছোঁয়াছে এবং সংক্রামক রোগ অতি দ্রুত মড়ক আকারে বিস্তার লাভ করে। তাই নগরীর জনস্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠানকে সবসময় প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে হবে। বলা অনাবশ্যক যে, নগরীর জনস্বাস্থ্য রক্ষা সিটি করপোরেশনের জন্য একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থাকে দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারার মধ্যেই সিটি কপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মসূচির মূল সার্থকতা। জনগণের চাহিদা নিয়েই একাজে এগোতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। মতবিনিময় সভায় খাল–বিল– পুকুরসহ পরিবেশ সংক্রান্ত দিকগুলোর সংরক্ষণের কথা আলোচনা হয়েছে। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, নগরায়ণের চাপে জলাভূমি হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন–২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর–জলাশয়, নদী–খাল ভরাট করা বে–আইনি কিন্তু আইন অমান্য করে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নতুন নতুন আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে খাল–বিল–পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। যারা ভরাট করছে, তারা পরিবেশের কথা চিন্তা করে না। এমনকি অপরিকল্পিত নগরায়ণও পুকুর ও খাল–বিলের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে। তাই দখলদারিত্বের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। নাগরিকদের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করে তুলতে হবে।