নষ্ট হয়ে গেল একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটিও

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ ।। কম দামের সেবা বন্ধ হওয়ায় খরচ বাড়ল দুই থেকে তিনগুণ

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে অনেকদিন ধরে হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপনের কাজ করছিলেন চিকিৎসকরা। আশঙ্কা ছিল যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মেশিনটি। অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো। চিকিৎসকরা বলছেন, মেশিন ঠিক না হওয়া পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং স্থাপনের মতো সেবা পাবেন না রোগীরা। চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে রোগীদের সর্বাসাকূল্যে ব্যয় হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সেই একই সেবা নিতে এখন রোগীদের ব্যয় করতে হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া হার্টে একটি রিং স্থাপনের ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতালে ব্যয় হতো ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এখন বেসরকারিভাবে এই সেবা নিতে খরচ হবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

জানা গেছে, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুরব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত ২০২১ সালের শেষের দিকে হৃদরোগ বিভাগের একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একটি মেশিন দিয়েই এতদিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছিল।

হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশনের (এনজিওগ্রাম) মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালিতে রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার করা হয়।

হৃদরোগ বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের দুটি এনজিওগ্রাম মেশিনের একটি নষ্ট হয়ে যায় প্রায় আড়াই বছর আগে। বাধ্য হয়ে বাকি মেশিনটি দিয়ে কাজ চালাতে হতো। কিন্তু কাজের চাপ বাড়ার কারণে ওই মেশিনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কারণ ওই একমাত্র মেশিনে দৈনিক গড়ে ১৫২০টা এনজিওগ্রাম এবং ৫৬টি রিং স্থাপনের কাজ হতো। এর বাইরে পার্মানেন্ট পেস মেকার (পিপিএম) স্থাপন ও পেরিপাইরাল এনজিওগ্রামের কাজও চলে। অতিরিক্ত চাপের কারণে মাঝে মাঝে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতো মেশিনে। মেশিনটির কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, তারা মেশিনটির সর্বশেষ কারিগরি অবস্থা নির্ণয় করতে জাপানে পাঠাবে। তারপর সিদ্ধান্ত দেবে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে হৃদরোগীর হার যেহেতু বাড়ছে, তাই সক্ষমতা আরো বাড়ানো উচিত। আমাদের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাকি মেশিনটি দিয়েও কাজ করতে পারছি না। বিষয়টি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, হৃদরোগ বিভাগের নষ্ট হয়ে যাওয়া এনজিওগ্রাম মেশিনের ওয়ারেন্টির সময় এখনো বাকি আছে। কোম্পানির লোকজন এসেছে, তারা এখনো সমস্যাটা বের করতে পারেনি। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় চিংড়ি ঘেরে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব, গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ মন্ত্রী, ১৩ প্রতিমন্ত্রীর জায়গা হলো না নতুন সরকারে