সিআরবি সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনিতে নলকূপ বসানোকে কেন্দ্র করে ঘটনাস্থলে গতকাল ভিড় করেছিল উৎসুক জনতা। লকডাউনে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন রাজপথে থেমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনে এ নলকূপ বসাচ্ছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। এলাকাবাসী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতদিন পানির অভাবে কষ্ট পেয়েছেন তারা। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ তখন নলকূপ বসায়নি। এখন হঠাৎ করে রাতের আঁধারে নলকূপ কে আনল, কোত্থেকে আসল তা আমাদের অজানা। তারা বলেন, পনের দিন আগে বিশ গজ দূরে আরেকটি নলকূপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে গ্যাস উঠতে থাকায় এখানে বসানো হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না, এমন একটা আন্দোলন চলাকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে এমন কোনো সিন্ডিকেট আছে যারা নলকূপ বসানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতেই হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই হাসপাতাল নির্মাণে মাটি পরীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে রেলওয়ে। হাসপাতাল এলাকার পানির স্তর পরিমাপের জন্য ইতোমধ্যে নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতাল নির্মাণের গ্রাউন্ড ওয়ার্কও শুরু করেছে রেলওয়ে। এলাকাবাসী জানান, সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকায় ৭০ ফুট গভীরের একটি নলকূপ বসিয়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়।
এই নলকূপ স্থাপন দেখে সেখানে ছুটে যান আন্দোলনকারীদের অনেকে। তাদের মধ্যে বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসীন কাজী বলেন, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে রেলওয়ে হাসপাতাল নির্মাণ করছে। নলকূপ বসানোর মাধ্যমে তা পরিস্কার হলো। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থল থেকেই ওয়াসার এমডির সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের বিষয়টি ওয়াসার পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে পরিবেশের প্রয়োজনে। আর রেলওয়ে কলোনিতে গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য ওয়াসার পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি, তারাও চায়নি। তার অর্থ হচ্ছে, এখানে রাতের আঁধারে যা করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেব।
আন্দোলনকারীদের অনেকে গতকাল এলাকাবাসীর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, লকডাউনে যখন সবকিছু বন্ধ, তখন আন্দোলনের মুখে অসাধু সিন্ডিকেটটি নলকূপ স্থাপনের দুঃসাহস দেখানোর পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশবান্ধব বলে আমরা সকলেই জানি। দেশবাসী শুধু নয়, বিশ্ববাসীও তা-ই জানে। এ অবস্থায় প্রকৃতি বিনষ্ট করে এখানে হাসপাতাল নির্মাণের অপচেষ্টার মধ্য দিয়ে তাকেও একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেটটি। এটা চট্টগ্রামবাসী কখনোই মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামের ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রামের ১০১ জন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ। গতকাল দেশের ১২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিতে চলেছেন চট্টগ্রামের ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
সিআরবি রক্ষার এ আন্দোলন চট্টগ্রাম তথা দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। সুদূর নিউ ইয়র্কে প্রবাসীরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। সকলের একটাই কথা, সিআরবি আমাদের শৈশবের স্মৃতিধন্য স্থান। শুধু গাছ নয়, আমরা সিআরবির পুরো জায়গাটাই রক্ষা করতে চাই।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য সিআরবি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন এখানে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৪ ধারায় বলা আছে, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রক্ষা করতে হবে। তা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এখানে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠেছে। সিআরবি ভবন ব্রিটিশ স্থাপত্যের শেষ কয়েকটির একটি। রেলের যে হাসপাতাল সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করে ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে। কোনো বাণিজ্যিক হাসপাতাল নয়। পিপিপি মানে জনগণের টাকা, জনগণের টাকায় ধনীদের হাসপাতাল চাই না।