নভেম্বরে ডেঙ্গুর উল্টো চিত্র, ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের

চলতি মাসে চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৭৫৪ জন, মৃত্যু ১৪ জনের লক্ষ্য রাখতে হবে রক্তচাপ যাতে না কমে : চিকিৎসক

জাহেদুল কবির | বুধবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার নিম্নমুখী থাকত। আক্রান্তের হার নিম্নমুখী মানে মৃত্যুহারও কম। তবে চলতি বছরের নভেম্বরে ডেঙ্গুর উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নভেম্বরের অর্ধেক সময় পেরোতেই মৃত্যু সংখ্যা পুরো বছরের যেকোনো মাসকে ছাড়িয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নভেম্বর মাসে যেসব রোগী আক্রান্ত হচ্ছে, এসব রোগীর দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এটার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে ডেন২ ভ্যারিয়েন্টের সাবভ্যারিয়েন্ট কসমোলিটনই এর জন্য বেশি দায়ী। নভেম্বরের এই সময়ে বৃষ্টি না থাকার পরেও ডেঙ্গুর এমন উল্টো চিত্র, তা বিশেষজ্ঞদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।

এদিকে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে নগরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৯১ জন এবং উপজেলায় ১ হাজার ২৯৮ জন। এছাড়া মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। এর মধ্যে ২০ জন নারী। চলতি নভেম্বরের গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।

গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ১০ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৮ জন, চট্টগ্রাম সিএমএইচ হাসপাতালে ২ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৯৮২ জন পুরুষ, ১ হাজার ২৮ জন নারী এবং ৬৭৯ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া মোট মৃত্যুর হিসেবে নারী ২০ জন, পুরুষ ১৫ জন এবং ৪ জন শিশু রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ডেন২ ভ্যারিয়েন্টের। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আবার ডেন২ ভ্যারিয়েন্টের সাবভ্যারিয়েন্ট কসমোলিটনে আক্রান্ত। কসমোলিটন সাবভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রক্তচাপ কমে গিয়ে শকে চলে যাচ্ছে। এসব রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্তচাপ যাতে না কমে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা আশা করি, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার গত বছরের তুলনায় কম রয়েছে। তবে বর্তমানে অনেক রোগী ডেন২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেএমন একটি গবেষণা সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক করেছিলেন। এই ভ্যারিয়েন্টটি ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসেছে বলা হয়েছে। তবে আমরা যেটি দেখছি, মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে দেরি করে হাসপাতালে আসা। এছাড়া যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। ডেঙ্গুর বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে সবসময় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছি। আমরা সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার সমন্বিত উদ্যাগ নেওয়া দরকার। বিশেষ করে মশা যাতে বংশবিস্তার না করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টাতে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র‌্যাশ, প্রস্রাব পায়খানায় বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তবে অনেকে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্লাটিলেট কমলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লাটিলেট কমলে রক্তক্ষরণ হবে এটি ঠিক নয়। এছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে প্লাটিলেট দিতে হবে এটিও গাইডলাইনে নেই। চিকিৎসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। আবার অনেকের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারিবেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে মারা যান ১০৭ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনথিপত্র চেয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনে হাইকোর্টের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধঅতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন : আইন উপদেষ্টা