চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় ১৫০ বেডের বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশীপ বার্ন ইউনিট চট্টগ্রাম’ প্রকল্পের কাজ আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হচ্ছে। এর আগে গত আগস্ট–সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ছাত্র–জনতার জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ফলে প্রকল্পের কাজে কিছুটা স্থবিরতা নেমে আসে। তবে সম্প্রতি চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আগামী নভেম্বরে শেষের দিকে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, গত ১২ জুন বার্ন ইউনিট প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চীন সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ভবনের নকশায় কিছু পরিবর্তন পূর্বক চূড়ান্ত অনুমোদন চুক্তি করা হয়। এর আগে গত ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে চীন দেবে ১৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং সরকার দেবে ১০৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানিতে ট্যাক্স ভ্যাট বাবদ ৭০ কোটি টাকাসহ সংযোগ রাস্তা, সীমানা প্রাচীর, বৈদ্যুতিক সংযোগ, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও কেমিক্যাল রিঅ্যাজেন্ট আনার খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা ভবন, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ল্যাবরেটরি, অপারেশন থিয়েটার, ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি পুরুষ এইচডিইউ বেড, ১০টি মহিলা এইচডিইউ বেড ও ৫টি শিশু এইচডিইউ রয়েছে। এছাড়া ১১৫ বেডের ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য বেড রাখা হয়েছে ৪৫টি।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বার্ন ইউনিট প্রকল্পের কাজ আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন চীনা লোক এসে পৌঁছেছেন। আশা করছি, কাজ যথাসময়ে শুরু হবে।
উল্লেখ্য, সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল গত ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও বার্ন ইউনিটের নির্মাণ কার্যক্রম স্থান নির্বাচন জটিলতায় আটকে ছিল। পরবর্তীতে গত ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির জন্য চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় স্থান নির্বাচন করে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায় চীন সরকার। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। গত ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।