১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্মারক ‘বাংলাদেশ সেন্টার’। এটা যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বাংলাদেশের জন্য অনন্য অবদানের প্রমানস্বরূপ ব্রিটেনের সেন্ট্রাল লন্ডনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দ্য রয়্যাল লন্ডন বারা অব কেনজিংটন অ্যান্ড চেলসি এলাকার নটিংহিল গেইট টিউব স্টেশনের কাছেই ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেন্সে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ সেন্টার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে লন্ডনের ঐতিহাসিক ‘বাংলাদেশ সেন্টার’। এই সেন্টারেই ভারতের পর বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম কোনো দূতাবাস চালু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। তখন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরাই স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বৈশ্বিক সমন্বয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ সেন্টার’।
১৯ ডিসেম্বর (রোববার) বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে পুনঃউদ্বোধন করা হয় ঐতিহাসিক এ বাংলাদেশ সেন্টারের। সেন্টারের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদ আহমেদ চৌধুরী মুনা ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন দৃষ্টিনন্দন চকচকে চারতলা এ ভবনটির। বাংলাদেশ সেন্টারের সদস্য ও বাংলাদেশি কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মুখোরিত ছিলো এ জমজমাট আয়োজন।
বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও পুনঃউদ্বোধনের মূল আয়োজন। অনুষ্ঠানে সেন্টারের প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনার সাথে যুক্ত সকলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। সকলে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধা ও দেশে-বিদেশে অবদান রাখা সকলের প্রতি। শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও সেন্টারের প্রয়াত সকল পর্যায়ের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী এস এম মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর দুটি ভিন্ন প্রমাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠা, ঐতিহ্য ও কার্যক্রমের পাশাপাশি সংস্কারকাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়। প্রমাণচিত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেন্টারে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশিদের জন্য নানা সেবা চালু ছিলো। যেমন, বাংলা শিক্ষা ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চা, অনুবাদ সেবা, অভিবাসন, বেনিফিট, পুলিশ ও আইনী বিষয়ে সহায়তা। আবার বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা নামমাত্র খরচ দিয়ে আপতকালীন এই সেন্টারে অবস্থানের সুযোগ পেতেন।
সেন্টারটি জেকফ্রুট লন্ডন লিমিটেড কোম্পানি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। চুক্তি অনুযয়ী সংস্কারের পুরো খরচ বহন করবে ওই কোম্পানি। বিনিময়ে তারা ১৪ বছরের সেন্টারের ওপরের তিনটি ফ্লোর লিজ হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে সেন্টারকে নির্ধারিত হারে মাসিক ভাড়াও প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার আহবাব হোসেন, স্থানীয় কাউন্সিলর ডোরি স্কেমেটারলিং, শতবর্ষী ব্যক্তিত্ব দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ওবিই, দ্য রয়্যাল বারা অব উইনসরের কাউন্সিলার সামসুল ইসলাম সেলিম, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের, বাংলাদেশ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা নবাব উদ্দিন ছাড়াও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, সংস্কারের অভাবে সেন্টারটি এক সময় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। যে কারণে স্থানীয় কাউন্সিল এটি নিজেদের দখলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। বিষয়টি এক পর্যায়ে মামলায়ও গড়ায়। কিন্তু সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির ঐকান্তিক চেষ্টায় রক্ষা পেল বাংলাদেশ সেন্টার।