নবজাতক ও শিশু বিভাগের অর্ধ যুগে পদার্পণ

অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হসপিটালস

ডা: ফয়সল আহমেদ | রবিবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আজ অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হসপিটালস্‌ এর নবজাতক ও শিশু বিভাগের ৬ বছর পূর্ণ হলো। আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর এই ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল। অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে আজ এই ডিপার্টমেন্টটি চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের কাছে একটি পরিচিত নাম।

বিশাল হসপিটাল, কিন্তু প্রথম দিকে শহরের এক অপরিচিত নাম দিয়ে শুরু হয়েছিলইম্পেরিয়াল হসপিটালের। আমার দু’জন কলিগ যারা একসময় আমার ছাত্র ছিল তাদের অভিজ্ঞতাএক রকম জনমানবহীন, ম্যানেজমেন্টের কিছু লোকের আনাগোনা চোখে পড়ছে। খা খা করছে প্রতিটা রুম। ফাইলপত্র নিয়ে কিছু মানুষের ছুটাছুটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে মাত্র। আমি আসতেই একজন ছোটোখাটো ছেলে এসে বললো, স্যার আপনি কাকে চান-‘বললাম আমি শিশু বিভাগের ডক্টর, কাজে যোগ দিতে এসেছি’। ছেলেটি একটু হেসে বললোস্যার রোগী কোথায়, এখনো তো হসপিটাল চালু হয় নাই।’ শুরুটা ছিল এমনি।

আমি একমাসের মধ্যে সৌদি থেকে এসে সরাসরি কাজে যোগ দিই। ১ মাস পরে কাজে যোগ দিলেও সুদূর সৌদি আরব থেকে তাদের সাথে সার্বক্ষণিক ছায়ার মত ছিলাম। প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদেরকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছিলাম। হসপিটালের সে সময়ের চেয়ারম্যান প্রফেসর (ডা🙂 রবিউল হোসেন স্যার আমাদেরকে আশ্বস্ত করলেন মন খারাপ করিও না, একদিন এই হসপিটাল সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও পরিচিত হসপিটাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। স্যার ৩য় তলায় আমাদের এক খোলামাঠের মত যায়গা দেখিয়ে বলেছিলেন এই নাও তোমাদের NICU। জায়গা দেখে কারেন্টের মত শকড খেলাম। হসপিটাল আছে কিন্তু চালু হয় নাই বলে রোগী নাই কিন্তু এই খোলা মাঠকে কিভাবে NICU তে পরিণত করবো? আমার দুজন সহকর্মী তো রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো, বিদেশ থেকে এসে ভুল করলাম না তো…!!!!

অতল সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার মত অবস্থা। যাই হোক দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দাঁড় করিয়েছি আন্তর্জাতিক মানের NICU। আজ চট্টগ্রাম পেরিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র যার সুনাম।

NICU রেডি করার পর শুরু হলো ফাইল রেডি করার কাজ। হসপিটালের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে ব্যবহার করার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সমস্ত ফাইলের কাজ কয়েক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করি। শিশু বিভাগে কাজে যোগ দিল কিছু তরুণ চিকিৎসক। এরপর শুরু করি চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফদের ট্রেনিং। শিশু বিভাগের জন্মের ৮ মাসের মধ্যেই হসপিটাল তার যাত্রা শুরু করলো। সেই যে শুরু আজ অবধি আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সবচেয়ে দুর্বল একটি দিক হলো টিমওয়ার্কের অভাব। আমি কাজের শুরুতেই দেশবিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে তৈরি করলাম একটি টিম। আমরা সবাইকে জানিয়ে খুশি হবো যে, এই দীর্ঘ চলার পথে আজ অবধি নবজাতক ও শিশু বিভাগ ৮০,০০০ এর বেশি ওপিডি, ,০০০ আইপিডি, ,০০০ পিআইসিইউ (PICU), ,০০০ এনআইসিইউ (NICU), ,৫০০ এর বেশি নিউবর্ন কেয়ার; ,০০০ এর কাছাকাছি ক্রিটিকাল বেবি ট্রান্সপোর্ট, ২০০ এর অধিক প্রিম্যাচুউর বেবিকে সারফেকট্যান্ট থেরাপি, ,৫০০০ এর মত ভ্যাকসিনেশন ও ৫ শতাধিকের কাছাকাছি শিশু সার্জারি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের আছে সুগঠিত চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও সেখানে speech therapy, Physiotherapy, Developmental therapy, Occupational therapy, Psychological therapy দেওয়ার সুবিধা বর্তমান আছে। ডিপার্টমেন্টে চালু হয়েছে সার্বক্ষণিক ইনডোর আলট্রাসনোগ্রাফি। আগামী ৬ মাসের মধ্যে আমাদের সাথে যুক্ত হবেন শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

এই সাফল্যের জন্য অভিজ্ঞ টিমওয়ার্ক প্রয়োজন ছিল। আমি তা করতে পেরেছি এবং আমার নেতৃত্বে একটি সফল টিমওয়ার্ক চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সেবা দিয়ে চলেছে। একমাত্র ডিপার্টমেন্ট যেখানে ২৪ ঘন্টাই স্পেশালিস্ট সেবা দেওয়া হয়। আমাদের এই চলার পথে অগণিত মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা জড়িত। একটি সুস্থ শিশু পরিবার ও সমাজের কর্ণধার। আমাদের এই সফলতার জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে শুকরিয়া জানাই। আলহামদুলিল্লাহ। আগামী দিনগুলোতে আমাদের এই টিম আপনার পরিবারের মত সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান

নবজাতক ও শিশু বিভাগ

অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হসপিটালস

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিইউসিবিএ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ফিউচার ফরওয়ার্ড শীর্ষক কর্মশালা
পরবর্তী নিবন্ধউগ্রবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে