নবজাতক ওয়ার্ডে যুক্ত হচ্ছে রেটক্যাম রেটিনাল ক্যামেরা

প্রি-ম্যাচিউরড শিশুর অন্ধত্বের ঝুঁকি নির্ণয় করবে অত্যাধুনিক এ যন্ত্র

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে (স্ক্যানু) যুক্ত হচ্ছে রেটক্যাম রেটিনাল ক্যামেরা। প্রি-ম্যাচিউরড শিশুর অন্ধত্বের ঝুঁকি নির্ণয়ে অত্যাধুনিক এ যন্ত্র কাজ করবে। অত্যাধুনিক এ মেশিনের মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নবজাতক ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, মাস খানেক আগেই মেশিনটি হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে স্থাপনের (ইনস্টলশনের) অপেক্ষায় রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে নবজাতক
(৩২ নং) ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ আজাদীকে বলেন, প্রি-ম্যাচিউরড (স্বাভাবিক সময়ের আগেই জন্ম নেয়া) শিশুদের চোখে রেটিনা জটিলতায় অন্ধত্বের ঝুঁকি বেশি। অন্ধত্বের ঝুঁকি কতটা, সেটি ওই শিশুর জন্মের এক মাস বা সর্বোচ্চ ৩৭ দিনের মধ্যে ডায়াগনোসিস করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে ডায়াগনোসিস করা গেলে এর কার্যকরী চিকিৎসা সম্ভব। নয়তো শিশু অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। শিশুর চোখের রেটিনায় কোনো ধরনের জটিলতা আছে কী না, রেটক্যাম রেটিনাল ক্যামেরার মাধ্যমে সেটি ডায়াগনোসিস করা হবে।
বর্তমানে একটি লেন্সের মাধ্যমে এই ঝুঁকি ডায়াগনোসিস করা হয় জানিয়ে ডা. জগদীশ চন্দ্র বলেন, সেক্ষেত্রেও একজন রেটিনা স্পেশালিস্ট প্রয়োজন হয়। রেটিনা স্পেশালিস্ট ছাড়া তা নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু ডিজিটাল এই মেশিনের বড় সুবিধা হচ্ছে, এর জন্য রেটিনা স্পেশালিস্ট প্রয়োজন পড়বে না। সম্পূর্ণ কম্পিউটার বেইজড। ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সরাই ডায়াগনোসিস করতে পারবেন। এ জন্য ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সর্বোপরি ডিজিটাল এই মেশিন প্রি-ম্যাচিউরড শিশুদের চোখের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদী অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।
চিকিৎসকরা জানান, গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হলে বা এরপর কোনো শিশুর জন্ম হলে সেটি ম্যাচিউরড বা পরিণত হিসেবে ধরা হয়। তবে গর্ভধারণের ৩৪ সপ্তাহে বা এর আগে জন্ম হলে ওই শিশুকে প্রি-ম্যাচিউরড (অপরিণত) বলা হয় থাকে। প্রি-ম্যাচিউরড শিশুর ক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষ করে স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা, জন্মের পরপর শ্বাস নিতে না পারা বা কান্না না করা এবং জীবাণুর সংক্রমণ (ইনফেকশন) এসব জটিলতার মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে চোখের রেটিনার জটিলতাও ধরা পড়ে। যা সময় মতো ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হলে ওই শিশুর অন্ধত্বের ঝুঁকি থেকে যায়।
বর্তমানে নবজাতক ওয়ার্ডে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। সংষ্কারের মাধ্যমে ওয়ার্ডে যুক্ত করা হচ্ছে ৩০ শয্যার ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার। এই সংস্কার কাজের জন্য রেটক্যাম রেটিনাল ক্যামেরা মেশিনটির স্থাপন প্রক্রিয়া থমকে আছে। যদিও এই মেশিনের জন্য আলাদা করে একটি কক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। কক্ষটি প্রস্তুতের কাজ শেষ হলেই যত দ্রুত সম্ভব মেশিনটি স্থাপন ও এর সেবা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর।
প্রসঙ্গত, জন্মের পরপর বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতকের চিকিৎসায় যেন ভরসার অপর নাম চমেক হাসপাতালের এ নবজাতক ওয়ার্ড। যদিও এটি স্ক্যানু (স্পেশাল কেয়ার নিউনেটাল ইউনিট) হিসেবেই পরিচিত।
বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর নবজাতকের চিকিৎসায় এটিই একমাত্র ভরসাস্থল। যার কারণে দুর্গম ও প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত নবজাতককে নিয়ে এখানে ছুটে আসেন মা-বাবারা। এক দিনের বয়স থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুদের ভর্তি করা হয় নবজাতক ওয়ার্ডের (৩২নং) বিশেষ এ ইউনিটে।
নবজাতক ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা মাত্র ৩২টি। তবে স্থানীয়ভাবে বৃদ্ধি করে ২য় দফায় এর শয্যা সংখ্যা ৫৬টি করা হয়। পরে আবারো বাড়িয়ে একশটি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে একশটি শয্যায় এখানে নবজাতক ভর্তি করা হয়। তবে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ নবজাতক ভর্তি থাকে। শয্যা সংকটে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হয় এখানে। পার্বত্য অঞ্চল ও কক্সবাজার নিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ কুমিল্লা অঞ্চলের মা-বাবাদের কাছেও নবজাতকদের চিকিৎসায় এই স্ক্যানু একমাত্র ভরসাস্থল বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা নবজাতকের ৭২ শতাংশই শহরের বাইরের বা দূর অঞ্চলের। আর চমেক হাসপাতালে জন্ম নেয়ার পরপর চিকিৎসার জন্য এই ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। বাকি ৬৬ শতাংশ শিশুই চমেক হাসপাতালের বাইরে জন্ম নেয়া। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।
চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শিশুদের এখানে নিয়ে আসার কারণ হিসেবে ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, স্ক্যানুতে বিশেষ কেয়ারের মাধ্যমে নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সরাই এই সেবা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া নবজাতকদের জন্য এখানে এনআইসিইউ সুবিধা রয়েছে। রয়েছে কৃত্রিম শ্বাস প্রদানের সুবিধাও। অনেকটা বিনা খরচেই এখানকার রোগীরা এসব সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো এই সুবিধা পাওয়া যায় না। এমনকি শহরের অনেক হাসপাতালেও এসব সুবিধা নেই। তবে প্রাইভেট কিছু হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও সব পরিবারের পক্ষে এর খরচ বহন করা সম্ভব না। যার কারণে এটি (স্ক্যানু) গরীব পরিবারের শিশুদের চিকিৎসায় ভরসাস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের স্ক্যানুতেই শয্যা সংখ্যা সবচেয়ে বেশি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ক্যানুতে ৩২টি এবং মিটফোর্ডে ২৮টি শয্যা আছে। সে হিসেবে আমাদের এখানেই শয্যা সংখ্যা বেশি। তবে রোগীর চাপও বেশি। আর রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণেই একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানে মৃত্যুদণ্ড, অঙ্গচ্ছেদ ফিরিয়ে আনছে তালেবান
পরবর্তী নিবন্ধ৩৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট পেশ হবে