কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফেরাতে রাঙ্গুনিয়ার দশ কিলোমিটার অংশজুড়ে ড্রেজিং কার্যক্রম চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু নদীর মরিয়মনগর এলাকা দিয়ে ড্রেজিংয়ের বালি ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে একটি খালের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ। পাশাপাশি অন্য একটি খালের প্রবেশমুখও বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচল। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী থেকে পাইপ লাগিয়ে নদী খনন করে তোলা বালু স্তূপ করে ফেলা হচ্ছে নদীসংলগ্ন চর ও নদীর সঙ্গে সংযুক্ত দুটি প্রবহমান খালে। খনন করা বালি দিয়ে নদীর সাথে সংযুক্ত মরিয়মনগর খালের কাটাখালী থেকে পশ্চিমে ফুলগাজী পাড়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারেরও বেশি খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
অন্যদিকে কর্ণফুলী নদী থেকে কাটাখালী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত খালের মুখেও ড্রেজিংয়ের বালি ফেলা হয়েছে। এতে এই খালেও পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। জানা যায়, মরিয়মনগর খালটি কাটাখালী থেকে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এটির দৈর্ঘ্য দেড় কিলোমিটার এবং প্রস্ত ৫০ মিটার।
আবার কাটাখালী খালটি ইউনিয়নে মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গুমাইবিলের কুরমাই খালে গিয়ে মিশেছে। এই দুটি খালই কাটাখালী এলাকা দিয়ে কর্ণফুলীর সাথে মিশেছে। কর্ণফুলী নদীর সেই কাটাখালী থেকে পশ্চিমে ১৪০০ মিটার নদী খননের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ইঞ্জিনিয়ারিং।
আর পূর্বে চন্দ্রঘোনা–কদমতলী ইউনিয়নের দিকে ১৬০০ মিটার নদী খননের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। এ দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরই নদী খননের শুরুর পয়েন্ট কাটাখালী এলাকায়।
সেখানে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত ২টি প্রবহমান খালের সংযোগ ছিল। নদী খননের উত্তোলিত বালু ফেলে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত এ দুটি প্রবহমান খালের সংযোগ মুখ ভরাট করে বন্ধ করে ফেলেছেন ঠিকাদাররা।
আর কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত মরিয়ম নগর খালের কাটাখালী থেকে পশ্চিমে ফুলগাজী পাড়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারেরও বেশি খাল ভরাট করে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জ্ঞাতসারেই এটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মরিয়মনগর খালের এক কিলোমিটার অংশ ভরাটের কারণে এলাকার উপকার হয়েছে বলে দাবি করেন মরিয়মনগর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু। এমনকি এই খাল ভরাটে মরিয়মনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা একটা আবেদনে তিনি সুপারিশ করেছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘নদী ও খাল ভাঙার ঝুঁকিতে ছিল এই এলাকার শত শত বাসিন্দা।
এমনকি নদী পাড়ের বালিকা বিদ্যালয়টিও ভাঙনের ঝুঁকির পাশাপাশি খেলার কোনও মাঠ ছিল না। এটি ভরাট করার ফলে স্থানীয় কয়েকজন বাঁশ ব্যবসায়ীর জন্য অসুবিধা হলেও বাকী সবার জন্য ভালো হবে। এমনকি বালি ভরাটের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসছে। তবে খালের বাকী অংশ দিয়ে এখনো নৌকা চলাচল অব্যাহত রয়েছে।’
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, খালের জায়গা জবরদখলের সুযোগ নেই। শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি কম থাকায় আপাতত বালি রাখায় ২–৩টা খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই। মাসখানেকের মধ্যেই উত্তোলিত বালি নিলামে বিক্রি করা হবে এবং খালগুলোও আগের মতো করে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো খাল ভরাট, খালের অংশ পরিবর্তন বা সীমানা পরিবর্তন করা যাবে না। নদী ড্রেজিং করলে উত্তোলিত বালি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা হবে।
কিন্তু তারা বাড়তি টাকা হাতাতে আশেপাশের মানুষের পুকুর, ডোবা ও খাল ভরাট করে দিচ্ছে। ড্রেজিংয়ের বালি দিয়ে যেসব খাল ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে, তা যদি অচিরেই অপসারণ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না হয়, তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।










