নদীতে পানি স্বল্পতা, কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদন ব্যাহত

নাব্যতা হ্রাসে নৌ চলাচল বিঘ্নিত

কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই | শনিবার , ৯ মার্চ, ২০২৪ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই উপজেলার মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীতে নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। নদীতে পানি কম থাকার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। এই নদীর উপর নির্ভরশীল হয়ে চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কর্ণফুলী পেপার মিলসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা। বর্তমানে নদীতে পানি কম থাকায় এর প্রভাব পড়েছে সরাসরি কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) উপর।

কেপিএমের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য বরইছড়িতে ওয়াগ্‌গা পাম্প হাউজে যে মোটর বসানো হয়েছে সেই মোটরের গোড়ায় পানি কম থাকায় পানি উঠছে না। যে কারণে কেপিএমে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কেপিএম ওয়াটার পাম্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন মিয়া কর্ণফুলী নদীতে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, কাগজ উৎপাদনের জন্য কারখানায় প্রতি ঘণ্টায় ২৫০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু মোটরের মুখে সব সময় পানির লেভেল না পাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যার ফলে প্রায়ই কেপিএমে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কাগজ উৎপাদন বন্ধ রাখার পাশাপাশি কেপিএম আবাসিক এলাকায়ও নিয়মিত পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় বসবাসরত পরিবারের লোকজনও পানি সঙ্কটে ভোগছেন।

এদিকে কর্ণফুলী নদীতে পানি কমে যাওয়ার ফলে নিরবচ্ছিন্ন নদী পারাপরও করা সম্ভব হচ্ছে না। অতি সমপ্রতি পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় লিচুবাগান ফেরি ঘাটে ফেরি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। নদীর উপর দিয়ে সর্বত্র সাম্পান চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে। সাম্পান মাঝি আরব আলী জানান, ঘাট থেকে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। যার ফলে ঘাটের খুব কাছাকাছি সাম্পান ভিড়ানো যাচ্ছে না। এর ফলে নৌ যাত্রীদেরও সমস্যা হচ্ছে। আবার অনেক সময় নদীর মাঝখানে হাঠাৎ ডুবো চরে সাম্পান আটকে যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে একান্ত প্রয়োজন না হলে অনেকেই নদী পারাপার হতেও অনিহা প্রকাশ করছেন অনেকেই। এতে সাম্পান মাঝিদের আয় রোজগারও কমে গেছে।

কর্ণফুলী নদীর পাশাপাশি কাপ্তাই লেকেও পানি আশঙ্কাজনহারে হ্রাস পেয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, রুলকার্ভের চেয়ে কাপ্তাই লেকে বর্তমানে ১০ ফুটেরও বেশি পানি কম রয়েছে। লেকে পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট একযোগে চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

রাঙ্গামাটিস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাকের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় লিচুবাগানে ফেরী চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আগামী ১০ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ৪ দিন কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে নদীতে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সময় বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এবং পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হলে পুনরায় লিচুবাগানে ফেরি চলাচল শুরু হবে বলেও তিনি জানান।

স্থানীয় সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন যানবাহন চালক ও সাম্পান মাঝিরা বলেন, শুধু লিচুবাগান অংশে ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এর জন্য পুরো কর্ণফুলী নদীকে ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যাটেল এক্সপোতে দর্শনার্থীদের ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধচিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বাইট্টা মনির সীতাকুণ্ডে গ্রেপ্তার