বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান। গতকাল রোববার সেনা সদর দপ্তরে সেনাপ্রধানের কক্ষে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তার উত্তরসূরির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী তারা দায়িত্ব হস্তান্তরের নথিতে সই করে সবুজ রঙের ফাইল বিনিময় করেন। পরে পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এরপর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান সেনাবাহিনী প্রধানের চেয়ারে বসেন এবং এর মধ্য দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। খবর বিডিনিউজের।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআার) জানায়, দায়িত্ব গ্রহণের পর গণভবনে যান ওয়াকার–উজ–জামান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাকে জেনারেলের ‘র্যাংক ব্যাজ’ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। পরে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান। এ সময় রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে অভিনন্দন জানান এবং তার সাথে সাক্ষাৎ করায় ধন্যবাদ দেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানকে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান করার আদেশ হয় গত ১১ জুন। জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের বিদায়ের দিন থেকে তা কার্যকর হলো। এর আগে বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া তিনি সেখানে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল বিদায়ী সেনাপ্রধানকে সেনাকুঞ্জে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং তিনি সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়া তিনি নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনের সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।
নতুন সেনাপ্রধান ওয়াকার–উজ–জামানের শ্বশুর মুস্তাফিজুর রহমানও একসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯৭–২০০০ মেয়াদে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান। শেরপুরের সন্তান ওয়াকার–উজ–জামান ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরে কমিশন পান। দীর্ঘ ৩৯ বছরের সামরিক জীবনে তিনি একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস এবং সেনা সদর দপ্তরে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চলতি বছরের শুরুতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) দায়িত্ব থেকে চিফ অফ জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) করা হয় ওয়াকার–উজ–জামানকে। তার আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে মেজর জেনারেল থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। তখনই তাকে সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিবের দায়িত্ব থেকে পিএসও করা হয়।
ওয়াকার–উজ–জামান সেনা সদর দপ্তরের সামরিক সচিবের দায়িত্ব পান ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তার আগে তিনি নবম পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারও ছিলেন একসময়। অ্যাঙ্গোলা ও লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সিনিয়র অপারেশন অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই সেনা কর্মকর্তা।
সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন পাওয়া ওয়াকার–উজ–জামান মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ এবং যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ থেকে মাস্টার্স অব আর্টস ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রি পান।
২০০৯ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক থাকাকালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা তিন বছর বিজয় দিবস প্যারেডের প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে তিনি ‘সেনাগৌরব পদক’ পান। এছাড়া সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পান ‘অসামান্য সেবা পদক’। ওয়াকার–উজ–জামান এবং তার স্ত্রী বেগম সারাহনাজ কমলিকা দুই মেয়ের বাবা–মা।