নতুন আমন ধান ঘরে উঠার এখনো কোনো প্রভাব পড়ছে না বাজারে। গত দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে চালের বাজার চড়া। ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা ধানের দাম বেশি- এমন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া একই সাথে বাজারে চালও আসছে কম। যার ফলে দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।
ভোক্তারা বলছেন, সাধারণত নতুন ধান উঠার সাথে সাথে চালের বাজার নিম্নমুখী হয়। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নতুন ধান ও পুরাতন ধানের আলাদা দাম হিসেব করে চালের বাজার বাড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমাদের দেশে এমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেনি, যার কারণে চালের বাজার এভাবে অস্থির হবে। সংকটের কথা বলে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুদ করছে কিনা সেটিও ভাববার বিষয়। তাই প্রশাসনকে বাজার নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই অভিযান চালাতে হবে।
গতকাল নগরীর দুই বৃহৎ চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের সরু চালের দাম বস্তায় ১৫০ টাকা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ এবং কটারিভোগ সিদ্ধ অন্যতম। অন্যদিকে স্বর্ণা সিদ্ধ, বেতি, পাইজাম আতপ, মিনিকেট আতপ, কাটারীভোগ আতপ ও মোটা সিদ্ধ চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
চালের আড়তদাররা জানান, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং মিনিকেট সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং স্বর্ণা সিদ্ধ ২ হাজার ৩৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৪৫০ টাকা, বেতি আতপ ২ হাজার ৩৫০ টাকা, পাইজাম আতপ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চালের বাজার আরো বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সরু চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এখন ধান চালের সংকট থাকার কথা না। মাত্র কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠেছে। এসব আসলে উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকদের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। তারা অতীতেও ধান মজুদ করে এই ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থির করে তুলেন। এ বছরের মতো অবস্থা আর কখনো দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে প্রশাসন এখন থেকে কঠোর ভূমিকা না নিলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নতুন ধানের কোনো প্রভাব এবার চালের বাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আমাদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। কেবল নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ১০০ টাকা এবং পুরনো ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বাজারে পুরনো ধানের চাহিদা বেশি। নতুন ধানের চাল কিছুটা ভেঙে যায়। তাই বাজারে চাহিদাও কম। তবে সামগ্রিকভাবে নতুন ধান উঠলে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কমে যায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এবার নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে চাক্তাইয়ে যেসব ধান আসছে তা পরিবহনে আমাদের দ্বিগুণ অর্থব্যয় করতে হচ্ছে। স্লুইচ গেট নির্মাণের কারণে চাক্তাইয়ের কর্ণফুলী মোহনা থেকে ধান আনলোড করে পরবর্তীতে ট্রাকে করে মিলে আনা হচ্ছে। কস্টিং বাড়ার কারণে এসব চাল আমাদের বাধ্য হয়ে কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।
উল্লেখ্য, আমন মৌসুমে দুই লাখ মেট্রিক টন ধান, ছয় লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রান্তিক কৃষক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনা হবে বলে গত ২৮ অক্টোবর সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ৭ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১৫ নভেম্বর থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ শুরু হয়। যা চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।