নতুন গাজা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভে লাখো মানুষ

| সোমবার , ১১ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়ে গাজা সিটি দখলের যে পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিয়েছেন তার বিরুদ্ধে তেল আবিবের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে লাখো ইসরায়েলি। গত শনিবার রাতের এ বিক্ষোভে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান অবিলম্বে বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা। এর আগের দিনই নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তাদের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইসরায়েলের এ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ঊর্ধ্বতন কয়েক মন্ত্রীকে নিয়ে গঠিত। এখন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় এ পরিকল্পনা অনুমোদিত হতে হবে। রোববারই এ অনুমোদন মিলতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

গাজা সিটি দখল করা নিয়ে ঘরেবাইরে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে নেতানিয়াহুর সরকার। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও বলেছে, এ পদক্ষেপ জিম্মিদের জীবন বিপন্ন করতে পারে। ‘এটা কেবলই একটি সামরিক সিদ্ধান্ত নয়। এটা হতে পারে সেই মানুষগুলোর মৃত্যুদণ্ডের রায় যাদেরকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি,’ শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশে এমনটাই বলেছেন জিম্মি ওমরি মিরানের স্ত্রী লিশে মিরান লাভি। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধও করেন। একাধিক জনমত জরিপে জিম্মিদের মুক্ত করতে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার পক্ষেই বিপুল সংখ্যক ইসরায়েলির অবস্থান দেখা যাচ্ছে। জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের। ইউরোপের অনেক মিত্রও ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে এ শঙ্কায় জার্মানি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহও স্থগিত রেখেছে। হামাস এখন পর্যন্ত যত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে তার বেশিরভাগই ছাড়া পেয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতায়। আরও জিম্মির মুক্তি দেখা যেত যুদ্ধবিরতি হলে, কিন্তু সে আলোচনা জুলাইয়ে ভেস্তে গেছে। তারা (সরকার) ফ্যানাটিক। তারা এমন সব কাজ করছে যা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে, বলেছেন ৬৯ বছর বয়সী রামি দার। তেল আবিবের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে আসা এ অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরও প্রত্যাশা, ট্রাম্পই জিম্মিদের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরায়েল সরকারকে বাধ্য করতে পারবেন। জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কয়েক মাস ধরেই তেল আবিবে নিয়মিত সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। শনিবারের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে বলে ভাষ্য আয়োজকদের। ‘সত্যি বলতে কী, আমি কোনো ধরনের বিশেষজ্ঞ বা তেমন কিছু নই, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে দুই বছর ধরে যুদ্ধ করেও কোনো সফলতা আসেনি। ইসরায়েলি এবং গাজাবাসী, দুই পক্ষের আরও অতিরিক্ত প্রাণ গেলেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না আমার,’ বলেছেন স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বিক্ষোভে আসা ৪৫ বছর বয়সী ইয়ানা।

এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকের হাতেই ইসরায়েলি পতাকা এবং জিম্মিদের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। কারও কারও হাতে থাকা ফেস্টুন, পোস্টারে ছিল সরকারের প্রতি ক্ষোভ কিংবা নেতানিয়াহুকে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে সরাতে ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ। অল্প কিছু বিক্ষোভকারীর হাতে ছিল ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত গাজার শিশুদের ছবিও।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেল আবিব যে সর্বাত্মক অভিযানে নেমেছিল, তা এ পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলেরও চারশর বেশি সেনা মারা পড়েছে।

এদিকে নেতানিয়াহুর কট্টরডানপন্থি জোটের মিত্রদের কেউ কেউ পুরো গাজা দখল করতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিয়েই যাচ্ছে। এদেরই একজন কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী বেজালের স্মতরিচ শনিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন এবং গাজার বড় অংশ দখল করার সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ত্রবিরতির মধ্যে কম্বোডিয়ার কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণ
পরবর্তী নিবন্ধনন-ক্যাডার কলেজ শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা