নতুন একটা শুরুর প্রতীক্ষা

ম যে কোনো পরিসরে সাংস্কৃতিক আয়োজনের অনুমতি চান শিল্পীরা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

মঞ্চ তাদের মন প্রাণ। যারা মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যে মঞ্চ থেকে উঠে আসা শিল্পীরাই নিজেদের জাত প্রমাণ করতে পারছেন সহজেই। মঞ্চকে এত আপন ভাবার কারণ হিসেবে তারা বলেন, মঞ্চ থেকে সরাসরি দর্শক শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া অনুভব করা যায়, যা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। সেই মঞ্চেই যখন করোনার আগ্রাসনে দিনের পর দিন আয়োজন বন্ধ থাকে; তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের হাঁফিয়ে ওঠার কথা। তাই শিল্পীদের দাবি অন্যান্য মাধ্যমের মতো চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হোক। হোক সেটা স্বল্প পরিসরে, উন্মুক্ত মঞ্চে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই।
বাংলাদেশে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দীক্ষিত ওড়িশী নৃত্য শিল্পী প্রমা অবন্তী আজাদীকে বলেন, এই ধরণের ভয়াবহতা আগে কখনও দেখেনি বিশ্ব বা বিশ্বের মানুষ। স্বাভাবিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় বা জীবনাচরণে বড় ধরনের ছেদ পড়েছে। বলা যেতে পারে, মানুষের অভ্যাস পাল্টে গেছে। আমরা যারা সংস্কৃতি চর্চা করি, সেখানেও বড় রকমের বাধা এসেছে। নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। ভাবনায় আনতে হচ্ছে অনেক কিছু। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও মানুষের মধ্যে কিন্তু একটা ভীতি, শংকা এখনও রয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা (দর্শক) অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসেন তাঁরা শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, তাঁরা কিন্তু সচেতন। তারপরও মনে করি মঞ্চ আবার খুলে দেয়া হোক। আবার গান, নাটক, আবৃত্তি ও নৃত্যের ঝংকার বেজে উঠুক। দর্শকদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করার ক্ষেত্রে কোন রকমের শৈথিল্য যেন না থাকে। তাহলে হিতে বিপরীত হবে। ধীরে ধীরে হয়তো মানুষ আসবেন, উপভোগ করবেন। মানুষ আর ঘরবন্দী অবস্থায় থাকতে চায় না, একটু অনাবিল আনন্দ পেতে চায়, একটু মুক্ত হাওয়া কামনা করে। তিনি বলেন, নৃত্য বলুন, নাটক বলুন, সংগীত বলুন, আবৃত্তি চর্চা বলুন দর্শক বিহীন হয় না। দর্শকদের জন্যই আমরা করি, তাঁদের বাদ দিয়ে সংস্কৃতি চর্চা ভাবা যায় না। তাই খুলে যাক মঞ্চ, আবার বেজে উঠুক নূপুরের নিক্কন ধ্বনি।
চট্টগ্রাম মঞ্চ সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সিনিয়র সহ সভাপতি অজয় চক্রবর্ত্তী আজাদীকে বলেন, মার্চ মাসের ১৩ তারিখ প্রোগ্রাম করার পর থেকে আজ অবধি ঘরেই বসে আছি। গানের পেশাই আমার একমাত্র আয়ের উৎস হওয়াতে এই ৬/৭ টা মাস বেকার হয়ে আছি, একটা টাকাও ইনকাম হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু পরিবারের সকলের পেটের ক্ষিদে, সন্তানদের স্কুল, কোচিং, টিচার, বাড়িওয়ালার ঘরভাড়া কোনো কিছুই না দিয়ে পারছি না। এমনকি সেদিন ছোট ছেলের স্কুলের ৬ মাসের বেতন একসাথে পরিশোধ করতে হলো। এত কিছু বলার একটাই কারণ তা হল এভাবে ব্যাংক থেকে কতদিনই বা টাকা ভেঙে চলা যাবে? আমরা তো আর উচ্চবিত্ত নই যে বাবার দেয়া অঢেল অর্থ সম্পদের ভরসায় বসে বসে খাবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটা সেক্টর খুলে দিয়েছে, এমনকি বাসেও মানুষ এখন আগের নিয়মে গাদাগাদি করেই যাতায়াত করছে। গার্মেন্টস বা অন্যান্য ব্যবসা / চাকরির ক্ষেত্রেও সবাই এখন নিয়মিত আগের মতোই কাজ করছে। এত কিছু যখন স্বাভাবিক নিয়মে চলার পর করোনার জন্য বাধা বিপত্তি নেই তখন শুধুমাত্র গানের অনুষ্ঠান করলেই কি করোনার প্রকোপ বাড়বে? এটা কি আমাদের মতো যারা এই পেশার সাথে নিয়োজিত তাদের জন্য ক্ষতি হচ্ছে না? আমাদের শিল্পীদের কি ঘর সংসার নেই? আমাদের কি পেট থাকতে নেই? কিছুদিন আগে আমরা চারটি সংগঠন মিলে ‘চট্টগ্রাম প্রফেশনাল স্টেজ পারফর্মার এন্ড সাউন্ড লাইট ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন করেছি, এরপর আমরা ফোরাম থেকে নিজেদের উদ্যোগে গানের অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইতে গেলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। এমতাবস্থায় আমাদের শিল্পী সমাজের সাথে জড়িত সকল কিছুই স্থবির হয়ে আছে। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১৫/২০ লক্ষ মানুষ এই সেক্টরের সাথে জড়িত। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো যেন করার অনুমতি দেয়া হয়।
বোধন আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী আজাদীকে বলেন, একে একে যেহেতু সবকিছুই খুলছে তাহলে তো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতেই পারে। তবে তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে; যেহেতু এখানে ব্যাপক সাবধানতা অবলম্বনের বিষয় রয়েছে। শিল্পী এবং কলা-কুশলীরা সাংস্কৃতিক কাজকর্ম করেই জীবিকা নির্বাহ করেন বিধায় দীর্ঘ সময় তাঁদের আয়-রোজগার নেই, ভীষণ কষ্টে আছেন তাঁরা। যদি অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দিতে এত আপত্তি থাকে, তবে সরকার সহ প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই, তাঁদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিহাদীর মুক্তি দাবিতে মিছিলে পুলিশের বাধা, লাঠিচার্জ
পরবর্তী নিবন্ধমুক্ত হাওয়ার টানে সমুদ্র পাড়ে ছুটছে মানুষ