নড়বড়ে কাঠের সাঁকো, মাটিরাঙ্গায় দুর্ভোগে পাঁচ গ্রামের মানুষ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | বুধবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ব্যবহারে নড়বড়ে হয়ে গেছে এলাকাবাসীর তৈরি করা ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সাঁকো। লোকজন উঠলেই সাঁকোটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাঠ নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। এরপরও বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার একাংশের অবস্থান ধলিয়া খালের ওপারে। পৌর শহরের বাসিন্দা হলেও নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পাঁচ গ্রামের অধিবাসীরা। এক যুগেরও বেশি সময় আগে মাটিরাঙ্গার ধলিয়া খালের ওপর ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয়রা। এরপর একাধিকবার কাঠের ঝুলন্ত সেতুটি স্থানীয় বা সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করা হলেও সেই সাঁকোটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে।

কাঠের সাঁকো পারাপারে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী পাঁচ গ্রামের কয়েক’শ পরিবার। স্থানীয় অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি হলেও মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষা ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে। নিম্নআয়ের মানুষের জীবনজীবিকার কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় অধিবাসীরা। মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেঁষা ধলিয়া খালের মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর ও বরঝালাসহ পাঁচ গ্রামের কয়েক’শ পরিবারের বসবাস। খালের ওপারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মসজিদ ও একটি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। রয়েছে কৃষি জমি আর ফলদ বাগান। সেতু না থাকায় কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা। ইতোপূর্বে ঝুঁকি নিয়ে কাঠের ঝুলন্ত সাঁকো পার হওয়ার সময় ঘটেছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। তাছাড়া সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে।

কখনো বাঁশের আবার কখনো কাঠের তৈরি পাটাতন দিয়ে নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটিই ছিল গত দুই দশকের অধিক সময় ধরে এপারের সঙ্গে ওপারের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। বর্ষা এলেই খালের ওপারের বাসিন্দারা মাটিরাঙ্গার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই খালের উপর সেতু নির্মাণ প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে দুই যুগের বেশি। ফলে দুর্ভোগ কমেনি এই এলাকার মানুষের। তবে দীর্ঘ বছরেও জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্নজনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

ধলিয়া খালটি ৭নং ওয়ার্ডের পাঁচ গ্রামের মানুষকে শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান খোকন বলেন, বছরের ১২ মাসই ধলিয়া খালে পানি থাকে। ফলে ভোগান্তি মানুষের পিছু ছাড়ে না। জনদুর্ভোগ লাঘবে ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণেরও দাবি জানান তিনি।

বরঝালা গ্রামের বাসিন্দা বিমল চাকমা আক্ষেপ করে বলেন, ধলিয়া খালের পূর্বপাশে কোনো জনমানব বসবাস করছে বলেই কেউ মনে করে না! নির্বাচন এলেই সাধারণ মানুষের কদর বাড়ে। ধলিয়া খালের উপর পাকা সেতু না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা কৃষকরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সেতু পার হয়ে স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে হয়।

প্রতিশ্রুতির পরেও ধলিয়া খালের উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শ্রমিক মো. আবদুল আলী বলেন, আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে বাজারে যেতে হয়। তবে অসুস্থ রোগী আর বয়স্করা এ সেতু পার হয়ে বাজারে যেতে পারেনা।

বরঝালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, একটি সেতুর অভাবে মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের কাছাকাছি থেকেও অন্ধকারে পড়ে আছে মোহাম্মদপুরবরঝালাসহ পাঁচ গ্রামের মানুষ। শিক্ষকদের প্রতিদিন ঝুকি নিয়েই নড়বড়ে সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। তিনি জনস্বার্থে ধলিয়া খালের উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ধলিয়া খালের ওপারে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তাদের নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ধলিয়া খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন
পরবর্তী নিবন্ধদুই বছর না পেরোতেই পুনরায় ভাঙন