নগর ছাড়ার হিড়িক পথে পথে দুর্ভোগ

যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর নতুন ব্রিজ থেকে সাতকানিয়ার নিয়মিত ভাড়া ৮০টাকা। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ৬০ শতাংশ বর্ধিত হিসেবে ভাড়া দাড়ায় ১৩০ টাকা। কিন্তু রোববার বিকেল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই রুটটিতে গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে ভাড়া ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানান যাত্রীরা। একইভাবে নতুন ব্রিজ হতে বাঁশখালীর গুণাগরির লোকাল ভাড়া ৬০ টাকা। ৬০ শতাংশ বর্ধিত হিসেবে ভাড়া আসে ৯৮টাকা। সেখানে প্রত্যেক আসনে যাত্রী নিয়ে ভাড়া আদায় করা হয়েছে ১০০টাকা। একই সময়ে আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনী যাত্রী বোঝাই করেছে ‘জ্যামফিট’ উল্লেখ করে। গাড়ি না পেয়ে গাদাগাদি করে এসব বাসে চড়তে বাধ্য হয়েছেন ওইসব গন্তব্যের যাত্রীরা। এ গাড়িগুলোর বিআরটিএ নির্ধারিত রুটপারমিট ৩১জন যাত্রী বহনের জন্য অনুমোদিত থাকলেও শুধু আসন রয়েছে ৪০টির অধিক।
সরকারি রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে দীর্ঘদিন ধরে বর্ধিত আসন সংযোজন করে যাত্রী বহনের বিষয়ে অভিযুক্ত বাসগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না স্থানীয় পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ কিংবা নগর ট্রাফিক বিভাগ। তাছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলেও নতুন ব্রিজে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো কর্তৃপক্ষের নজরদারি চোখে পড়েনি।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার সোমবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে আটকে পড়ার ভয়ে নগরী ছাড়ার হিড়িক পড়ে। এ সুযোগে রোববার দুপুর থেকে নজিরবিহীন ভাড়া সন্ত্রাস চলেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পথে পথে। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাড়িভর্তি যাত্রী নিয়েও ভাড়া আদায় করেছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। পরিবহনের চালক-হেলপাররা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। বছরের রমজান কিংবা কোরবানির ঈদের আগে অনেক সময় ভাড়া বাড়লেও এবার কোভিডের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অযুহাত করে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করেছে বাস চালক হেলপাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে মানুষের ভিড় জমে নগরীর নতুন ব্রিজে। তাছাড়া দুপুর দুইটার পর থেকে কঙবাজার, বান্দরবানগামী দূরপাল্লার বাস ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এস আলম, সৌদিয়া, মারমা পরিবহনের বাসগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে দুপুরের পর থেকে বাসের সংকট শুরু হয়। বাস সংকটকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম-কঙবাজার, চট্টগ্রাম-বান্দরবান, চট্টগ্রাম-কঙবাজার-টেকনাফ, পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি), চট্টগ্রাম-পটিয়া, চট্টগ্রাম-আনোয়ারা, চট্টগ্রাম-কেরানিহাট-সাতকানিয়া-আমিরাবাদ রুটে শুরু হয় ভাড়া নৈরাজ্য। নজিরবিহীন ভাড়া সন্ত্রাসে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়ে গন্তব্যের যাত্রীরা। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গাড়ি না পেয়ে অনেককে পায়ে হেঁটে শাহ আমানত সেতু পার হতে দেখা গেছে।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নতুন ব্রিজ এলাকার বাঁশখালী গুণাগরীর বাসে ওঠা যাত্রী সুমন বলেন, ‘সাধারণ সময়ে গুণাগরীর ভাড়া ৬০ টাকা। এখন ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সরকারের স্বাস্থ্যবিধির ঘোষণাও মানছে না। সব সিটেই যাত্রী নিয়েছে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে এ বাসে উঠেছি।’
সাতকানিয়াগামী যাত্রী আবু নোমান বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দেড়শ টাকা। সব আসনে যাত্রীও নেওয়া হচ্ছে। অন্যসময়ে বৃহস্পতিবারেও এত্তো ভাড়া হয় না। সরকারি নিয়মের কথা বললে, যাত্রী নেমে যেতে বাধ্য করছে বাসের চালক-হেলপাররা।’ একই অবস্থা পটিয়াগামী বাসেও। সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করলেও, দু্‌পুর দুইটার পর এস আলম সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রত্যেক সিটে যাত্রী নেওয়া শুরু করে বাসগুলো। পটিয়া বাসের যাত্রী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কোন সিট খালি রাখা হচ্ছে না। ভাড়াও ৫০টাকা করে নিচ্ছে। এখানকার ট্রাফিক পুলিশকে বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে বলেছি, তারা কোন কর্ণপাত করছে না।’
আবার বাস না পেয়ে ট্রাকে, পিকআপে, রাইড বাইকেও চড়েছেন যাত্রীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পটিয়াগামী একটি মিনিট্রাকে উঠতে ভিড় জমে যায় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের। বাসের মতো ৫০টাকা ভাড়া আদায় শুরু করে তারাও।
চট্টগ্রাম কঙবাজার বিলাসী কোস্টার চেয়ারকোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘লকডাউন ঘোষণার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে নগরীতে ফিরতে বাসগুলো যাত্রী পাচ্ছিল না। যে কারণে অনেক গাড়ি ৬ট্রিপের পরিবর্তে ৪ট্রিপ চালিয়ে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে রাস্তায় গাড়ি কমে যায়। তবে দুপুরের পর থেকে নগরী থেকে বাড়ি ফেরার মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। এসময় অনেক যাত্রী জোর করেও গাড়িতে চড়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্পটেও দীর্ঘক্ষণ গাড়ি না পেয়ে অনেক যাত্রী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এরপর যাত্রীরাই জোর করে গাড়িতে চড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করার জন্য মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নির্দেশনা দেওয়া আছে। ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। যারা নিচ্ছেন তাদেরও সতর্ক করা হবে।’
লকডাউনের আগে নগর ছাড়ার হিড়িক : সাতদিনের লকডাউনের ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে আটকে পড়ার ভয়ে নগরী ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। গণপরিবহনে যাত্রী ও চালক হেলপারদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা উপেক্ষিত লক্ষ্য করা গেছে। রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামের বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। রাত ৭টা পর্যন্ত ছিল একই অবস্থা। বন্দর নগর ছেড়ে যাওয়া মানুষের ঢল নামে লঞ্চ টার্মিনাল ও রেল স্টেশনেও। তবে আসনের অর্ধেক টিকিট দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে, বন্ধ রয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিটও। তাই রেল স্টেশনে যাত্রী বাড়লেও অনেককে বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজে ফিরে যেতে দেখা যায়। দূরপাল্লার বাসগুলোতে নিয়মিত যাত্রীদের পাশাপাশি ছাদেও দেখা গেছে ভিড়।
নগরীর বহদ্দারহাট, দামপাড়া, কদমতলী, অলংকার বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদরঘাট নৌ টার্মিনালে দেখা গেছে ভিড় করেছেন যাত্রীরা। লকডাউনে নগরীতে আটকে পড়ার ভয়ে ঈদের ছুটির মতো দলবেধে বাড়ি ফিরছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও, অনেকের মাঝে তা পরিলক্ষিত হয়নি। যাত্রীদের বেশিরভাগ মাস্ক পড়লেও গাড়ির চালক হেলপারদের বেশিরভাগের মুখে মাস্ক নেই। অনেকের মাস্ক থাকলেও তা থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলকডাউন কার্যকরে নানা পদক্ষেপ
পরবর্তী নিবন্ধমার্কেট ব্যাংক কাঁচাবাজারে হুড়োহুড়ি, দিনভর যানজট