বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলার সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার নগরে ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের এবং উত্তর জেলায় গোলাম আকবর খোন্দকারকে আহ্বায়ক করে ৪৩ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নগর কমিটিতে ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়ক থাকলেও উত্তর জেলায় কাউকে পদটিতে রাখা হয়নি। এমনকি সদস্য সচিবও রাখা হয়নি সেখানে। নগর নেতৃত্বে আসা শাহাদাত-বক্কর বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। উত্তর জেলার নেতৃত্বে আসা গোলাম আকবর খোন্দকার বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে আছেন। এর আগে ১৯৮৪ সাল থেকে একটানা ২৭ বছর উত্তর জেলায় সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে তিনি আবারো আহ্বায়ক হচ্ছেন, এমন খবরে একজোট হয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও যুগ্ম-মহাসচিব কারাবন্দি লায়ন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলাম আকবরের উপরই আস্থা রাখল কেন্দ্র। একইসঙ্গে তাকে ঠেকাতে যাদের নেতৃত্বে বৈঠক হয়েছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
নতুন নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া : নবগঠিত উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, এটা বিশেষ দায়িত্ব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে যাব। ১৯৮৪ সাল থেকে পরবর্তী ২৭ বছর উত্তর জেলা বিএনপিতে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। কিন্তু আমি দায়িত্ব ছেড়ে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সম্মেলন ও ঐক্যবদ্ধ কোনো কমিটি হয়নি। যার কারণে হাইকমান্ড বাধ্য হয়েছে কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। এখন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব।
কতদিনের মধ্যে সম্মেলন করা করবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি। সাধারণত তিন মাস ধরা হয়। সামনে তো আবার করোনার প্রকোপ বাড়ছে। এরপরও আমার টার্গেট থাকবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বা তারও আগে করার জন্য।
নগর বিএনপির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সদস্য সংগ্রহ এবং সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। বিভিন্ন কারণে সেটি পারিনি। এবার চেষ্টা থাকবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন করার। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলে দল শক্তিশালী ও সংঘটিত হবে। এতে আমারও তৃপ্তি থাকবে।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর দৈনিক আজাদীকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরে সু-শৃঙ্খল মহানগর কমিটি উপহার দেয়ার ইচ্ছা। আশা করছি সফল হবো।
নগরে কমিটিতে যারা আছেন : ১৩ যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন- এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, এড. আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আযম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস এ খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দীন, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, শাহ আলম, ইস্কান্দার মির্জা ও আবদুল মান্নান। সদস্যরা হলেন- এরশাদ উল্লাহ, আবু সুফিয়ান, কমিশনার শামসুল আলম, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মো. আলী, কমিশনার মাহবুবুল আলম, এড. মফিজুল হক ভূইয়া, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, ইকবাল চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, আশরাফ চৌধুরী, নাজিম উদ্দীন, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম কমিশনার, শামসুল হক, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (পাঁচলাইশ), আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (আকবরশাহ) ও কামরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি, আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবু সুফিয়ানকে সহ-সভাপতি করে নগর বিএনপির তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
উত্তর জেলায় যারা আছেন :
উত্তর জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন- নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল চৌধুরী, শাহীদুল আলম চৌধুরী, মো. সালাউদ্দিন চেয়ারম্যান, ফকির আহমেদ, দিদারুল আলম মিয়াজী, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, আলহাজ সালাউদ্দিন, ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, সারোয়ার আলমগীর, মোবারক হোসেন কাঞ্চন চেয়ারম্যান, অ্যাড. আবু তাহের, আহসানুল কবির রিপন তালুকদার, আজমত আলী বাহাদুর, আলমগীর ঠাকুর, ইসহাক কাদের চৌধুরী, কাজী সালাউদ্দিন, ইউসুফ নিজামী, জয়নাল আবেদীন দুলাল, জহুরুল আলম জহুর, শামসুল আলম আজাদ, নুর মোহাম্মদ, প্রফেসর মির্জা মো. শহিদ উল্লা বাবুল, ডা. রফিকুল আলম চৌধুরী, সেলিম চেয়ারম্যান, সোলায়মান মঞ্জু, জাকির হোসেন, এম এ হালিম, জসিম উদ্দিন সিকদার, এড. এনামুল হক, আলহাজ্ব সেকান্দার চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম উদ্দীন চৌধুরী, জাফর আহমেদ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, আজম খান, শওকত আলী নূর, অধ্যাপক কুতুব উদ্দীন বাহার, আবু আহমেদ হাসনাত, অধ্যাপক মহসিন ও মাহবুব ছাপা।
ক্ষোভ আছে উত্তর জেলায় : ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং গিয়াস কাদেরের অনুসারী কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় উত্তর জেলা বিএনপির ৯৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। ওই সময় পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে আওতাধীন প্রতিটি থানা কমিটি গঠনের পাশাপাশি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, এবং জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার নির্দেশ দেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারা কাউন্সিল করতে পারেননি। এরপর ২০১৬ সালের ১৫ মে আটক হন আসলাম চৌধুরী। ২০১৭ সালের ১৭ মে দল থেকে অব্যহতি দেয়া হয় কাজী হাসানকে। ১০ মাস পর ১৮ নভেম্বর সে অব্যহতি পত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেন বেগম জিয়া। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৮ জানুযারি মারা যান তিনি। ফলে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয় উত্তর জেলায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে উত্তর জেলার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে হয়নি। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলে গিয়াস কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা এক হয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে দাবি করেন, আসলাম চৌধুরীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন কমিটি গঠন করা না হয়। একইসঙ্গে সম্ভাব্য সাংগঠনিক কমিটিতে একজন আহ্বায়ক, উত্তর জেলার আওতাধীন সাতটি উপজেলা থেকে সাতজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কমপক্ষে ৭১ জন সদস্য করার দাবি করেন। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন। তবে এসব দাবির একটিও পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, আসলাম চৌধুরীকে জেলে রেখে গঠিত কমিটি তৃণমূল ভালোভাবে নেয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে এটা করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে পরিচিত অনেককে কমিটিতে রাখা হয়নি। গঠিত কমিটি দলীয় কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে মনে করি না। নবগঠিত কমিটিতে আমাকে রাখা না হলেও দল থেকে কিন্তু বাদ যাইনি। আগামীকাল (আজ) সীতাকুণ্ডে দলের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাব।