নগরে ভূ-গর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে ছয়টি স্থান চূড়ান্ত

সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন হিসেবে ব্যবহার হবে এসব সংরক্ষাণাগার প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২৩ জুন, ২০২৪ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে ছয়টি স্থান চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’ (এসটিএস) হিসেবে ব্যবহার হবে এসব বর্জ্য সংরক্ষণাগার। এসটিএসগুলো নির্মাণে আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করার কথা রয়েছে। প্রতিটি এসটিএস নির্মাণে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা খরচ হতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও ১৫টি ভূগর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে নগরে ৭টি এসটিএস আছে। তবে এর একটিও ভূগর্ভস্থ নয়।

নগরে ভূগর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণে চূড়ান্ত করা স্থানগুলো হচ্ছেমহাজন ঘাটা, জিএম গেইট, নয়া বাজার মোড়, আলমাস মোড় এবং ২ নম্বর গেইট। এছাড়া জিইসি কনভেনশন হলের পেছনে অথবা নূর আহমদ সড়কে বিএনপির অফিসের সামনে বর্তমানে যেখানে ময়লা সংরক্ষণ করা হয় তার কোনো একটিতে এই এসটিএস নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূগর্ভস্থ এসটিএস যখন ৮০ শতাংশ পূর্ণ হবে তখন অটো নোটিফিকেশন (স্বয়ংক্রিয় বার্তা) আসবে। তাছাড়া হাইড্রোলিক প্রেসারের মাধ্যমে ময়লাকে সংকোচন করে অর্ধেক হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১০ টন ময়লা ফেললে সংরক্ষণ করলে তা ৫ টন হয়ে যাবে। এতে একই স্থানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বর্জ্য সংগ্রহ করা যাবে। একইসঙ্গে এসটিএস থেকে ল্যান্ডফিলে নেয়ার ক্ষেত্রে চসিকের ময়লা পরিবহন খরচও কমে আসবে।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ভূগর্ভস্থ এসটিএসগুলোতে সংরক্ষিত বর্জ্য চোখে দেখা যাবে না এবং আশেপাশে দুর্গন্ধও ছড়াবে না। ছযটি স্থান চূড়ান্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ গত বছরের আগস্ট মাসে চসিককে ভূগর্ভস্থ এসটিএস সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। এরপর নভেম্বর মাসে ‘হাবাআন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট স্টোরেজ সিস্টেম’ এর আমন্ত্রণে ফিনল্যান্ড সফর করেন মেয়র। সেখানে তিনি ভূগর্ভস্থ এসটিএস পরিদর্শন করে এর নানা দিক খতিয়ে দেখেন।

জাইকার তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালানর্দমা, খালবিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে। এছাড়া ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্জ্য নিয়ে সমীক্ষায় চালায় ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ এবং ‘ইয়চিও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’। এতে বলা হয় নগরে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। যার ৬৮ শতাংশই খাদ্য সংশ্লিষ্ট।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, বাসাবাড়ি বা উৎস থেকে সংগৃহীত বর্জ্য এসটিএস এ নিয়ে আসে চসিক। এরপর এসটিএস থেকে ডাম্প ট্রাকে করে হালিশহরের আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে অবস্থিত ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এফআইডিসি রোড, লালখান বাজার ওয়ার্ডের টাইগারপাস, পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বরিশাল কলোনি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাগরিকা, হালিশহর মুনিরনগর ওয়ার্ডের পোর্ট কানেকটিং রোডের পোর্ট মার্কেট, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বিমানবন্দর সড়কের বিজয় নগর বা ১৫ নম্বর এলাকায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৬টি এবং চান্দগাঁও এক কিলোমিটার ফ্লাইওভারের নিচে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত একটি এসটিএস আছে।

অবশ্য বর্তমানে এসটিএস এর বাইরে নগরে শতাধিক উন্মুক্ত স্থান রয়েছে যেখানে বাসাবাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য এনে সাময়িকভাবে রাখে চসিক। অবশ্য অনেকগুলো স্পটে বর্জ্য রাখার কন্টেনারও রাখা আছে। এরপরও উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য সংরক্ষণ করায় দুর্গন্ধ ছড়ায় আশেপাশে। এতে পথচারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি শহরে সৌন্দর্যহানিও ঘটে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ এসটিএস স্থাপনের ফলে উন্মুক্তভাবে ময়লা রাখার স্থানের সংখ্যাও কমে আসবে। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থপনার ফলে আসবে শৃঙ্খলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া
পরবর্তী নিবন্ধটেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করবে ঢাকা-দিল্লি : শেখ হাসিনা