নগরে সাড়ে তিন লক্ষ যান্ত্রিক যান ও প্রায় তিন লক্ষ রিকশা চলাচল করে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল এবং টানেল নির্মাণ শেষ হলে গাড়ির চাপ বাড়বে শহরে। এতে বাড়বে যানজটও। এমনিতে নিত্য যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গাড়ির চাপ বাড়লে তা হবে আরো অসহনীয়।
এ অবস্থায় যানজট নিরসনে গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এজন্য প্রয়োজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ। চসিক ও সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে। গতকাল সকালে টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ।
বৈঠকে শহরের প্রবেশপথে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো এবং নগরে প্রায় ৭০ হাজার অবৈধ রিকশাকে যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়। যানজট সৃষ্টির অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলা হয়, বিল্ডিং কোড না মেনে অধিকাংশ বহুতল ভবন এমনকি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট ভবন-মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় অতিথি বা দর্শনার্থীদের গাড়ি রাস্তায় রাখায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পার্কিং ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানে নিজস্ব গাড়ি ছাড়া অন্যদের গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ থাকে না। এতে সেবা নিতে আসা রোগী বা স্বজনদের গাড়ি রাস্তায় রাখতে হয়। এতেও যানজট সৃষ্টি করছে। বৈঠকে অধিকাংশ ফুটপাত অবৈধভাবে দখল হয়ে যওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মেয়র আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গায় পে-পার্কিংয়ের প্রস্তাব করলে ট্রাফিক বিভাগ আপত্তি জানায়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরে সবচয়ে বড় সমস্যা যানজট। সমস্যাটি অসহিষ্ণু মাত্রায় পৌঁছেছে এবং এর ফলে কর্মব্যস্ত নাগরিক সমাজের মূল্যবান কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ছে। তাই এই সমস্যার সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
শ্যামল কুমার নাথ বলেন, শহরে তিন লক্ষ রিকশা চলাচল করলেও মাত্র ৭০ হাজার বৈধ। এছাড়া নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত অবৈধ দখলদারের হাতে চলে যাওয়াটা ও নগরীর প্রবেশমুখে কন্টেনার ডিপো স্থাপনও যানজটের বড় কারণ। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না বলেই পার্কিংয়ের জায়গা নেই। শহরের প্রবেশপথে বেসরকারি কন্টেনার ডিপোর জন্য যানজট লেগে থাকে। তখন মনে হয় চট্টগ্রাম যানজটের শহর। অথচ ভেতরে প্রবেশ করলেই যানজট থাকে না।
তখন মেয়র বলেন, পর্যায়ক্রমে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করা হবে। এখন থেকে রিকশার বারকোড প্রদান করবে চসিক, সিএনজি বারকোড ব্যবস্থা করবে সিএমপি এবং ফুটপাতে টাইলস্ স্থাপন করে ফেন্সিং রেলিংয়ের মাধ্যমে সাজানো হবে। এতে ফুটপাতের উপর দোকান বসলে ক্রেতা সহজে বিক্রেতার নিকট পৌঁছাতে না পারে।
তিনি বলেন, নগরের ২০ মাইলের মধ্যে কোনো ইনল্যান্ড বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থাকার কথা নয়। কিন্তু নগরের ভেতর একাধিক বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থাকায় প্রবেশমুখগুলোতে যানজট প্রকট আকার ধারণ করছে। এই ডিপোগুলো সরানোর জন্য বন্দরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বয় করে তাদের শহরের বাইরে স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেয়র বলেন, ফ্লাইওভারগুলোতে অপরাধ প্রবণতা দমনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে বিশেষ নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহায়তা লাগবে। ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গায় অনেকে স্থায়ীভাবে গাড়ি রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে তো অন্যরা সুবিধা পাচ্ছে না। তাই সেখানে পে-পার্কিং করার প্রস্তাব দেন তিনি। অবশ্য যানজট বৃদ্ধির আশংকায় এতে আপত্তি করেন শ্যামল কুমার নাথ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, ডিসি ট্রাফিক তারেক আহমেদ ও মহিউদ্দীন খান।