নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত ও অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জীবনের ঝুঁকি ও শঙ্কা নিয়েই দিন যাপন করছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বাসিন্দা। পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও ভাঙা হচ্ছে না কয়েকটি ভবন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘প্ল্যান ছাড়াই নগরীতে কয়েক হাজার ভবন, কোনো সংস্থার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা বা জরিপ নেই, নগর পরিকল্পনাবিদদের উদ্বেগ, ভবনগুলো চিহ্নিত এবং অপসারণ করা জরুরি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্ল্যান ছাড়াই নগরীতে আছে কয়েক হাজার ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নগরে প্রতি বছরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। যথাযথ উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হুমকি হয়ে উঠছে। সিডিএর প্ল্যান নেই এমন ভবনগুলোতে বসবাস করছে মানুষ। চলছে ব্যবসাবাণিজ্য। আশেপাশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সময় এসব ভবন নড়ে ওঠে। মধ্যম মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলেও নগরীতে ‘ম্যাসাকার’ ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জানা যায়, নগরে ভবন নির্মাণে সিডিএ শুধুমাত্র প্ল্যান প্রদান করে। বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস মিলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও জড়িত থাকে প্রতিটি ভবনের সাথে। কিন্তু নগরীতে কোনো সংস্থার কাছেই বিস্তারিত জরিপ নেই। নেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা। সিডিএ থেকে অনুমোদন না নিয়ে নগরীতে একটি ইট স্থাপনেরও আইনি সুযোগ নেই। অথচ এই নগরে কয়েক হাজার ভবন রয়েছে যেগুলোর সিডিএর কোনো প্ল্যান নেই। একশ বছরের বেশি আগে নির্মিত অননুমোদিত ভবনেও মানুষ বসবাস করছে। পঞ্চাশ বছর আগেকার নির্মিত অনেক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশের পরও এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন না ভাঙার ফলে ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোন বড় দুর্যোগে প্রাণঘাতীসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় বাদ পড়েনি বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর অবস্থার বিবরণে জানা যায়, অনেক আগে নির্মিত, ঢালাই ভেঙ্গে যাওয়া, কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ছোট ও বড় বড় ফাটল, ব্যবহার অনুপযোগী পরিত্যক্ত ভবনের কথা উল্লেখ রয়েছে। ভবনগুলো খুব কম সময়ের মধ্যেই নির্মাণ ত্রুটি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের ফলে নগরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ প্রত্যাশিত নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে শহরাঞ্চলে বেকারত্ব, পরিবেশের অবনতি, নগরে দরিদ্র জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ আরও বহুমাত্রিক সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নাগরিক এসব সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সমপ্রতি বাংলাদেশের নগরায়নের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এক অভূতপূর্ব সংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। সে তুলনায় পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে মানুষ আসছে না বললেই চলে। এমনকি কোনো কোনো শহরে মানুষের সংখ্যা কমছে। একদিকে যখন শহরাঞ্চলে মানুষের অভিবাসনের এ স্রোত, তখন দেখা যাচ্ছে আরো একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। শহরমুখী মানুষের এ স্রোতে আবার পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি সংখ্যায় শামিল হচ্ছেন। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর কমপক্ষে চারপাঁচ লাখ লোক গ্রাম থেকে শুধু রাজধানী শহর ঢাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। আর শহরমুখী মানুষের মধ্যে ঢাকায় আসছেন প্রতি ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৭ জন নারী এবং চট্টগ্রামে এ সংখ্যা প্রতি ১০০ জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৬ জন নারী।

অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের ফলে নগরে সংকট বাড়ছে। যে ভবনগুলো প্ল্যান ছাড়া নির্মিত হয়েছে, সেগুলো এই সংকটের বহিঃপ্রকাশ। এজন্য সচেতন মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী নগরজুড়ে জরিপ চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা দরকার। এ কাজে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে সমন্বিতভাবে। কেননা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত এবং অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কাজটি যত দ্রুত করা যাবে ততই নগরবাসী নিরাপদ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুহম্মদ মনসুরউদ্দীন : লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ
পরবর্তী নিবন্ধচারিয়া মুরাদ সড়ক দ্রুত সংস্কার চাই