রাউজানে ৪৩৮ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। গত ২০ মে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর একটা প্রতিবেদনে জানা যায়, আধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে একদিকে যেমন গ্যাস সাশ্রয় হবে, তেমনি অন্যদিকে উৎপাদন খরচও কম পড়বে। আগের পুরনো ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জায়গায় নির্মিত হতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। প্রতিবেদনে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুন্সী বশির আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, নতুন যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে সেটি হবে দেশের সর্বশেষ লেটেস্ট প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি দেশের জন্য উন্নত প্রযুক্তির মডেল হবে। ইউরোপ এবং আমেরিকার মোস্ট মডার্ণ টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সমস্ত যন্ত্রপাতি সিমেন্স কোম্পানির। আগামী ৬ মাসের মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হবে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি খুলে ফেলা হবে। সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, দেশে বয়ে যাওয়া তীব্র দাবদাহ থেকে দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ২৫ এপ্রিল দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। যা দেশে এ যাবতকালে সর্বোচ্চ। এর আগে সবশেষ গত ১৫ এপ্রিল ১৩ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। পিডিবির হিসাবে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত এক যুগে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন তিনগুণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর বছর ২০০৮ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট, ২০০৯ সালের ৬ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট, ২০১৫ সালের ১৩ আগস্টে ৮ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট, ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৮ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট, ২০১৮ সালে ১১ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট এবং ২০১৯ সালের ১১ মে দেশে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন সত্ত্বেও চট্টগ্রামে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিং। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। শুধু দিনের বেলাতেই নয়, গভীর রাতেও চলছে বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলা। তাই দুঃসহ এই গরমে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে অতিষ্ঠ চট্টলাবাসী। রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও চট্টগ্রামে কেন এত লোডশেডিং হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘ভেবেছিলাম দেশে যেহেতু বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে, সেহেতু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবো। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। এই দুঃসহ গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছি। রাত নাই, দিন নাই যখন-তখন হচ্ছে লোডশেডিং। দুঃসহ এই গরমে যেখানে জীবন প্রাণ অতিষ্ঠ, সেখানে ঘন ঘন লোডশেডিং হলে কতটা যে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন, এই তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা কতটা পীড়াদায়ক।’
যদিও অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করতে চায় না বিদ্যুৎ বিভাগ। তাদের দাবি, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় কাছাকাছি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রিড থেকে। তাই বিদ্যুতের ঘাটতির জন্য লোডশেডিং হচ্ছে না। বরং বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ত্রুটিজনিত কারণে এবং দুর্ঘটনার কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ যে কথাটিই বলার চেষ্টা করুন না কেন, নগরবাসী বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ, সেটা শতভাগ সত্যি। সেই অবস্থায় রাউজানে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সবার জন্য আনন্দের। ২ হাজার ৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদনের পাশাপাশি সাশ্রয় হবে গ্যাস, কমবে উৎপাদন খরচও। আমরা এ উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানাতে চাই এবং গরমের এই তীব্রতায় ত্রাহি অবস্থা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাক-সেটাই কামনা করি।