৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে নগরী গড়তে চান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীর প্রকৃতিগতভাবে সৌন্দর্য্য আছে তা বিবেচনায় আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে একটি বাসযোগ্য নগরী গড়তে চাই। এক্ষেত্রে আমি বিশেষজ্ঞসহ সকল সেবাসংস্থার মতামত এবং পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি গত বৃহস্পতিবার টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এমআরটি ব্যবস্থাপনায় মেট্রোরেল/মনোরেল ও স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সকল সেবাসংস্থার প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন।
একটা লক্ষ্য না থাকলে সমান গতি নিয়ে এগোনো সম্ভব নয়। তাই শুরুতেই নির্ধারণ করতে হয় কতদূর অগ্রসর হওয়া তাঁর উদ্দেশ্য! চট্টগ্রাম নিয়ে এবং তার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে প্রতিদিন কম কথা হয় না। প্রতিটি সেক্টর থেকে দাবি ওঠে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের। কিন্তু প্রত্যাশার পূরণ হয় না। যদিও জানি, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে হবে এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। চট্টগ্রামেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। তবে আমাদের মনে হয়েছে এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন কম হয়েছে। প্রত্যাশার চট্টগ্রাম গড়তে একেক মানুষ একেকভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যে যেভাবে পারছেন নিজেদের মতো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে সেবাধর্মী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন সমন্বয়ের কাজটি যাতে ভালোভাবে করতে পারে সেজন্য আইনগতভাবে ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমানে মেয়র সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করলেও কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তা না মানলে সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা আইনে বলা নেই। সিটি করপোরেশন ও মেয়রের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’-এর মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছেন। কিন্তু এ টাকায় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সবার আগে জানতে হবে- চট্টগ্রামে কী ধরনের উন্নয়ন প্রয়োজন, কী ধরনের উন্নয়ন করা হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। সেটা না জেনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা কাঙ্ক্ষিত উপকারে আসবে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। কোনো উন্নয়ন কাজে ওভারলেপিং যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীকে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে মেয়রকে অভিভাবকের দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিতে হবে। তাঁরা বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম নগরকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, মীরসরাই থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত শহরের যে ব্যাপ্তি হচ্ছে এ কথা মাথায় রাখতে হবে। যে কোনো পরিকল্পনায় লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে তাহলে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
তাঁরা বলেন, নগর উন্নয়নে নান্দনিক সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থায় মেট্রোরেল বা মনোরেল যাই যুক্ত করা হোক না কেন নগরী আগামীতে হাটহাজারী, আনোয়ারা, পটিয়া, সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ব্যাপ্তি হবে তা বিবেচনায় নিতে হবে।
আসলে আমরা জেনেছি, চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। একই সময়ে চেন্নাইয়ের জন্য একই মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। তারা এটি বাস্তবায়ন করে কোন পর্যায়ে আছে, আমরা কোন পর্যায়ে আছি? এরপরও আরও কয়েকটি চমৎকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখানে কোথায় পার্ক হবে, কোথায় আবাসিক এলাকা ও কোথায় খেলার মাঠ হবে এসব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। যে হারে মানুষ নগরমুখী হচ্ছে সে অনুযায়ী তাদের জায়গা দেওয়ার মতো সুযোগ নগরে নেই। তাদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোনো পরিকল্পনা করতে হলে আগে কী পরিমাণ জনসংখ্যা আছে তা শুমারি করে নিশ্চিত হতে হবে। আর এ মানুষকে ঘিরেই গড়ে উঠবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়। আমরা বুঝতে পারি, সিটি মেয়রের উদ্দেশ্য মহৎ। তাই তাঁর সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দরকার।