ধান চাষ ব্যাহত না করে সরিষা আবাদ

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | বুধবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

স্বল্প খরচ, কম পরিশ্রম ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় ফটিকছড়িতে বছর বছর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। প্রতিবছর দ্বিগুণ হারে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। জমি থেকে আমন ধান কেটে নেওয়ার পর গত চারপাঁচ বছর ধরে কৃষকরা সেখানে সরিষা চাষ করছেন।

জানা যায়, ফটিকছড়িতে বিভিন্ন মাঠে চাষ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি১৪, বারি১৫ ও বারি১৮। এছাড়াও বিনা সরিষা, বিনা সরিষা১১ সহ বিভিন্ন জাত। এসব গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে দুই ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপণের ৭০ দিনের মধ্যেই খেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। ধান চাষ ব্যাহত না করে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে বাড়তি অর্থ আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন কৃষক।

লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি মৌসুমে ফটিকছড়ি উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫২ হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে। জাফতনগর, হারুয়ালছড়িসহ বিস্তীর্ণ জমি এখন সরিষার হলদে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুল কাজে লাগিয়ে মধু চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন কেউ কেউ। সরিষা খেতের পাশেই অনেক জায়গায় মৌ বঙ স্থাপন হয়েছে।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, উপজেলায় বেশিরভাগ অনাবাদি জমিতে সরিষা চাষাবাদ করছে। গত মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এবার তা দ্বিগুণ হয়ে লক্ষ্যমাত্রা ২৫২ হেক্টর হলেও তা ছাড়িয়ে অর্জন হবে ৩৪৫ হেক্টর, যা গতবারের তুলনায় তিনগুণ বেশি অর্জন। এ চাষের প্রতি ১ কানি জমিতে খরচ পড়ছে ৮ হাজারের মত এবং তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩২ হাজার টাকায়। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩০০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কৃষকরা জানান, আমন ধান ঘরে তোলার পর বোরো রোপণের আগে তিন মাসের মতো সময় পান তারা। আর সরিষা চাষেও ৮০৯০ দিন সময় প্রয়োজন। তাই মধ্যবর্তী সময়ে তারা সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলার জাফতনগর ইউপির মাহাত্তিরহাট এলাকার কৃষক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি চার বছর ধরে সরিষা চাষাবাদ করে যাচ্ছি। এবারও ১৫ কানি জমিতে চাষাবাদ করেছি। গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফুল এসেছে। আশা করি ৮০ মণ সরিষা পাবো। হারুয়ালছড়ির কৃষক খায়রুল আমিন বলেন, এত সুন্দর সরিষা হবে জানলে আমি দুই চার কানি বেশি আবাদ করতাম। কত মানুষ আসে ছবি তোলে, ভিডিও করে। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি লাভবান হবো।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে সরকার। এজন্য ফসলটির উৎপাদন বাড়াতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। গতবারের তুলনায় তিনগুণ বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমরা অন্যান্য বিষয়গুলোর পাশাপাশি সরিষা চাষেও কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকদের প্রণোদনা, পরামর্শ এবং নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকি। কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা। এবার জাব তেমন পোকার আক্রমাণ দেখা যাচ্ছে না। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো ফলন হবে।

এছাড়াও, সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।

কৃষি বিভাগ বলছে, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি। এ কারণে এতে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন। এরপর আবার বোরো ধান রোপণ করতে পারছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিস্কুটে ক্ষতিকর কেমিক্যাল
পরবর্তী নিবন্ধটাইগারপাসে কিশোরকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাত