প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার দেশ ত্যাগের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সভাপতির কার্যালয়ের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরেও হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে এই আগুন দেওয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সেখানে স্লোগান দিচ্ছিল। খবর বিডিনিউজের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়িতে থেকেই পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই বাড়িতেই সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরে বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ভাঙচুর করে আরেকদল মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকেও সব জিনিসপত্র নিয়ে যায় আরেকদল মানুষ। বিকালে একই সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও হামলা হয়। সেখানে দলের সভাপতির অফিসও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে ধানমন্ডি ৩/এ তে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও হামলা করা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, এখানে কিছু লোকজন প্রবেশ করে প্রথমে ভাঙচুর ও পরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি জামায়াতের লোকজন। আর আশপাশের সংগঠনগুলোর অফিস সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনটি সহযোগী সংগঠনেরও কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহার হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টো পাশে ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগ কার্যালয়। আওয়ামী লীগের আরও কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় সেখানে আছে। যেগুলোতেও ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এরপর ধানমন্ডি ৩/এ তে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা হয় বলে জানিয়েছেন সেই কার্যালয়ের একজন রাজনৈতিক কর্মকর্তা। বিকাল ৪টার দিকে আগুন দেওয়া হয় তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়েও। এই আগুন পাশের গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু ভবনে অবশিষ্ট কিছু নেই, সব পুড়ে ছাই : প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে জাতির পিতার বসবাসের এই তিনতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে এই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর থেকে বাড়িটিতে আগুন জ্বলতে থাকে। আন্দোলনকারীরা ঐতিহাসিক এই বাড়িতে যখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল, তখন তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিডিনিউজের প্রতিবেদক পাভেল রহমান জানিয়েছেন, শুক্রাবাদের দিক দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন তিনি। তিনি বলেন, যেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সেই প্রতিকৃতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বই বিক্রয়কেন্দ্র ও বাড়ির সবগুলো রুমও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আর কিছু নাই, দেয়াল; জানলা সব পুড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ওই জাদুঘরে রাখা বই, রড, নির্মাণসামগ্রীসহ অক্ষত যেসব জিনিস রয়েছে সেগুলো আন্দোলনকারীরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে শেখ মুজিব এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়িতে থেকেই পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬ সালের দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, নানা চড়াই–উতরাইয়ের সাক্ষী এই বাড়ি। এই বাড়ি থেকেই একাত্তরের ২৫ শে মার্চের রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টে এই বাড়িতেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে তাকে হত্যা করা হয়।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে বাড়িটি তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে এই বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এস এম হলের পাশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্বোপার্জিত স্বাধীনতাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাতে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি সুধা সদনে হামলা করেও লুটপাট করা হয়।