মাদারীপুরের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থাকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) রবিউল হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন। পরে গতকাল শুক্রবার তাকে আদালতে তোলে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ; শুনানি নিয়ে বিচারক ৭ দিন রিমান্ডের আদেশ দেন। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শাজাহান খানের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। এর মধ্যে ছাত্র–জনতার আন্দোলনকালে ঢাকার জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গুলিতে এক কিশোর নিহতের মামলায় শাজাহান খানকে ৭ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। গতকাল তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার এসআই মো. খোকন মিয়ার আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব হোসেন তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ধানমণ্ডি মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের সময় গত ৪ আগস্ট জিগাতলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মোতালিব। পরদিন তুমুল আন্দোলনের মধ্যে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ২৭ আগস্ট মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। তিনি ১৯৮৬ সালে প্রথম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর–২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে পরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রিমান্ড শুনিতে যা হল : আদালতে কড়া নিরাপত্তা, সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আর আইনজীবীদের হইচইয়ের মধ্যে দিয়ে শুনানি শেষে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তাকে শুক্রবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয় নিরাপত্তার চাঁদরে। এসময় তাকে পুলিশের হেলমেট ও জ্যাকেট পরানো হয়; চারপাশে ঘিরে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। দুপুর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি আদালত প্রাঙ্গণে সেনা সদস্যদেরও দেখা যায়।
আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার জন্য জনসন রোড ও কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের দুটি মূল ফটক বন্ধ করে পাহারায় নিয়োজিত হন পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা। এ দুটি ফটকের ছোট দরজা (পকেট গেইট) দিয়ে পরিচয়পত্র দেখে আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকানো হয় আইনজীবী ও সাংবাদিকদের। বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশের গাড়িবহরে করে শাজাহান খানকে আদালতে আনা হয়। সাদা রঙের ভবনটির ষষ্ঠ তলার ১২ নম্বর এজলাসে শুনানির কথা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তাকে একই ভবনের দ্বিতীয় তলার ২৮ নম্বর এজলাসে নেওয়া হয় দশ মিনিট পর। শুনানির জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ এজলাসে ওঠেন বিকাল ৪টা ২৩ মিনিটে।
এর আগে শাজাহান খানকে এজলাসে আনার সঙ্গে সঙ্গে দোতলার সিড়ির পাশে লোহার গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভেতর ঢুকতে চাইলেও পুলিশ তাদের সুযোগ দেয়নি। পরে পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ঢোকার সুযোগ দেন। তবে যাদের হাতে ক্যামেরা ছিল তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
রিমান্ড শুনানিতে এজলাস কক্ষে ছিলেন ডিএমপির প্রসিকিউশনের নতুন ডিসি নজরুল ইসলাম। এজলাসে সাংবাদিকদের প্রবেশে তিনি কড়াকড়ি করেন। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। পরে এজলাসে ছবি না তোলার প্রতিশ্রুতিতে ভেতরে প্রবেশ করেন সাংবাদিকরা।
এজলাসে কড়াকড়ির ফলে অন্য দিনের চেয়ে শান্তিপূর্ণ ও হইচই কম হলেও আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেকে ‘ড. কামাল হোসেনের জুনিয়র’ পরিচয় দিলে হট্টগোল হয়। তবে আগে এক দফা হইচই হয় কাঠগড়ায় শাজাহান খানকে বসার জন্য এক পুলিশ সদস্য চেয়ার এনে দিলে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একজন বলছিলেন, ১৭ বছরে অনেক আরাম আয়েশ হয়েছে। কাঠগড়ায় কোনো চেয়ার দেওয়া যাবে না। আইনজীবীদের ক্ষোভের মুখে পরে চেয়ারটি নিয়ে বের হয়ে যান ওই পুলিশ সদস্য।
কাঠগড়ায় স্বাভাবিক দেখা যায় শাজাহান খানকে। আদালতে তার পক্ষের আইনজীবীদের হাত উঁচিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন। শুনানির সময় আইনজীবীদের কথা শুনছিলেন। কে কে শুনানি করছেন, সেটিও দেখছিলেন তিনি। তবে শুনানির শেষভাগে তাকে কিছুটা বিষণ্ন দেখা যায়।