পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো প্রকৃতিতে টিকে থাকা সাম্বার হরিণ সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদী থেকে একটি সাস্বার হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগ। পরে বিকালে আহত হরিণটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বাংলাদেশে হরিণের প্রজাতির মধ্যে সাম্বার একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে প্রাণিটির অস্তিত্ব রয়েছে। তবে চোরা শিকারের কারণে ও নানান সংকটের কারণে বিলুপ্তির পথে এই বন্যপ্রাণীটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্প্রিলওয়ে (কলকপাট) সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী থেকে আহত অবস্থায় পুরুষ সাম্বার হরিণটি উদ্ধার করে বন বিভাগ। পরে বিকাল ৫টার দিকে হরিণটির মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া সাম্বার হরিণটির ওজন প্রায় ১০০ কেজি এবং উচ্চতা আনুমানিক ৪ ফুট।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা ওমর ফারুক স্বাধীন জানান, কাপ্তাই বিপিডিবির ব্রিকফিল্ড এলাকার উত্তর পাশে গহীন জঙ্গলে শিকারী কিংবা কোনো প্রাণী হরিণটিকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে হরিণটি বাঁচার জন্য এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্প্রিলওয়ে সংলগ্ন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাৎক্ষণিক খবর পাওয়ার পর হরিণটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। হরিণটি আহত অবস্থায় ছিল। পরে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
দক্ষিণ বন বিভাগের কর্ণফুলী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবু কাউসার জানান, ধারণা করা হচ্ছে–বন্য কুকুরের হাত থেকে বাঁচার জন্য হরিণটি পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দেয়। ওই সময় হরিণটি পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে উদ্ধার করে হরিণটি কাপ্তাই রেঞ্জ কার্যালয়ে এনে একজন প্রাণী চিকিৎসক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে স্ট্রোক করে হরিণটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলছেন তিনি।
পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় সাম্বার ও মায়া হরিণের উপস্থিতি রয়েছে। তবে চোরা শিকারিদের উৎপাতে বিলুপ্তির পথে হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। বিভিন্ন সময়ে খাদ্যের খোঁজে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে নেমে আসে। বন কর্মকর্তারা বলছেন, রাঙামাটির বিলাইছড়ির উপজেলার রাইংক্ষ্যং সংরক্ষিত বন, কাপ্তাই উপজেলার সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কর্ণফুলী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সংকটাপন্ন সাম্বার হরিণ দেখা যায়। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং সংরক্ষিত বনেও সাম্বার ও মায়া হরিণের উপস্থিতি রয়েছে। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলার হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপেও চিত্রা ও মায়া হরিণ রয়েছে। তবে কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে মায়া ও সাম্বার হরিণের অস্তিত্ব রয়েছে। এরমধ্যে সাম্বার হরিণ এখন বিলুপ্তির পথে, সংকটাপন্ন প্রজাতি।