ধর্ষণ শেষে খুন, পরে ফেলেছিল ডাস্টবিনে

শিশুর বস্তাবন্দি লাশ মীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার, আদালতে জবানবন্দি

ঋত্বিক নয়ন | বুধবার , ৩ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় একবার জেলে গিয়েও শিক্ষা হয়নি মীর হোসেনের। জেল থেকে বেরিয়ে একই কায়দায় একই অপরাধে জড়িয়েছে সে। নগরীর বিআরটিসি ফলমন্ডির পাশে ডাস্টবিন থেকে সোমবার রাতে যে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই নাসরিন ওরফে সুখীকে ধর্ষণ শেষে খুন করেছে মীর হোসেন। খুনের পর টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ফেলে রেখেছিল শিশুটির লাশ। পরে সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে লাশটি ফলমন্ডির ডাস্টবিনে ফেলে এসেছিল।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে এ তথ্য জানায় সে। মীর হোসেন বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রুমানা আক্তারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে মীর হোসেন কিভাবে সুখীর সঙ্গে পরিচয় এবং কীভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণণা দিয়েছে।

সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, মীর হোসেন যেখানেই সুযোগ পায় শিশুদের টার্গেট করে। এর আগেও সে কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণের পরে খুনের ঘটনায় জেল খেটেছে। সে মূলত রাস্তা ও ডাস্টবিনে ভাঙ্গারি ও কাগজ কুড়ানোর কাজ করত। শিশুটির মাও একই কাজ করে। রাস্তায় বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে দেখা হওয়ার কারণে তারা পরস্পরের পরিচিত মুখ। রোববার রাতে শিশুটিকে রেখে তার মা বোতলকাগজ কুড়াতে গেলে মীর হোসেন ফুসলিয়ে শিশুটিকে আন্দরকিল্লা থেকে টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ বস্তা ভরে রেখে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় মীর হোসেন ভ্যান গাড়ি করে শিশুটির লাশ ফলমন্ডির ডাস্টবিনে ফেলে চলে যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার সকালে তাকে বাকলিয়া বৌবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন।

শিশুটির মা বিলকিস বেগম আজাদীকে জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে কাগজ ও বোতল সংগ্রহ করতে মেয়ে সুখীকে নিয়ে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসেন তিনি। মামেয়ে জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় সুখী আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের উত্তর গেইটে লোকজনের কাছ থেকে টাকা চাইতে যায়। রাত ১টার দিকে তিনি তার মেয়েকে জামে মসজিদের সিঁড়িতে বসা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় মেয়ে তার মাকে জেনারেল হাসপাতালের সামনে যেতে বলে এবং সে আসছে বলে জানায়। মেয়ের আসতে দেরি হওয়ায় পুনরায় তাকে খুঁজতে গেলে বিলকিস তার মেয়েকে আর সেখানে দেখতে পাননি।

গ্রেপ্তারের পর মীর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য প্রসঙ্গে সিএমপির সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্ত্তী বলেন, রোববার রাত ১টার পর মীর হোসেন শিশুটিকে চিপস ও চকলেট কিনে দেওয়ার কথা বলে রিকশা করে কদমতলী আটমাসিং মোড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে হেঁটে টাইগারপাসের দিকে গিয়ে রাস্তার পাশে পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। শিশুটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে একটি বস্তা কুড়িয়ে এনে সেখানে লাশটি রেখে চলে যায়। সোমবার দুপুরে ঘুম থেকে উঠে বৌবাজার এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভ্যান ভাড়া করে। পথে চেরাগী পাহাড় এলাকার ডাস্টবিন থেকে একটা টুকরি ও ভাঙ্গা বালতি কুড়িয়ে নেয়। সেগুলো নিয়ে কিছু সময় ঘোরাঘুরির পর বিকাল ৫টার দিকে ওই পাহাড়ে গিয়ে সুখীর লাশের বস্তাটি ভ্যানে তুলে উপরে টুকরি ও বালতির ভাঙ্গা অংশটি চাপা দিয়ে রাখে। এরপর কদমতলী এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে চা পান করে সন্ধ্যার পর ডাস্টবিনে লাশটি ফেলে বাসায় চলে যায় মীর।

তিনি জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মীর হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। শিশুটির মা পুলিশকে জানায়, মীর হোসেনও ভাঙ্গারি খোঁজে এবং তাকে বিভিন্ন সময়ে বৌবাজার এলাকায় দেখেছেন। সেই তথ্যে সারা রাত অভিযান চালিয়ে সকাল ৬টার দিকে বৌবাজার এলাকায় মীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৩ জনের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ
পরবর্তী নিবন্ধরুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা, ম্যানেজারকে অপহরণ