শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর জামালখান মোড়ে দেখা গেলো এক অভিনব আয়োজন। পর্দায় একের পর এক প্রদর্শিত হচ্ছে জুলাই–আগস্টের আন্দোলন–সংগ্রামের নানা ভিডিওচিত্র। ফুটপাতে এই ভিডিওচিত্র দেখতে ভিড় জমিয়েছেন সব বয়সী মানুষ। কেউবা ভিডিও দেখে কাঁদছিলেন, কেউবা ছাত্রজনতার আওয়ামী লীগ ও পুলিশকে প্রতিহত করার স্মৃতি পর্দায় সামনে আসতে দেখে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ফিরে যাচ্ছিলেন বিভীষিকাময় দিনগুলোতে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাসজুড়ে চলা আন্দোলন সংগ্রামে মারা গেছেন প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি–পেশার মানুষ। যেমন ছাত্র আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ আছেন তেমনই আছেন রিকশাচালক মানিক মিয়া, শিশু রিয়া গোপসহ অনেকেই। অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে, চিরতরে চোখ হারিয়েছেন হাজারো মানুষ। অগণিত মায়ের বুক খালি হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেসময়ে ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হতে থাকে আন্দোলনের বিভিন্ন ফুটেজ। সেসব সংগৃহীত ফুটেজ কালেকশন করে স্টোরিটেলিং প্ল্যাটফর্ম ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ। সেই সংগৃহীত ভিডিওগুলো দিয়ে শুরু হয় তাদের আয়োজন ‘দ্রোহ–কান্নার জুলাই’। রংপুরের শহীদ আবু সাইদের গুলি খাওয়ার দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। একে একে আন্দোলনের নানা দিনগুলোতে হওয়া ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে ভিডিওতে।
‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’ স্লোগানের দিনগুলোতে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। তারপর দেখা যায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীর হামলার দৃশ্য। নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপর রক্তাক্ত হামলার দৃশ্যগুলো উঠে আসে। সেসব হামলার পরও শিক্ষার্থীদের বুক উঁচিয়ে দাঁড়ানোর গল্প উঠে আসে প্রদর্শনীতে। তারপর যুদ্ধে বিভীষিকা বেজে উঠার মতো একে একে আসতে থাকে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার ভিডিও। আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ–যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা একের পর এক নির্যাতনের দিনগুলো দেখে আঁতকে উঠে আবারো সবাই।
তারপর চালানো হয় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র দ্বারা নির্মিত আন্দোলনের কিছু প্রামাণ্যচিত্র। এই অনুষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায় ছিলো গণযোগাযোগ অধিদপ্তর। আয়োজনের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির সদস্য এবং ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান শেষে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে ৫ আগস্ট। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে আমাদের ভাই–বোনদের হত্যাকারীরা। এই খুনী স্বৈরাচারের উৎখাত করলেই হবে না, তারা যেন বাংলার মাটিতে আর কখনো শোষণ–জুলুম চালাতে না পারে তার জন্য জুলাইয়ের স্মৃতিকে আমাদের জাতীয় মানসে ধরে রাখা অপরিহার্য। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জুলাইয়ের বর্বরতার কথা এই জাতিকে আমরা বারবার মনে করিয়ে দিতে এ ধরনের প্রদর্শনী অব্যাহত রাখব। সে সাথে এই আয়োজন যেকোনো শাসককেই মনে করিয়ে দিবে জনগণ রুখে দাঁড়ালে পরিণতি কি হতে পারে।
জুলাই আমাদের জন্য যেমন দ্রোহের, তেমনই কান্নারও। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ হবে জুলাইয়ের উপর। তাই দেশজুড়ে জুলাইয়ের গল্প নিয়ে আমরা এই প্রদর্শনী ছড়িয়ে দিব।
প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের সংস্কৃতি বিনির্মাণে নতুন এক উপলক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। এ সময় আরো বক্তব্য দেন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের সংগঠক আবু নাছের আলিফ, সাইফুল্লাহ নাদিম, ইসলাম জিশাদ, কাজী রাকিব, অহনা বড়ুয়া প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।