প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় দেওয়ার উপায় বের করতে বিচারক এবং আইনজীবীদের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ে, অল্প খরচে ভোগান্তি মুক্ত বিচারপ্রাপ্তি এটা মানুষের অধিকার। যদি এই দ্রুত সময়ে, অল্প খরচে বিচার দিতে পারেন তাহলে মানুষের একটা আস্থা, বিশ্বাসও বাড়বে। যদিও আমাদের মানুষের এবং আমাদের সকলেরই আস্থা, বিশ্বাস আছে। তারপরও আমি বলব এই ব্যাপারে সবাইকে একটু বিশেষ নজর দিতে। অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বিচারকদের সংখ্যাবৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে অধস্থন আদালতে এক হাজার ১২৬ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি আমাদের আরও বেশি বিচারক প্রয়োজন আছে। এজন্য বিচারক নিয়োগের সাথে সাথে আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কাজেই সেই ব্যাপারে আমার মনে হয় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এই বিষয়টা দেবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং আইনমন্ত্রী সবাই আছেন, আমাদের যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই আনুপাতিক হারে আমাদের কিন্তু এই বিষয়টার দিকে আরেকটু বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
বিচারকসহ বিচার কাজের সাথে সম্পর্কিত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনে রাখা দরকার যে, মানুষ নিরুপায় না হলে আদালতের দ্বারস্থ হয় না। অধিকাংশ মানুষই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আদালতের শরণাপন্ন হয়। তাই আদালত-ই বিচারপ্রার্থী জনগণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কাজেই বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার লাভ করতে পারেন এবং আইনি প্রক্রিয়া, বিচার ব্যবস্থার জটিলতা ও মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষের মধ্যে যাতে কোনো হতাশার সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিচারকদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জুন ২০২০ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতসমূহে ৩৭ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯০৮টা মামলা বিচারাধীন আছে। এইসব মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করার জন্য সকল বিচারক এবং আইনজীবী সকলের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। এত মামলা যেন এভাবে জমে না থাকে। আপনারা কিভাবে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা যায়, অবশ্যই সেই ব্যাপারে একটু আন্তরিক হবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন এবং এর জন্য যদি কোনো রকমের কিছু সহযেগিতা প্রয়োজন হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সেটা আমরা নিশ্চয়ই করব। কিন্তু এতগুলো মামলা এভাবে পড়ে থাকুক সেটা আমরা চাই না।
অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, তবে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে অপরাধের প্রতিকার করা বিচারকের দায়িত্ব। আর এরূপ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হলে শাস্তির ভয়ে অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।
বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা, অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা বিচারকের দৈনন্দিন কার্যতালিকার আওতাভুক্ত। তবে বিচার করতে গিয়ে কোনোপক্ষই যাতে অবিচারের শিকার না হয় বা কোনোভাবে অহেতুক হয়রানি বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকটাও বিচারকদের নিরপেক্ষতার সাথে খেয়াল রাখা দরকার। ন্যায়বিচারের দ্বার যেন সর্বস্তরের বিচারপ্রার্থীদের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত থাকে এবং কেবলমাত্র বিত্তশালীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সেজন্য বিচারকদের সজাগ থাকতে হবে। আইনজ্ঞরা বলেন, বিচারকগণ মামলার প্রতিটি পর্যায়ে সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে আইনানুগভাবে দায়িত্ব পালন করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
বিলম্বিত বিচার যে বিচারহীনতার নামান্তর এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ, সরকার, বিচারক এবং আইনজীবীদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।
এ কথা ঠিক যে সরকার, বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ তথা দেশবাসীর পূর্ণ সহযোগিতা পেলে বিদ্যমান মামলাজট দ্রুত নিরসন সম্ভব হবে। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে গুণগত বিচার পাওয়া সম্ভব হবে এবং এ দেশের বিচার ব্যবস্থা বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।