ঝলমলে রোদের মধ্যেও টানা দ্বিতীয় দিন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকা। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। আকস্মিক এ জোয়ারের পানির চাপ সবচেয়ে বেশি ছিল বাকলিয়া ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। জোয়ারের পানির খবর পেয়ে অনেকে গুদাম দোকান থেকে পণ্য নিরাপদে সরিয়ে নেন। ব্যবসায়ীরা জানান, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় দোকান-গুদামের প্রবেশমুখ উঁচু করেন। কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাজাখালী রোড, পূর্ব বাকলিয়া, ইসমাইল ফয়েজ রোড, আবু জহুর রোড, মিয়া খান নগর মাদ্রাসা রোড, চাঁন মিয়া লেন, বাইদ্দার টেক, ইছহাকের পুল, তক্তার পুল, পাথরঘাটা আশরাফ আলী রোড, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পুরনো ভবনের সামনে এবং আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার নিচু এলাকা। ইছাহাকের পুল এলাকার বাসিন্দা জহুরুল আলম বলেন, বৃষ্টি নাই তবু শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতে আমার ঘরে হাঁটু সমান পানি। বৃষ্টি হলে কি হতো জানি না। চাক্তাই খালের কয়েক জায়গায় দেখলাম বাঁধ দিয়েছে সরকার। এ কারণে ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারছে না। মিয়াখান নগর এলাকার বাসিন্দা মোহছেনা আক্তার বলেন, হঠাৎ বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় রান্না করতে পারিনি। আগে কখনো আমার বাসায় জোয়ারের পানি ঢোকেনি।
অন্যদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জোয়ারের পানির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান মিলেনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জনপ্রতিনিধিদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে, যাতে জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়। এর মধ্যে আবার সিডিএর স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজও চলছে ধীরগতিতে। এছাড়া চাক্তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের জায়গা পুনরুদ্ধার করা এবং কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য এই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছে। এখানে এক সময় দেশের শীর্ষ নামকরা কোম্পানির হেড অফিস ছিল। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের অনেক বাজার পাহাড়তলী এলাকায় চলে যাচ্ছে। ব্যবসা কমে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আকাশে রোদ থাকার পরেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। এতে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চালসহ নানা ধরণের ভোগ্যপণ্য পানিতে নষ্ট হচ্ছে।
অপরদিকে আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বাসিন্দা নাইমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হঠাৎ জোয়ারের পানি সড়ক তলিয়ে যাওয়া এটি অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। বছরের পর বছর এই সমস্যা চলছে। অথচ সমাধান মিলছে না। কয়েকটা জায়গায় সড়ক উচু করা হলেও নিচু এলাকায় ঠিকই জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানির প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু সড়ক উঁচু করলে নগরবাসী দুর্ভোগ লাঘব হবে না।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে জানান, পূর্ণিমার কারণে স্বাভাবিক সময়ের জোয়ারের পানির উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল কর্ণফুলী নদীতে দ্বিতীয় ভাটা শুরু হয় দুপুর ২টা ৩৩ মিনিটে। এ সময় পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৩৮ মিটার। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ২টা ১৮ মিনিটে প্রথম ভাটা শুরু হয়। তখন পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৮৬ মিটার। গতকাল সকাল ৮ টা ৫৮ মিনিটে প্রথম জোয়ার শুরু হয়। দ্বিতীয় জোয়ার শুরু হয় গতকাল রাত ৯ টা ৩৭ মিনিটে। আজ চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল (আজ) একই ধরণের তাপমাত্রা থাকবে।