করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে এক-চতুর্থাংশ ভোটারও ভোট দেননি। বুধবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় জানানো হয়, এবার ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫৩ শতাংশ; এর দেড় দশক পর ভোটের হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। এবারের ভোটার খরার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করোনাভাইরাস মহামারী এবং বিএনপির মাঠে না থাকাকে দায়ী করছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, ভোটারদের কেন্দ্রেই যেতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। খবর বিডিনিউজের।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ‘তুলনামূলক কম উপস্থিতির’ কথা স্বীকার করলেও ভোটারদের অনীহায় ‘উন্নত দেশের’ লক্ষণ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন ইসি সচিব মো. আলমগীর।
২০০৫ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার। সেবার ভোট দিয়েছিল ৬ লাখ ১০ হাজারের বেশি। ভোটের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১০ সালের ১৭ জুন পরের নির্বাচনে ভোটের হার সামান্য বেড়ে হয় ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪৭ শতাংশ।
এবার চট্টগ্রামে পুরো ভোটই নেওয়া হয়েছে ইভিএমে। আর তাতে ভোট দেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জনের মধ্যে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ জন। মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী একাই পান ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
এদিকে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘টার্নআউট কম হওয়ার প্রধান কারণ করোনা। দ্বিতীয়ত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও শেষের দিকে তারা হাল ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে ছিল।’
এদিকে বুধবার ভোট শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় স্বীকার করেন, ভোটের হার তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তারপরও ভালো নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা আমাদের তৃতীয় বিশ্বের মতো দেশে এ ধরনের নির্বাচনে কিছু ঘটনা ঘটে। সে হিসাবে আমি বলব, বরঞ্চ কমই হয়েছে।’
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘উন্নতবিশ্বে বেশিরভাগ দেশে ভোটের ক্ষেত্রে এমন হয়। আমেরিকার ক্ষেত্রে দেখবেন ভোট দিতে যায় না বেশিরভাগ মানুষ। তো আমাদের দেশেও অনেকটা ওই রকম; উন্নত হওয়ার সাথে সাথে এ লক্ষণ দেখা দিয়েছে।’
তবে চট্টগ্রামে ভোটার উপস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এত অল্পসংখ্যক ভোট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হতে পারে না।’