গ্যাস লাইনে আগে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে লিকেজ। কিন্তু বিষয়টি জানেন না ব্যবহারকারীরা। বিগত সময়ে গ্যাসের রাইজার কিংবা লিকেজ হওয়া পাইপ বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণঘাতি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর অলিগলিতে রয়েছে এই ধরনের শত শত লিকেজ। যেগুলো সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন না কেউ। এধরনের শত শত ‘অদৃশ্য মরণফাঁদ’ চিহ্নিত করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলট প্রজেক্টের আওতায় ইতোমধ্যে ১৫৭ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে ২১৭টি সুনির্দিষ্ট লিকেজ চিহ্নিত করেছে পাইলট প্রকল্পটিতে ব্যবহৃত ‘মোবাইল গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর’ নামের বিশেষায়িত গাড়ি। প্রকল্পের আওতায় ৮৪০ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে গ্যাস পাইপলাইন ও রাইজারের লিকেজ চিহ্নিত করবে যন্ত্রটি। তবে দৈনিক ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও বিগত একমাসে দেড়শ কিলোমিটার সড়কে কাজ শেষ করতে পেরেছে ডিটেক্টর বহনকারী গাড়িটি। লিকেজ শনাক্ত করার কাজটি সাধারণ মানুষের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও প্রকল্পের তথ্য দেয়া নিয়ে লুকোচুরি শুরু করেছে চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলতে তাঁর দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাতের সুযোগ মিলেনি। প্রতিষ্ঠানটির কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জিকম ইক্যুপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি বিশেষায়িত গাড়িতে স্থাপিত মোবাইল গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে কেজিডিসিএলের গ্যাস পাইপলাইন ও রাইজারের লিকেজ চিহ্নিত করার জরিপ চলছে। প্রায় ৪ মাস আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে কেজিডিসিএল। ২ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩০ জানুয়ারি চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। জানা গেছে, বিশেষায়িত গাড়িটি একটি সড়ক দিয়ে চলার সময় দুই পাশের অন্তত ৬০ ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা গ্যাস লাইনের অদৃশ্য লিকেজ চিহ্নিত করবে। পাইপলাইন কিংবা রাইজারে গ্যাস লিকেজের তথ্য মেশিনের মনিটরে ধরা পড়বে।
সূত্র জানায়, গত ১ মার্চ পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে মোবাইল গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টরবাহী গাড়িটি। যন্ত্রটি ৫৫২টি সম্ভাব্য লিকেজ সনাক্ত করে। এরপর ওই মেশিনে চিহ্নিত স্থানে “মাইক্রো পোর্টেবল ডিটেক্টর” দিয়ে সুস্পষ্ট লিক পয়েন্ট চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২১৭টি সুস্পষ্ট লিকেজ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব লিকেজ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের চিঠিও দেয়া হয়েছে। শুরুর দিকে চিহ্নিত প্রায় অর্ধশত সুস্পষ্ট লিকেজ ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে।
এবিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি জিকম ইক্যুপম্যান্ট লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী মো. ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘পাইলট প্রকল্পটি শুরু হলেও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়া পর্যন্ত কোন তথ্য গণমাধ্যমে দেয়ার ক্ষেত্রে কর্ণফুলী গ্যাসের বারণ রয়েছে।’
এব্যাপারে জানতে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মুহাম্মদ রইস উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মোবাইল গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর দিয়ে লিকেজ চিহ্নিত করার কাজটি আমি দেখছি না। এটি সারওয়ার সাহেব দেখছেন।’ পরে মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রভঞ্জন বিশ্বাসের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাস নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করছে। তন্মধ্যে কর্ণফুলী গ্যাসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। আইয়ুব খান চৌধুরী বর্তমানে পেট্রোবাংলার পরিচালক। যে কারণে অনিয়ম ঢাকতে এবং সমালোচনার ভয়ে ইতিবাচক বিষয় নিয়েও কেউ কথা বলতে চান না।’