দেশ হতে দেশান্তরে

সেলিম সোলায়মান | রবিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বাজেট প্ল্যানিংয়ের নিজ ডিপার্টমেন্টের সেরের উপর সোয়া সেরের মতো চেপে বসা, স্ট্রাটেজি ডিপার্টমেন্টের বহুজাতিক টিমের কাজ, তাদের সাথে সার্বক্ষণিক থেকে তিন দিনে শেষ করতে পেরে, ভেবেছিলাম একটু বুঝি দম নিতে পারবো। কিন্তু হায়! দেখলাম সে বড়ই দুরাশা।

কারণ এর পরপরই পড়েছিলাম, সিএফও আমিন ইব্রাহিমের পাকিস্তান থেকে নব্য আমদানিকৃত ফারুক আব্বাস বিরচিত মরীচিকার ঘোরে। নিজ দক্ষতার উপর যে কারোই আত্মবিশ্বাস থাকা ভাল ও জরুরী। কিন্তু তা নিয়ে যদিবা তৈরি হয় কারো ইংরেজিতে যাকে বলে কমপ্লাসেন্সি বা আত্মতুষ্টি, সেটি যে আখেরে শুধুই ঐ বান্দার জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে, তা নয়। বরং সেই দুর্ভোগের পাকে যে পড়তে পারে সংশ্লিষ্ট নানানজন, তারই জাজ্বল্যমান প্রমাণ হিসেবে, এরপর আরো তিনদিন খাটলাম বেহুদা গাধাখাটনি। এমনিতে কাজের যতোই চাপ আসুক, কখনোই তাতে তেমন আপত্তি না থাকলেও, তুমুল আপত্তি আছে বেহুদা গাধাখাটনিতে। অথচ জুটলো ললাটে তাই!

ঘটনা হচ্ছে নিজের কাজ শেষ না করেই ফারুক সেদিন আমার সাথে ‘প্লান বি’ বিষয়ক বোলচাল মারার সময়, বস আমিনের তাড়া খেয়ে, তড়িঘড়ি করে সে রাতেই হাতের কাজ শেষ করে, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো, পাঠিয়ে দিয়েছিল সেটি যে সে ফিল বরাবর আমিনকে কপিতে রেখে, জানতাম না তা আমি।

পরদিন সকালে বেশ খোলতাই মেজাজে অফিসে পৌঁছুতেই, সময়ের আগেই বাজেটের ফিনান্সিয়াল মডেলের জটিল কাজটি এতো দ্রুত হাতে পেয়ে মহাআনন্দিত ফিল ডেকেছিল আমাকে ও আমিনকে, তার অফিসে। হ্যাঁ, ফারুকের এহেন ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়ার প্রবণতাকে আমিন কী ভাবে নিয়েছিল জানি না, তবে অবশ্যই ভাল ঠেকেনি মোটেও আমার কাছে তা। কারণ, বিজনেস প্লানিং ম্যানেজার নামের ঐ পদটির কাজই হল, মার্কেটিং ও ফিনান্সের মধ্যে সেতু নির্মাণের। তা তো ফারুক করেইনি বরং করেছে মার্কেটিংকে উপেক্ষাই। এমনকি হাতের কাজ শেষে নিজ বসের সাথেও সেটি ঠিক আছে কী না তা চেক করারও প্রয়োজন বোধ করেনি। বেশ অবাক হয়ে ও বিরক্তি নিয়েই বসেছিলাম বসের ডাকা ত্রিপাক্ষিক ঐ মিটিংএ তাই।

৯০এর দশক থেকে বিশ্বের অফিসে অফিসে কম্পিউটার যুগ শুরু হওয়ার পর, দিনে দিনে এই টেকনলজির শনৈ শনৈ যে উন্নতি ঘটেছে, তাতে আগেকার তুলনায় আজ ২০০৯ সালে বাজেট প্লানিংয়ের কাজ, অবশ্যই হয়েছে অনেক সহজ। যে কোন ধরনের ফিনান্সিয়াল মডেল বা সংখ্যাভিত্তিক ফাইলকে এখন খুব সহজেই মাউসের দু চার ক্লিকেই গ্রাফ হিসাবে চাক্ষুস করা যায়, নানান পারস্পেক্টিভ থেকে। দেখছিলাম তা ই আমরা ঐ তাৎক্ষনিক মিটিঙয়ে, অফিসের দেয়ালজোড়া স্ক্রিনে চোখ রেখে। এতে শুরুর দিকের দু তিনটা গ্রাফ ঠিক মনে হলেও, তারপরের গ্রাফগুলোতেই লেগেছিল খটকা মনে!

ভাবছিলাম, আরে এতো ভাল হয় কিভাবে বর্তমান বছরের শেষটা এবং গোটা আগামী বছর; দেখছি যেমন গ্রাফে? নাহ এ তো ভাল তো, ভাল নয়! আমার টিম এবং বাদাওয়ির টিমের কাজ একাট্টা করে যে রকম চিত্র দাঁড়িয়েছিল নিজ মগজে এরই মধ্যে, তাতে এই বছরের শেষটা যেমন উজ্জ্বল দেখাচ্ছে গ্রাফে, তা যেমন ঠিক মনে হচ্ছে না, তেমনি আগামী বছরও যে রকম মসৃণ ও সোনালি দেখাচ্ছে গ্রাফ, ঠেকছে তাও অস্বাভাবিক! বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছি আমরা অপারেশনে, তাতে নানান সময়ে নানান আকারের যে হোঁচট খাওয়ার কথা। তা তো দেখাচ্ছে না গ্রাফগুলো!

সেই স্কুলে পড়ার সময়, মরুতে পথ হারানো তৃষ্ণার্ত পথিকের মরীচিকা বিভ্রমে পরার কথা পড়েছিলাম। বিজ্ঞান বইয়ে মরীচিকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও পড়েছিলাম সে সময়। তারপর গত প্রায় মাস পাঁচেক মরুতে থাকলেও, মরীচিকা দেখার অভিজ্ঞতা তো হয়নি। অথচ আজ কী না অফিসের দেয়ালে ফুটে উঠা গ্রাফে গ্রাফে দেখছি মরীচিকা!

সৌদিতে পা রাখার পর থেকে নিরন্তর, এই মার্কেট ও আমাদের অপারেশনের নানান খুটিনাটি ডাটা, তথ্য, তুমুল মনোযোগে প্রচুর ঘাটাঘাটি করার কারনে, হয়েছে যা আত্মস্থ চেতনে অবচেতনে, সেই অভিজ্ঞান আমার বলছে, ফিনান্সিয়াল মডেল থেকে উৎসারিত গ্রাফগুলো যা দেখছি, তুমুল মরীচিকার আছড় আছে সেগুলোর অনেক গুলোতেই। সমস্যা হল আমি যে সবকে ভাবছি মরীচিকা, বাকী দুজনের কী তা মনে হচ্ছে? কেউই তো কিছু বলছে না। তাহলে শুধু কী এ শর্মাই হয়েছি মরীচিকাক্রান্ত!

বাকী দুজন নির্বাক বলে কি নিজের এই খটকাকে গলা টিপে মেরে ফেলবো? নাহ, তা তো ঠিক না। কারণ যদি আমার মরীচিকা দেখাই ঠিক হয়, তবে তো গোটা প্রতিষ্ঠানই ভুগবে আগামী বছর সেই দুর্ভোগে পড়েছিল যাতে বাংলাদেশ অপারেশন কয়েক বছর আগে; নিজেকে অতি কাবিল মনে করা আরেক সবজান্তা বিজনেস প্লানিং ম্যানেজারের কারনে!

এ মনে হতেই মনের সেই খচখচানিটি অবশেষে মৃদুকণ্ঠে প্রকাশ করতেই মিলেছিল, মৃদু সায় বস ফিলের। তাতে নিজে বেশ খুশি হলেও, তুমুল বিরক্ত ও বিব্রত হয়েছিল আমিন। ব্যাপারটিকে সে নিয়েছিল এমনভাবে যে, আমি যেন বা বেহুদা বসের সামনে তার ডিপার্টমেন্টের দোষ তুলে ধরছি। তাতে থমকেও গিয়েছিলাম আমি।

কিন্তু হয়নি শেষ রক্ষা তাতেও। কারণ যতোই গভীরে যাচ্ছিলাম ঐ ফাইলের, পড়ছিল চোখে মধুর বারাবারি রকমের ছড়াছড়ি, তাতে। বাড়ছিল তাতে বসেরও খটকা। তারপরও চুপচাপই ছিলাম তিনজন। কিন্তু যেই না প্রডাক্টিভিটি ও প্রফিটিবিলিটি বিষয়ক গ্রাফ আসতে শুরু করলো, মরীচিকা দেখতে পেলো আমিনও। এভাবে একে একে তিনজনেরই মরীচিকা দর্শন হওয়াতে, মেনে নিয়েছিলাম সকলে যে যেতে হবে আব্বাস বিরচিত ফাইলের প্রতিটি সাংখ্যা মেরামত করতে হবে। ফলাফল? গ্রাফদর্শনের সে সভা ভেঙ্গে গিয়েছিল, নিমিষেই!

আজ এ কথা কারোই অজানা নয় য়ে, ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে চৌকশ ব্যাটসম্যানটিও, খেলার মাঠ বদলের সাথে সাথে, সে যেমন নতুন মাঠে প্র্যাকটিস করে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার সাথে বদলায় ব্যাটিং টেক্টিসও, যাতে মূল খেলার দিন না ঘটে কোন অঘটন; এক্ষেত্রে তুমুল আত্মতুষ্টিপুষ্ট ফারুক, মাঠ যে বদলেছে তার এটি মনে হচ্ছে পাত্তাই দেয়নি। পাকিস্তান বা বাংলাদেশের ঔষধের মার্কেটতো অবশ্যই, এমনকি গোটা স্বাস্থ্যসেবার খাঁটি হলো অনেকটাই একরৈখিক ও সোজাসাপ্টা। এখানে স্বাস্থ্যসেবার ৯৫ ভাগই হল, যাকে কেতাবি ভাষায় বলে “আউট অব পকেট মার্কেট”। মানে এই দু দেশে কেউ অসুস্থ হলে, ডাক্তার দেখানো, ডায়াগনস্টিক টেস্ট করানো, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, ঔষধ কেনা, ইত্যাদি প্রতিটি ধাপেই রোগী বা রোগীর অভিভাবককে ঢালতে হয় নিজ পকেটের কড়কড়ে কড়ি। পকেটের জোর না থাকলে করতে হয় ধারদেনা; চাইতে হয় এমন কি আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের সাহায্যও।

এর বিপরীতে সৌদি স্বাস্থ্যখাত অতো সোজাসাপটা একরৈখিক না। এখানে সামগ্রিক ঔষধের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগে আছে সরকারের আওতায়। তার একটা অংশ নিয়ন্ত্রন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রুগিদের মুফতে ঔষধ দেবার জন্য কেনাকাটা করে তারা, ন্যাশানাল টেন্ডারের মাধ্যমে। বাকী কেনাকাটা করে নানান হাসপাতালের নিজস্ব স্থানীয় টেন্ডারে। আবার ন্যাশানাল গার্ড থেকে শুরু করে নানান সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আলাদা ও অতীব স্বাস্থ্যবান বাজেট। যেটির একাংশ নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমলারা। অন্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ও ডাক্তাররা। তদুপরি জি সি সি মানে গালফ কোওপারেশন কাউন্সিলের সদস্যদেশ আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, কাতার এই দেশগুলো একাট্টা হয়ে বড় আকারের টেন্ডারের ডেকে প্রতিবছর ঔষধ কিনে, নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেও নেয়।

এ তো গেল এই মার্কেটের সরকারি অংশের কথা। এর বাইরের আছে বেসরকারি যে ৫০ ভাগ মার্কেট, সেটিত প্রথমে আছে ৫ তারকা সাত তারকা মার্কা অভিজাত হাসপাতালের কেনাকাটা, যার বড় অংশ ডাক্তার ফার্মাসিস্টরা নিয়ন্ত্রণ করলেও, বাকীটা নিয়ন্ত্রণ করে ইন্সুরেন্স কোম্পানি। তারপর আসে মাঝারি মানের হাসপাতালগুলো, কেনাকাটা যেগুলোর চলে আবার ভিন্ন তরিকায় ও মাতব্বরিতে। এর পরের স্তরে আছে পলিক্লিনিক নামের আরেক মার্কেট, যেখান থেকে চিকিৎসা নেয় সৌদিতে বসবাসরত কোটিখানেক প্রবাসির সিংহভাগ। সবশেষে আছে ৩০০/৪০০ আউটলেট সমৃদ্ধ আল নাহদি, আল দাওয়া নামের বিশাল ফার্মেসি চেইন।

হ্যাঁ সৌদিস্বাস্থ্যখাত যে রূপকথার দৈত্যের প্রাণভোমরার মতো, দীঘির গভীর জলে ডুবে থাকা বড় সিন্দুকের মধ্যে বাক্স, তার মধ্যে ছোট বাক্স, তারপর আরো ছোটবাক্স এমন করতে করতে গিয়ে এক্কেবারে ছোট কৌটার মধ্যেও থাকে, পেশাগত জীবনের বেশীরভাগ সময় বাংলাদেশের মতো একরৈখিক মার্কেটে কাজ করায়, এই মার্কেটের জটিল এসব গ্রন্থি খুলতে লেগেছিল আমারও ঝাড়া ২ মাস। এ সময়ে প্রতিটি ব্র্যান্ডপ্লান পড়েও বুঝিনি তা, পুরোপুরি। কারণ প্রায় সকলেই প্লান করেছে কুয়ার ব্যাঙের চোখে। মানে তার ব্রান্ডের প্রাণভোমরা, মার্কেটের যে বাক্সে আছে ,সেটির বাইরে সে চোখ ফেলেনি। ফলে সময়ে সময় দশদিকে নানান প্রশ্ন করে করে, বের করতে হয়েছে, মার্কেটের চেহারাটি। আবার গল্পের দৈত্যের প্রাণভোমরা একদমই শেষের ছোট কৌটাটিতে থাকলেও, এখানকার প্রতিটি বাক্স আর কৌটাতেই আছে সেলস নামের ভোমরার নানান অংশ। তদপুরি গল্পের কৌটাগুলো একইভাবে খোলা গেলেও এখানকার বিশাল সিন্দুক থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে যে বাক্স আর কৌটাগুলো আছে, সেগুলোর চাবি কিন্তু এক না। খোলা যায় না তা এক নিয়মেও।

যেমন, কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ও মৃগি রোগীদের জন্য যে ঔষধ আছে আমাদের সেগুলোর যথাক্রমে ৭০ ও ৯০ ভাগই কেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয়ভাবে টেন্ডারে। কিন্তু ব্যাথা বেদনার যে ঔষধ আছে আমাদের, সেটির ট্যাবলেটের ৮০ ভাগই বিক্রি হয় ফার্মেসি চেইনে ; অথচ সেটিরই ইনজেকশনের ৭০ ভাগ বিক্রি হয় পলিক্লিনিকে। হৃদরোগের বিশ্বজয়ী ঔষধটির ৫০ ভাগই বিক্রি হয় বড় ও মাঝারি বেসরকারি হাসপাতালে, বাকীটা সামরিক হাসপাতালে। যার মানে হচ্ছে এই যে নানান চ্যানেল বা কৌটা, তার কোনটার চাবি হল বিজ্ঞান, কোনটার চাবি কমার্স। টেন্ডারকর্তারা বিজ্ঞানকে মোটেও কেয়ার করে না। শ্যেনদৃষ্টি তাদের কমদামের উপর। ফলে একই ঔষধ একাধিক চ্যানেলে বিক্রি করতে গিয়ে, দিতে হয় বিজ্ঞান ও কমাসের্র ভিন্ন ভিন্ন বটিকা। যা কোম্পানির লাভক্ষতির উপর প্রভাবও ফেলে ভিন্নভিন্ন রকম!

এমতাবস্থায় ফারুক ২০/২৫ দিন আগে এসেই, এই জটিলতার সবই বুঝে গেছে, এমন আত্মতৃপ্তি নিয়ে কাজ করাতেই হয়েছে ঝামেলা। দরকার ছিল তার প্রতিটি প্রডাক্ট ম্যানেজারের সাথে কথা বলে, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের ইনপুট দেয়া। তা না করে সে নিজে নিজেই একটা পাটিগনিতীয় ফর্মুলা দিয়ে কাজ করাতেই ঘটেছে এই বিশাল ভজঘট! ঠিক করতে যা উকুন বাছার মতো আমিন ও আমাকে ঐ ফাইলের শত হাজার সেলে সেলে সাঁতার কেটে কেটে ঠিক করাতে হবে প্রতিটি সেল, ফারুককে দিয়েই। করেছিও তা সেই মঙ্গলবার থেকে শুরু করে গতকাল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অফিসে একটানা থেকে তিনজনে গাধাখাটনি খেটে। এভাবে ঐ গুরত্বপুর্ন কাজটির কেঁচেগণ্ডূষ করার পরও, হতে পারছি না নিশ্চিত, এখনো শতভাগ। আবার একটানা একসাথে কাজ করতে গিয়ে সেই শুরুতে জমেছিল যে বরফ আমিন ও আমার মাঝে, তার অনেকটাই গলে গেলেও পুরোপুরি গলেনি তা।

হ্যাঁ ঐ কেঁচেগণ্ডূষ অভিযানে বুঝেছিল আমিন যে, ফারুককে একাকী কাজ করার জন্য ছেড়ে দেয়া তার ঠিক হয়নি। এক পরিস্থিতিতে কোন কর্মী হোক সে যতোই দক্ষ, নতুন বা পরিবর্তিত পরিস্থিতির কাজের জন্য নেতা তাকে এরকম অপার স্বাধীনতা দিলে, এরকম বিপর্যয় ঘটাই স্বাভাবিক। তারপরও মানুষের নিজ দোষ স্বীকার করার অপারগতার সূত্র মেনে আমিন, বেশ উষ্মায় বলেছিল আমাকে, আমি কেন ঐ ভুলটা ঐভাবে ফিলের সামনে বলার বদলে আলাদা করে বলিনি, তাকে চুপে? উত্তরে যতোই বোঝাতে চেষ্টা করেছি প্রথমত আমি যদি তা আগে নিজে দেখতাম, তবে তো সরাসরি তাকেই বলতাম। কিন্তু দেখেছিলামই তো সেটা আমি প্রথম ফিলের রুমে বসেই।

এ তো ছিল আমার যুক্তির কথা। কিন্তু সম্পর্ক জোড়া লাগার আঠা তো হল আবেগ। ফলে আমার ঐ যুক্তি মনে হচ্ছে, বেঘোরে ধাক্কা খেয়েছে আমিনের জমে যাওয়া আবেগের শক্তবর্মে। বুঝতে পারছি না তাই, আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাওয়ার জন্য, আর সব শুক্রবারের মতো আসবে কি না সে তুলতে আমাকে।অবশ্য এখনো সে সময় হয়নি। তবে একদম শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে আর বিশ মিনিটের মধ্যে যদি আমিন ফোন না করে, তবে আমিই চলে যাবো তার বাসায়। কারণ খুব ভাল মানুষ আমিন, এ মরুতে আমার পছন্দের যে দু তিনজন আছে তাদের অন্যতম।

লেখক : প্রাবন্ধিক, ভ্রমণ সাহিত্যিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবীণদের সুরক্ষায় নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
পরবর্তী নিবন্ধঅসুখের সময় শিশুকে কীভাবে খাওয়াতে হবে