এইমাত্রই ভাঙলো ঘুম। পাশটেবিল থেকে হাতে নতুন আসা ব্ল্যাকবেরি নিয়ে দেখি বাজছে ২ টা ১০। প্রথমে একটু ধাঁ ধাঁ লাগলেও, পরক্ষণেই ডানের দেয়ালজোড়া জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে বাইরের দুপুরের গনগনে রোদের ঝলক চোখ ধাঁধিয়ে দিতেই মনে পড়লো, আরে এ তো রাত নয় বরং ঘোরতর মরুদুপুর!
আসলে এ ছিল আজকের ছুটির দিনের অপরিকল্পিত দ্বিতীয় রাউন্ডের ঘুম। প্রথম রাউন্ডে মানে গত রাতের সাড়ে বারোটার দিকে ঘুমানোর তোড়জোর করে বিছানায় শুয়ে পড়লেও, বারবারই বাগড়া দিচ্ছিল, ঐ ব্ল্যাকবেরি। কর্পোরেট জগতের স্ট্যাটাস সিম্বল এই ব্ল্যাকবেরি পেয়ে মনে বেশ একটা ভাব ভাব ভাবের উদয় হলেও, এর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হয়েছে আগের দু রাতও। হচ্ছে এরকম কারণ এই ব্ল্যাকবেরির সুবাদে ঘুরছে অফিস সার্বক্ষণিকভাবে সাথে সাথেই, যেহেতু সংযুক্ত ঐটি অফিসের মেইল সার্ভারের সাথে। সারাক্ষণই আসে মেইল তাতে, নানান টাইমজোন থেকে। আর মেইল আসলেই তা টুং করে মনোযোগ আকর্ষণ করে।
এ নিয়ে সমস্যায় পড়েছি দু কারণে। প্রথমত সময়ের অভাবে নতুন ঐ সেটের নানান ফিচার তো দেখে শিখে বুঝে উঠতে পারিনি, তাই নিঃসীম রাতে যখনই মেইলের ঐ টুং আওয়াজ কান হয়ে মাথায় ঢুকছিল বিপুল বিক্রমে ঢং করে বেজে উঠা পাগলাঘণ্টির মতো, বেজে যাচ্ছিল ঘুমের বারোটা তাতে। প্রথম দু দিন ত্যক্তবিরক্ত হয়ে ওটির কণ্ঠ একদম রোধ করে, মানে ওইটিকে পুরো বন্ধ করে ঘুমানো চেষ্টা করেছি।
দ্বিতীয় সমস্যায় পড়েছিলাম সেই মহা ফাঁকিবাজ ও ধড়িবাজ টিম মেম্বার আফিফির কারণে। বুধবার রাত বারোটার পর থেকে দেখছিলাম কিছুক্ষণ পর পর সে নানানজনকে মেইল করছে, আমাকে কপিতে রেখে! পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম যে, সে তার মিশ্রী কায়দায় আমাকে বোঝাতে চাচ্ছে তুমুল কাজের চাপে আছে। সে রাতে ঐ যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়ে ভেবেছিলাম, তারপর দিন, মানে গতকালকের দিনের বেলায় ফোন করে বলবো, রাতেবিরাতে দেওয়া তার মেইলের পর মেইলে অন্যে যাই মনে করুক, আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, সে আসলে মোটেও গোছানো না। প্রায়োরিটাইজেশনে ঝামেলা আছে তার। কিন্তু সুস্থির হবার পর মনে হয়েছিল, নাহ এ কথা বলতে হবে সামনাসামনি বসে কাউন্সেলিং ঢঙ্গে। ফলে ফোন আর করিনি।
এতে গতরাতেও যখন একই ঘটনা ঘটতে শুরু করতেই ভেবেছিলাম, আগের দু রাতের মতোই ফোনের একদম কণ্ঠ রোধ করে রাখি। সাথে সাথেই মনে হয়েছিল আছি তো, নিজ পরিবার থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। এই রাতে বিরাতে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে দেশে, বিশেষত ঘরে আছেন যখন অসুস্থ আব্বা, তাতে তো প্রয়োজনে ফোন করেও পাবে না আমার নাগাল, তারা। অতএব ঐ ভাবনা বাতিল করে, বিছানা ছেড়ে উঠে ব্ল্যাকবেরির ব্যবহারবিধির বিরাট পুস্তিকা ঘেঁটে ঘেঁটে, ঐটিতে মেইল আসলে শুধু সেটির কণ্ঠরোধ করার ব্যবস্থা করে, ফের বিছানায় পিঠ লাগাতে লাগাতে পেরিয়ে গিয়েছিল ৪০/৪৫ মিনিট। ফলাফল? সেই আসি আসি করা ঘুমটি অবশেষে গিয়েছিল চটে। অতপর বোধকরি একদম ভোরের দিকে ঘুম এলোই যখন, পড়েছিলাম স্বপ্নের পাল্লায়। যাতে দেখছিলাম আছি আমি ঢাকার বাসায় শিশু পুত্রদ্বয়ের সাথে মহানন্দে, এক বিকেলে। আর আমার সাথে খেলতে খেলতে দীপ্র অভ্র ধরেছে বায়না, তাদেরকে বাইরে যাবার। ওদের প্রস্তাবে সানন্দে রাজী হয়ে বের হবার উদ্যোগ নিতেই দেখি, বেরুচ্ছি সিংগাপুরের ইস্টকোস্টের আমার সেই এপার্টমেন্ট থেকে যেটির চারদিকে বেশ কয়টা মাঠ ও পার্কে বাচ্চাদের জন্য মজার মজার কিছু রাইড ছিল। কিন্তু যেই না তাদের নিয়ে এলাম বাইরে, আবিষ্কার করলাম আছি বিকেলের মরুরোদের গনগনে উত্তাপের নিচে, রিয়াদের ঐ কমপাউন্ডের সামনে, গিয়েছিলাম যেখানে গিউসির সাথে বাসা ফাইনাল করার জন্য। তাতে মরুসূর্যের তেজ থেকে ছেলেদের বাঁচানোর তড়িঘড়ি তাগিদে গিয়েছিল ভেঙে ঘুম অবশেষে!
এদিকে ঘুমের সাথে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ ভাসছিল কানে শিশুপুত্রদের আনন্দ, আবদার, জেদ ও শিশুসুলভ কঠিন সব প্রশ্নের কালকাকলি। ওসব থেমে যেতেই, মন খারাপ হয়েছিল তুমুল এই ভেবে যে, হায়! নিজের পেশাগত সফলতার তুমুল লোভের খাঁড়ার নিচেই কী না দিলাম বলি আমি, শিশুপুত্রদের সাথে কাটানোর জীবনের হিরণ্ময় সুযোগ!
এরপর সম্বিৎ ফিরতেই মনে হয়েছিল, আরে এ তো ছিল ত্রিকাল মেলানো একটি ত্রিদেশীয় স্বপ্ন! তাতে অতীত ও বর্তমান বাদ দিলে, ভবিষ্যৎ নিয়ে যা দেখলাম তার মানে তো দাঁড়ায় গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল অবস্থা হয়েছে আমার। গিউসির সাথে বেরিয়ে সেদিন, মরুনদী বা মরুভূমি না দেখা হলেও বাড়ি কিন্তু আমার ঠিক করা হয়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কবে যে পাবো ইকামা, আর কবেই বা যে আনতে পারবো এখানে দারাপুত্রপরিবার, নাই তো তার ঠিক ঠিকানা!
হ্যাঁ সেদিন ক্যান্টনমেন্টিয় তিনস্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে, সেই কমপাউন্ডের সৌদি ম্যানেজার সাইফ বিন আলহামজার অফিসে যে ঘণ্টা দেড় দুইয়ের আড্ডা জমেছিল আমাদের তিনজনের, তাতে মাঝে একটু খটকা বাঁধলেও, শেষ পর্যন্ত উনি রাজীই হয়েছিলেন বাংলাদেশী আমাকে ঐখানে স্থান দেবার। এতে ফেরার পথে গিউসি গাড়ি চালাতে চালাতে বিজয়ী সেকান্দর মানে আলেকজেন্ডার ঢঙ্গে বলেছিল ,
‘দেখলে, বলেছিলাম না তোমার সাথে সরাসরি কথা বলার পর আর মানা করতে পারবে না এরা? তাইতো হলো। যাক একটা বিরাট ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল।’
গিউসির কথার উত্তরে মুচকি হেসে মনে মনে ভাবছিলাম সেসময় আমি, বস ফিলের একটা কথা, বলেছিল সে যা এবার আসার পর সপ্তাহখানেকের মাথায়। সেদিন কী একটা কারণে ফিলের রুমে যাওয়ার পর দুজনে সিগারেট টানছিলাম যখন,বলেছিল ফিল তখন
‘সেলিম শোনো, তোমাকে একটা টিপস দিচ্ছি। কথা হচ্ছে তুমিতো একদম খাঁটি ব্রিটিশ এঙসেন্টে ইংরেজি বল, আর বলো তা অতি দ্রুত!’
এটুকু কানে যেতেই ভির্মি খেয়ে সেদিন ভাবতে শুরু করেছিলাম, শৈশবে কুমিল্লার গণ্ডগ্রাম দৈয়ারার ঝংধরা টিনের স্থানে স্থানে ভেঙে যাওয়া চালের নিচে এখানে ওখানে গর্তসম্বলিত মাটির দেয়ালঘেরা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের পাঠ চুকিয়ে, নিজেদের এলাকায় আব্বাসহ অন্যান্য মুরুব্বিদের উদ্যোগে গঠিত জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জুনিয়ার হাই স্কুলের মতো অখ্যাত স্কুলে পড়া, এ আমি কী শুনছি তবে আজ, এই মরুর এই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে? ধারণা তো ছিল আমার, বলি ইংরেজি আমি অতিব কায়ক্লেশে। এরকম ধাঁ ধাঁয় পড়ে সিগারেট টানার জন্য সে সময় মুখের কাছে তা তুলেও থেমে গিয়ছিল হাত ক্ষণকালের জন্য, যা নজর এড়ায়নি ফিলের, জিজ্ঞেস করেছিল তাই
‘কী ব্যাপার? ভাবছ কী?’
মানে ভাবছি, আমাদের এককালের প্রভুদের উত্তরাধিকারী এই তোমার, আমার সাথে করা এটা কোন ধরনের ব্রিটিশ হিউমার ?
“হা হা হা, লাইকড ইউর সারকাজম! ওয়েল জোকস এ–পার্ট, শোন নানান দেশী মানুষের নানা এঙেন্টের ইংরেজিই তো আমি শুনেছি এবং শুনি। নানান এলাকার ব্রিটিশরাও যে কথা বলে নানান এঙসেন্টে তাও শুনেছি, তারপরেও প্রমিত ব্রিটিশ ইংরেজি বলতে যা বোঝায়, তুমি অনেকটাই ঐরকমই বল। এবং বলো তুমি তা, অতি দ্রুত। সমস্যা আছে ওতে। বুঝলে, এই এরাবিয়ানরা হলো বড়ই ভিজ্যুয়াল! কানে যাই শুনুক, মনের কল্পনায় সেটিকে ছবি আকারে চোখের সামনে দেখতে পেলেই, বোঝে তারা বক্তার কথা। শুরুতে আমিও তোমার মতোই দ্রুত কথা বলতাম এখানে। কিন্তু কিছুদিন পরই টের পেয়েছি আমার কথার উত্তরে যতোই তারা ইয়ান্নি, ইয়েস, ওকে, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাল্লাহ বলুক না কেন, আসলে মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝাতে পারিনি। সেই থেকে বলার গতি কমিয়েছি। তোমাকেও তাই করতে হবে।’
ফিলের এই বিস্তারিত জবাবে সেদিন, বাংলায় যাকে বলে স্যারে কইছে শালার ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই, ঐরকম ভাব হলেও আমার, একটু আগে কানে আসা গিউসির কথায় ভাবছিলাম, আচ্ছা আজ কি আমি কম গতিতে কথা বলেছি বলেই, সাইদ বিন আলহামজা যা বলছি তা ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পেরেই রাজী হলো? নাকি এমনিতেই বাংলাদেশী শুনলেই তার চোখে সৌদিতে কাজ করা যে ঝাড়ুদার, টয়লেট ক্লিনার বা উটের রাখালের চেহারা ভেসে উঠে, তার বদলে টাই স্যুট কোট পরা আমাকে দেখে তার মতিভ্রম হয়েছিল? জানি না তা।
‘কী ভাবছো? শোন ভালো কথা, ঐ যে গ্রানাডা কমপাউন্ডে তোমার বাংলো ঠিক হলো ওটা প্রিন্স সালমানের। এখন সৌদিতে প্রিন্স নাইফ, যে নাকি ন্যাশানাল গার্ড ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও প্রধান, সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রিন্স হলেও, শোনা যাচ্ছে এই প্রিন্স সালমান নাকি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। অতএব এটা একটা বাড়তি সুবিধা। আবার আমাদের নতুন সিএফও আমিন ইব্রাহিম, যার সাথে তোমার বেশ ভাব হয়েছে এরই মধ্যে, সেও কিন্তু এই কমপাউন্ডেই থাকে।’
আমার নীরবতায় আশ্বস্ত করে বলেছিল গিউসি।
এভাবে স্থায়ী থাকার জায়গার হিল্লে হয়ে যাওয়াতে আর দুই দিন পরেই শেষ হবে রিয়াদে আমার এই ম্যারিয়ট হোটেল বাসের কাল। সে কারণে যতোই থাকি না কেন হোটেলে, সামান্য হলেও তো গোছগাছের ব্যাপার আছে। আজ কাকডাকা মরুভোরে পুত্রদের নিয়ে দেখা ত্রিকাল ব্যাপি ত্রিদেশীয় স্বপ্নটি ভেঙে যাবার পর আর ঘুম আসছিল না বলে, শুক্রবারের এই ছুটির দিনের বেশ ভোরেই নাস্তা সেরে, সেই গোছগাছের কাজ শেষ করে, বিছানায় পিঠ লাগিয়ে দেশ থেকে আনা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ভাঙল যা একটু আগে। এদিকে অতো ভোরে নাস্তা করায় এখন দেখছি শুরু হয়েছে পেটে ছুঁচোর কেত্তন। নাহ যেতে হবে নিচের রেস্টুরেন্টে তবে এখনই।
খিদের তাড়নায় দ্রুত নামলেও কী হবে? নিচতলার দুই পাশের দুই রেস্টুরেন্টে ঢোকার মুখে পথরোধ করে থাকা আরবিতে লেখা দুটো স্ট্যান্ডে ধাক্কা খেয়ে ফিরতে হয়েছে রিসেপশনে, ঘটনা কী জানার জন্য।
প্রশ্ন শুনে রিসেপশন সামলানো ফিলিপিনো যুবক বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাগালোগ সসে চোবানো ইংলিশে জানালো, কোন এক শেখ নাকি তার পরিবারের জন্য দুটো রেস্টুরেন্টেই গোটা বুক করে রেখেছে। সো নো এন্ট্রি অব এনি বেগানা পুরুষ!
এ কী বলছো? এটা না পাঁচতারা হোটেল। এখানকার রেস্টুরেন্টেতো হোটেলবাসীদের অগ্রাধিকার!
‘স্যার ইউ বেটার গো ব্যাক টু রুম, এন্ড অর্ডার ফর রুম সার্ভিস।’
রাখো তোমার রুমসার্ভিস। পাঁচতারার সম্মান রেখে তোমাদেরতো আগেই জানানো উচিৎ ছিল এটা রুমে রুমে। খেতা পুড়ি তোমার রুম সার্ভিসের।
নাহ মনে থাকা শেষ বাক্যটি, মুখে উচ্চারিত না করেই বেরিয়ে এসেছি হোটেলের বাইরে। গত প্রায় তিনসপ্তাহ এখানে থাকলেও আশপাশ ঘোরা হয়নি। দেখি এখন ঘুরে তবে। কোন রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডশপ পেলেই হবে। রুমে ফিরে রুম সার্ভিসের অর্ডার করলেও শেখের অর্ডারে ব্যস্ত রেস্টুরেন্ট কখন যে খাবার পাঠাবে, তার তো নেই কোনো ঠিক ঠিকানা।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি ম্যারিয়টের পেছন দিকটায়। এক, দুই, তিন, চারতলা যে সব দালান দেখছি এদিকটায়, কোনোটারই খোলা নাই দরজা এই দুপুরে। মরুসূর্যের হল্কার নিচে জনমানবশূন্য এলাকাটিকে আধা–আবাসিক আধা–বাণিজ্যিক মনে হচ্ছে।
তো প্রথম ব্লকটি পেরিয়ে একই চেহারার পরের ব্লকটিতে পা রাখতেই, নাক বরাবর এই এলাকাটির সাথে বেমানান বেশ মলিন, খাল চামড়া উঠে যাওয়া একটা একতলা দালানের খোলা দরজা চোখে পড়তেই ঐটিকে ভাল করে দেখছি যখন, তখনই ডান থেকে মলিন পোশাকের দুইজন, খাস নোয়াখাইল্লা টোনে দুপুরের খাওয়া বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমাকে উপেক্ষা করে ঐদিকে এগুতেই
গতি বাড়িয়ে এলাম নিজেও সেই দরজায়। সাথে সাথেই নাকে এসে লাগলো সেই সুবাস, পেতাম যা বহু আগের শৈশবে, যেতাম যখন মেঘনা পাড়ের আমার নানার বাড়ি আখন্দ বাড়িতে কিম্বা ডাকাতিয়া পার হয়ে যাওয়া বহরদার বাড়িতে।
বহুকাল আগে চাঁদপুরের ঐ দুই রসুইঘরে দিদি মানে দাদি আর নানু যখন ঋতুভেদে আঙ্গিনা থেকে তোলা ঝিঙ্গা বা সিম দিয়ে রান্না করতেন মাছের সুস্বাদু ঝোল, তারই সুবাস এই মরুতে এখন আমার নাকে এসে লাগতেই, বুঝে গেছি এখানেও হয়েছে রান্না সেই রাজভোগের।
এতদিন নানান তারকাখচিত রেস্টুরেন্টে শ দেড়শ রিয়ালে বিজাতীয় খাদ্যে যতোই উদরপূর্তি করে থাকি না কেন, আত্মা ভরেনি তাতে। একমাত্র ব্যতিক্রম প্রথমরাতের জিয়ার বাসার খাওয়া। আহ! খাবো ফের আজ অচিরেই আত্মাভরে, বাংলার ছাপড়া হোটেলের এই রিয়াদ সংস্করণে!
লেখক: কলামিস্ট, ভ্রমণ সাহিত্যিক।