সেই যে বিখ্যাত কবি ওশ, তার মতো কবিখ্যাতি হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না আমার, কারণ আমি তো কোন কালেই কবি ছিলাম না। তারপরও সেই কবির মতোই অবস্থায় পড়তে পড়তে বেঁচে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম অবশেষে! মানে বলছিলাম বিখ্যাত লেখক কিষণ চন্দরের জামগাছ শীর্ষক কালজয়ী গল্পের কবির কথা, যে নাকি ঐ গাছের তলে চাপা পড়ার পর ফাইল চাপা পড়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেছিল। “পাকাজামের মধুর রসে রঙ্গিন করি মুখ” এই কবিতা পড়ার কারনেই হউক, আর টক মিষ্টি জামের ঐ মধুর রসের আকর্ষণেই হউক ছোটবেলা থেকেই জাম ভর্তা খুবই পছন্দের ছিল অধমের। তবে কিষন চন্দরের জামগাছ কাহিনী পড়ার বেশ আগে, সেই ছোটবেলাতেই জামগাছ ভীতি একদম গেঁথে গিয়েছিল মনে এক দুর্ঘটনার কারণে।
সপ্তম শ্রেনিতে পড়ি তখন। তো সেসময় আমাদের স্কুলে নতুন এসে ভর্তি হওয়া আরিফের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল দ্রুত কেন জানি? সেসব দিনগুলোতে এখনকার মতো নানান জাতের দেশী আম, কমলা, কলা বা বিদেশী আপেল, আঙ্গুর, খেজুর, ড্রাগন ফল এসবের এতো বাড়বাড়ন্ত রকমের সমারোহ বাজারে না থাকলেও, জামগাছের কমতি ছিল না আশেপাশে। তদুপরি সে সময়ের কিছুকাল আগে পাকিস্তানি হানাদারদের করে যাওয়া ধংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করা দেশের অর্থনৈতিক দূরবস্থার কারণে, ঘরে ঘরে বাবা মায়েরা সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেবার জন্য গলদঘর্ম হচ্ছিলেন যেহেতু, তাই ফলফলাদি কেনার জমিদারি করার সুযোগ তাদের কমই ছিল। ফলে বালক বালিকা আমরা যেসব ফলফলাদির অল্প স্বল্প যাই হাতে পেতাম তার একটা বড় অংশই পেতাম নানান গাছ থেকে হাতটান করেই, যার মধ্যে জাম ছিল অন্যতম। ওইসময় জ্যৈষ্ঠের এক দুপুরে আরিফকে এলাকার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ঐশ্বর্যের সন্ধান দিতে গিয়ে, নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের বাসস্থান থেকে কিছু দূরের কুমিল্লার দৈয়ারা গ্রামের আমারই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির মাঠে, যেটিতে ছিল বিশালাকায় একটি জামগাছ ।
ভোমা সাইজের টসটসে পাকা জামের লোভে আশপাশের দশ গ্রামের বালকেরা কিশোরেরা এসে উঠে পড়তো সে গাছের ডালে ডালে। ছিল উদ্দেশ্য একই সেদিন, আমাদেরও। বেশ কসরত করে বিশাল মোটা সেই গাছের কাণ্ডে গ্রাম্যবালকদের দা কাস্তের নিপুণতায় তৈরি হওয়া খাঁজে অতীব সাবধানে পা রেখে রেখে আমরা দুই তথাভাবিত শহুরে বালক উঠতে লেগেছিলাম তাতে, কোমরে ব্যাগ বেঁধে। গাছের মাঝামাঝি উঠার পর জামভর্তি একটা ডাল পেয়ে সেটিতেই আমি জাম তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেই , আরিফ বলেছিল
“আমি উপরের ওই ডালে উঠতাছি। ঐটার জামগুলি অনেক বড় আর পেকে ওইগুলি কুচকুচে কালা হইয়া আছে ।”
তারপর পরই ঝপাত শব্দের সাথে একটি চিৎকার কানে যেতেই, আবিস্কার করি নীচের শক্ত মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকা আরিফকে! অতপর আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর জানা গেল ডান হাত আর ডান পা দুটোই ভেঙে গেছে ওর। তাতে হাত পা প্লাস্টার করে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল ওকে মাসের পর মাস। এদিকে এই দুর্ঘটনার জন্য আরিফের পরিবার আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তাতে ভেঙে গিয়েছিল দুজনের বন্ধুত্বও আজীবনের জন্য। এই হল আমার জামগাছ ভীতির অনিবার্য কারন। তারপর সদ্যতরুণ আমি যখন কিষন চন্দরের জামগাছ পড়লাম, তখন একইসাথে যোগ হয়েছিল আমলাতন্ত্র ভীতি! ঠিক করেছিলাম তাই এ দুটোই এড়িয়ে চলবো যতোটা সম্ভব।
কথায় আছে না, ম্যান প্রপজেজ গড ডিসপজেজ! হ্যাঁ কালের প্রবাহে আমাদের চারদিক থেকে জামগাছ ক্রমশ উধাও হয়ে যাওয়ায় আজকাল জাম অতিউচ্চমূল্যের ফলে পরিণত হওয়ায় জামগাছভীতি আমার আর না থাকলেও, আমলা ও আমলাতন্ত্র ভীতি রয়েই গেছে; যেহেতু জাঁকিয়ে বসে আছে তারা সমাজ সংসারের দশদিকে। তাই অন্য সময়ে যতোই তাদের এড়িয়ে চলি না কেন, সৌদি ইকামার জন্য অতিঅবশ্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাসনদের আরবি অনুবাদ ঘিরে পড়তেই হয়েছিল আমায় বাংলার আমলাদের খপ্পরে অবশেষে!
যতোটা জানি খ্রিষ্টপূর্ব ২২০ শতকে প্রাচীন চীনের চীন রাজ বংশের হাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্রের জন্ম হলেও, আর মোগলদের আমলে এই উপমাহদেশে রাজদরবারকে কেন্দ্র করে শক্ত আমলাতন্ত্রের উপস্থিতি থাকলেও, আমাদের সমাজের স্তরে স্তরে সেটির শিকড় প্রোথিত হয়েছিল বৃটিশ বেনিয়াদের আমলেই । তারপর যতোই নেটিভেরা হয়ে উঠুক না কেন নিজেরাই নিজেদের শাসক, কমেনি দৌরাত্ম আমলাতন্ত্রের আমলাদের। তাতে আমাদের সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর তুমুল আকাঙ্ক্ষিত ‘ডিগ্রী”, বিসিএস পাশ দিতে ব্যর্থ হওয়ারা, সামান্যতম যেকোন সুযোগে চতুর্মুখে আমলাতন্ত্রের বিলয় কামনা করলেও, আমি কিন্তু সেই দলভুক্ত নই এখনো। হ্যাঁ সময়ে সময়ে নাচার হয়ে তাদের মুন্ডুপাত করলেও এটাও মানি আমি যে, সমাজে ,প্রতিষ্ঠানে শৃংখলা রক্ষা, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা, এমনকি কখনো কখনো ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যও এটির দরকার আছে অবশ্যই। তদুপরি এ অধম মনে করি, ব্যুরোক্রেসির তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি পি বা বাংলা প হলো, পলিসি , প্রসেস ও পারসন । এরমধ্যে প্রথম দুটোকে ছুরির সাথে তুলনা করলে, তৃতীয় পি বা প, পারসন ঠিক করে যে, সে কী ঐ দুই ছুরি নাপিত,সার্জন, চামার নাকি ডাকাতের মতো চালাবে। আবার সার্জনের মধ্যেও তো আছেন প্লাস্টিক সার্জন ও জেনারেল সার্জন। কথা হচ্ছে, আমার সনদের শুদ্ধতা বা খাটিত্ব সত্যায়িত করতে গিয়ে আমলাদের খপ্পরে পড়ার যে গল্প বলতে যাচ্ছি, তাতে কে যে কী ভূমিকায় ছিলেন, তা নির্ণয় করার ভার থাকুক বোদ্ধা পাঠকদের পরেই।
বিরাট গৌরচন্দ্রিকা হল, আসা যাক এবার সৌদি ইকামার কারনে আমলার খপ্পরে পড়ার ঘটনায়। তো ঐ ঘোরপ্যাঁচে পড়ার আগে আমার প্রথম উদ্বেগ এই ছিল যে, আমাদের দেশে অনুবাদ সাহিত্যের যে অবস্থা তাতে সনদসমূহ অনুবাদ করার জন্য নিভর্রযোগ্য কাউকে পাই কোথায়? কপাল ভাল সেই উদ্বেগ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলাম সম্পর্কে চাচাতো ভাই করিতকর্মা আক্কাসের বরাতে। ও আর ওর ভাই রাজ্জাক বহুদিন ধরেই ফকিরাপুলে অফিস জাঁকিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করে আসছিল। সেই এজেন্সি থেকে আমাদের গ্রামের চতুর্দিকের দশগ্রামের মধ্যপ্রাচ্যগামি নানানজন টিকিটসহ নানান মুশকিলের আসান পেয়ে আসছিল। এমতাবস্থায় বড় ভাইয়ের জন্য দেয়া আক্কাসের নিরলস আন্তরিক দৌড়ঝাঁপ কারণে দুদিনেই সুসম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল আমার সনদসমূহের অনুবাদ ও নোটারাইজেশন। সেসময় ঐ কাজ যিনি করেছিলেন স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তার ভাষায় ঐসবকে “ফরেন সার্ভিস” করাতে হবে কী না? উত্তরে আমার হ্যাঁ সূচক জবাব পেতেই, উনি জানিয়েছিলেন সনদ প্রতি দুইহাজার টাকা দিলে, তিনদিনের মধ্যে তাও সুসম্পন্ন করে দেবেন। কিন্তু অবোধ আমি রাজী হইনি সে প্রস্তাবে, দুই কারণে প্রথমত চাকুরী করি এমন এক গ্লোবাল কোম্পানিতে যারা নিজেদেরকে কমপ্লায়েন্সের শিখণ্ডী মনে করে, তাই সেখানে প্রতিবছরই আমাকে এন্টিব্রাইবারি সহ নানান কমপ্লায়েন্স পরীক্ষায় পাশ দিতে হয়। দ্বিতীয়ত ভেবেছিলাম বেসরকারি আমি না হয় অযোগ্য কামলা। কিন্তু আমারও তো সুযোগ্য কিছু বন্ধু আছে যারা মাঝারি সাইজের আমলা এবং আমলা নিয়ম মেনে তারা কখনোই আমার গলা টিপে ধরে না; ভাই বন্ধু বলে ডাকলে। থাকতে তারা চিন্তা কী? তো সে মোতাবেক বন্ধু মুনিরকে ফোনে তা জানাতেই বলেছিল ও– “কুছ পরোয়া নাই, আছি আমিও তোর সাথে।“
তো দুজনের যৌথ পরিকল্পনামাফিক তার পরের দিনই হয়েছিলাম হাজির উভয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার এ দায়িত্বে নিয়োজিত এক জাঁদরেল এসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মহোদয়ের দফতরে। অতীব তমিজের সাথে অনুমতি নিয়ে তার দফতরে ঢুকে, মুখ বুজে টেবিলে চোখ গুঁজে কাজ করার মহাব্যস্ততায় নিবিষ্ট জনাবকে আমার কাজটির ব্যাপারে তার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণী আবেদনটি জানাতেই, টেবিলের দিকেই চোখমুখ নিবদ্ধ রেখে মহাবিরক্তিতে বলেছিলেন তিনি “গেটে বাক্স ঝুলিয়ে রাখা আছে দেখেননি ? ওখানে ঐসব রেখে যান! সরাসরি এখানে আসলেন ক্যান?”
জবাবে ফের অত্যন্ত তমিজের সাথে জানিয়েছিলাম, প্রথমত এটা আমার জরুরী দরকার। দ্বিতীয়ত, ঠিক ভরসা পাচ্ছি না যে ঐ বাক্স থেকে সত্যায়িত হওয়ার নিমিত্তে দেয়া অনূদিত ও নোটারাইজড সনদগুলোর সাথে যুক্ত করা আমার মহামূল্যবান মূল সনদগুলোও হারিয়ে যায় যদি ? সেই কারণেই নিয়মভঙ্গ করে ওনার দরবারে হয়েছে অধমের এই অনুপ্রবেশ !
এতে তিনি সম্ভবত মেজাজ হারাইয়া ফেলায় তুমুল বিরক্তিতে যেই না ধমকে উঠতে গেলেন, তখনই মুনির ঘটনার রাশ টেনে ধরে জানিয়েছিল যে, সে নিজে পরিকল্পনা কমিশনের ই আর ডি সেলের একজন ডেপুটি চীফ এবং এই অধম তার বন্ধু! জোঁকের মুখে এতে কিঞ্চিৎ নুনের ছিটা পড়লেও বৈদেশ বিষয়ক সেই কনিষ্ঠ আমলা হাল না ছেড়ে মেকি বিনয়ে জানিয়েছিলেন তুমুল ব্যস্ততার কারণে উনি কিছু করতে পারছেন না, তাই পাশের কক্ষে আরেকজন আছে আমরা যেন যাই, তার সমীপে। সে কথা মতো পাশের কক্ষে হাজিরা দিতেই মুনির কামলা আমাকে কোন রকম সুযোগ না দিয়ে, এই জনাবকে আমলা তরিকায় ব্যাপারটি জানাতেই, কনিষ্ঠ এই বৈদেশ আমলা হেসে জানিয়েছিলেন, তিনি তো আরবি জানেন না! এমতাবস্থায় তিনি কী করিয়া এইসব সত্যায়িত করিবেন?
তা শুনে, পাশ থেকে ফোঁড়ন কেটেছিলাম ওইগুলো নোটারাইজড করা আছে বলে?
“ঐসব তো টাকা দিলেই হয়! তারাই যে আরবি জানে সেই গ্যারান্টি কী?”
আমার ফোড়নের বিপরীতে জনাবের এমত জবাবে মুনির ফের ঘটমান ঘটনার রাশ নিজ হাতে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, তাহলে করণীয় কী?
‘প্রথমে একজন ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে সব সত্যায়িত করাবেন। তারপর সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিয়ে আসেন। তখন স্যার আপনার সম্মানে সাথে সাথেই সত্যায়িত করে দেব। না না দাঁড়ান স্যার, উনি যেহেতু ফার্মাসিউটিক্যালসে আছেন, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকেও ঐসব সত্যায়িত করে নেবেন কিন্তু!’ অধমের উপস্থিতি পরিপূর্ণ উপেক্ষা করে মুনিরকে উপরের যে বিবরণী দিয়েছিলেন উনি, তাতে মনে মনে তার কাফকা প্রতিভার তারিফই করেছিলাম। কারন ততোক্ষণেতো তার ঐ উপেক্ষায় নিজেকে আমি সত্য সত্যই পোকা ভাবতে শুরু করেছিলাম!
সে যাক, এর পরের চার চারটি দিন আমার কামলা সময় ও মুনিরের আমলা সময়ের শ্রাদ্ধ করে, আরো দুই আমলা বন্ধু শাকিল ও খুকুর সহযোগিতায় ঘাটে ঘাটে, পিয়ন আর করনিক মহোদয়দের খুশি করে যে ভাবে সব সম্পন্ন করেছিলাম, তার বিশদ বিবরণ দিয়ে আপনাদের আর ফাইলাচাপায় ফেলতে চাই না।শুধু এটুকু বলে রাখি সকল দ্বারে দ্বারে ঘুরে, সনদগুলোর আরবি অনুবাদের কপিগুলোতে এতো সব সত্যায়িত সিল ছাপ্পড় ও সই পড়ার পর গুলোকে দেখে প্যাপিরাসে লেখা হায়ারোগ্লিফিকই মনে হচ্ছিল। এদিকে এই চারদিনে মুনিরেরও হয়েছিল বোধোদয় যথেষ্ট! বলেছিল সে তাই “শোন এরপর যদি আবার তোর এই কাজ করা লাগে, তবে সোজাসাপটা একটা পথ বের করতে হবে।”
জবাবে তাকে অনুবাদ সেন্টারের সেই লোক, যে নাকি আমার সনদপ্রতি দুই হাজার টাকা চুক্তিতে তিন দিনে সব “ফরেন সার্ভিস” করিয়ে দেবার নিশ্চয়তা দিয়েছিল, তার খবর জানাতেই মুনির গম্ভীরভাবে বলেছিল-“শোন, আমাদের দুজনের চারদিনের কর্মঘণ্টার মূল্য, সেসবের অপরচুনিটি কষ্ট, গাড়ীভাড়া, আর পদে পদে দেয়া বকশিশ যোগ করলে তার যে মোটমুল্য দাঁড়ায় তাতে ঐ লোকের দর বেশ সস্তাই মনে হচ্ছে, ওইটাই করিস।” দ্বিমত করার প্রশ্নই তো ওঠে না এতে! নির্দ্বিধায় তাই মুখে একমত হলেও, মনে মনে ভেবেছিলাম, দিলি তুই এ কোন বদদোয়া, বন্ধু! ইকামা তো নিব একবার, বারবার ক্যান পড়তে হবে এই চক্করে তবে আমার? ফাটা কপাল আমার! কাজী বংশের সন্তান মুনিরের অজান্তেই, তার দেয়া সেই বদদোয়া অবশেষে ফলেই গিয়েছিল। তাতে তারপরের দুই বছর আমাকে সনদসমূহের অনূদিত কপি বারবারই জমা দিতে হয়েছিল। আলাদা সে গল্প, আসবে যা ক্রমশ। আপাতত এটুকু বলে রাখি, এরপর ঐ সনদপ্রতি দুই হাজার টাকার চুক্তি, মৃতসঞ্জীবনীর কাজ করেছিল। ঐ ঘুষের মাজেজায় তখন দেখা গিয়েছিল আমাদের বৈদেশ বিষয়ক আমলাদের আরবি ভাষার বুৎপত্তি অতিব চমৎকার। কারণ ঐসব সময়ে সনদগুলোকে আর ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শুরু করে নানান মন্ত্রণালয়ের টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হয়নি। তাতে সত্যায়িত হবার পর ওগুলো সহজে পাঠযোগ্যও ছিল!
লেখক : প্রাবন্ধিক, ভ্রমণ সাহিত্যিক