বহুলকথিত ও শ্রুত ঐ কথাটির মতোই হয়েছে অবস্থা আমার। মানে ঐ যে বলে না, বায়ুর অথৈ সমুদ্রে সর্বক্ষণ নিমজ্জিত থাকিয়াও অধিকাংশ সময়ই বেশীর ভাগ মানুষই উহার অস্তিত্বের কথা ভুলিয়া যায়, বলছি তা। হ্যাঁ গত তিনসপ্তাহ ধরিয়া প্রথমবারের মতো একটানা মরুতে অবস্থান করিবার পরও আমার কিন্তু মরুভূমি দর্শন হয় নাই।আর দেখিবই বা উহা কী করিয়া? ছিলাম এবং আছি তো এখনো মরুর সকল চিহ্ন মুছিয়া দিয়া, মরুতে গড়িয়া উঠা আধুনিক শহর রিয়াদে! হ্যাঁ, তেলের গরমে মরুতে গড়ে উঠা মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের মতো ঝলমলে আলিশান শহর না হলেও, রিয়াদ তো হল বিশ্বের এক নম্বর তৈলাক্ত দেশের রজধানী। এর আগে বেশ ক’বার এ গ্রহের অন্যতম ঝলমলে মরু শহর দুবাইয়ে গিয়েছিলাম যখন, ওখানেও মরুভূমি দেখার মানসে গাঁঠের কড়কড়ে দেরহাম গুনে ডেজার্ট সাফারিতে গিয়ে থাই নাকি মিশরী কন্যার গরম উদর নৃত্য দেখেছিলাম। সে জায়গায় তুমুলভাবে মুতাওয়া নিয়ন্ত্রিত রিয়াদে ঐ রকম ডেজার্ট সাফারি আছে বলেও তো মনে হয় না।
ওহ ভাল কথা, এখানে পৌছার পর প্রথম সাক্ষাতে বস ফিল রাশ, ইমিগ্রেশনে লাইনে রাতভর দাঁড়িয়ে থাকা জনিত আমার দুর্দশার কথা শোনার পর রাগ ও হতাশায় বিমুঢ় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, আগাম সাবধানতা হিসাবে রিয়াদের এই মুতাওয়া বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিল। বলেছিল, যদিও সারা সৌদি আরবেই মুতাওয়া নামের ধর্মীয় পুলিশরা নৈতিকতার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে শুধু ভাবার্থেই ছড়িই ঘোরায় না বরং আক্ষরিক ভাবেই যথেচ্ছ বেত মেরে বেড়ায় অহরহ, তবে বাড় বাড়ন্ত রকমের প্রতাপ তাদের আছে রিয়াদেই। বিভিন্ন শপিংমল আর রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায় তারা বেত হাতে ঘুরে বেড়ায় শিকারের খোঁজে। শুধু বেত মারাই না, ইচ্ছা তারা করলেই যে কাউকেই তারা তুলে নিয়ে গিয়ে ঢুকিয়ে দিতে পারে হাজতে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে করতে পারে যথেচ্ছ মারধর। এতে কারো মৃত্যু হলেও সৌদি আইনে কিচ্ছু যায় আস না মুতাওয়াদের। আছে তারা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে। অবশ্য এক্ষেত্রে আক্রান্তের জাতিয়তা, গাত্রবর্ণ ইত্যাদির গুরুত্ব আছে প্রবল।
এ মরুতে আসার পর খোদ ফিল নাকি নিজে পড়েছিল মুতাওয়ার খপ্পরে, বার তিনেক। এর মধ্যে দুইবার সে পড়েছিল তাদের কবলে, ঘোরদুপুরে এই অফিসেরই দোরগোড়ায় । সেই দুইবারই, এখানাকার নিয়ম অনুযায়ী যোহরের নামাজের আজানের সাথে সাথে, গার্ডেরা অফিসের গেট বন্ধ করে, অফিসেরই ভেতরের নির্ধারিত নামাজের জায়গায় নামাজ পড়তে ব্যস্ত থাকায়, সামান্য দেরীতে নিজ গাড়ী চালিয়ে আসা ফিলকে গেট খুলে দেবার জন্য মজুদ ছিল না কেউ। ফলে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে অফিসের সেইডে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানায় ব্যস্ত ফিল পড়ে গিয়েছিল অচিরেই মুতাওয়াদের শ্যেন দৃষ্টির আওতায়!
তাতে বেত ঘোরাতে ঘোরাতে তাদের দু তিনজন ফিলের সামনে এসে হিস হিস করে আরবিতে যাই বলে থাকুক, সেসবের মাথা মুণ্ডুও না বুঝলেও, তার অপরাধ যে কী তা সাথে সাথেই ধরতে পেরে স্বভাবে কৌতুকপ্রিয় ফিল নাকি কপট গম্ভীরভাব ধরে উল্টো জিজ্ঞেস করেছিল-“স্যার, উড ইউ প্লিজ এলাও দিস কাফির টু প্রে ইন ইউর মস্কস?”
ফিলের এমত কথায় বুঝে হোক না বুঝেই হোক, প্রথমবার মুতওয়ারা তার গাত্রবর্ণের কারণে কিম্বা অজানা কোন কারণে তাকে রেহাই দিলেও, বাকি দুবার কিন্তু গাত্রবণের্র মাহাত্ম উপেক্ষা করে ঠিকই ফিলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সোজা তাদের অফিসে। যদিও ওখানে ওর কাগজপত্র চেক করতে গিয়ে তার আম্রিকান পাসপোর্ট চোখে পড়তেই, ছেড়ে দিয়েছিল সাথে সাথেই। তারপরও ফিলের গভীর বিশ্বাস এই যে, শুধুমাত্র নিজ গাত্রবর্ণের মহিমার কারণেই তিনবারের একবারও বেত তো দূরের কথা ফুলের টোকাও দেয়নি মুতাওয়ারা তাকে। এটুকু বলেই জন্মগত ব্রিটিশ ভদ্রতার কারণে ফিল থেমে গেলেও, বুঝে নিয়েছিলাম এ অধম না বলা কথাগুলো তার সহজেই। সেই থেকে বাইরে বেরুবার ব্যাপারে তুমুল সাবধান হয়ে যাওয়ায়, কোনরকম মুতাওয়া ঝামেলা ছাড়াই পার করতে পেরেছি দিনগুলো ।
অবশ্য, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো মানে বৃহস্পতি আর শুক্র বাদে, বাকি সব দিনের রুটিন তো ছিল একই। যা ছিল, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতক্রিয়াদিসহ গোসল সেরে নাস্তা খাওয়া শেষ করে, সাড়ে আটটার মধ্যে হোটেল থেকে ছয় সাত কিলোমিটার দূরের তাহলিয়া স্ট্রীটস্থিত অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা। এতে রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের উপর নির্ভর করে পৌঁছে যেতাম ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে অফিসে। প্রথম তিনদিন এইচ আর হেড গিউসি ও গদ্দিনশিন মার্কেটিং হেড মেতওয়াল্লি হোটেল থেকে আমাকে নিয়ে গেলেও, তারপর একটা গাড়িসহ ড্রাইভার সাইফকে বরাদ্দ করা হয়েছিল অধমের জন্য। আকার, আকৃতি ও সুরতে প্রথমে সাইফকে উপমহাদেশীয় বলে ভুল করলেও, জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম যে। এসেছে সে এই মরুর পশ্চিমের লোহিত সাগরের অন্যপাড়ের মরুদেশ সুদান থেকে দুই যুগেরও বেশী আগে। কথা অবশ্য তা না। কথা হচ্ছে এই গোটা সময়জুড়ে আমার চালক হিসেবে সময়জ্ঞানে সাইফকে, উপমহাদেশীয় বা সুদানি বা সৌদি নয়, মনে হয়েছে তাকে পাক্কা সুইস! সে যাক সকালে গিয়ে অফিসে ঢুকে যাবার পর, বের তো হতাম শুধুই যোহর নামাজের আজানের অনেক পরে দুপুরে খাওয়ার জন্য। রিয়াদের সৈয়দ ঘরানার তাহলিয়া স্ট্রিটকে বলা চলে আধা অফিসিয়াল আধা রেসিডেন্সিয়াল এলাকাই। ফলে আছে এখানে ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিং, সাবওয়ে সহ সকল আম্রিকান ফার্স্টফুডের আউটলেট আর কফি শপ যেমন, আছে তেমনি বিস্তর ইরানী, লেবানিজ, ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টও । তাতে ইন্ডিয়ান বাদে এই কয়দিনে প্রায় সবগুলোর খাবারই পরখ করা হয়ে গেছে অফিসের নানান সহকর্মীদের সৌজন্যে পাওয়া জামাই আদরে। যার মানে হচ্ছে এই দুপুরের খাওয়ার জন্য বের হলেই পেতাম টের যে, আছি মরুতে। এমনকি ফিলের ভাষ্য মোতাবেক যে “স্মোকিং ইজ দ্য অনলি ফান ওয়ান ক্যান হ্যাভ ইন দিস বিজাআ কান্ট্রি, মুতাওয়াভীতিতে সচেতনভাবে করতাম তো তাও অফিসের ভেতরেই নয়তো হোটেলের রুমেই।
এছাড়া ঐসব দিনগুলোতে অফিসে থাকার সারাটা সময়, চোখ কান নাক বুঝে কাজই করতাম শুধু এমনও কিন্তু নয়! বরং যা করতাম সারাক্ষন আপাতদৃষ্টিতে সে সবকে কেউ কাজ বলবে না অবশ্যই। কিন্তু করেছি যা–ই, তাতে চোখ কান নাক বুজিয়ে রাখার বদলে, যাকে বলে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত করে করা, করেছি তা সেভাবেই। বিস্তর সিগারেট টানতে টানতে করা আমার কর্মকাণ্ডকে আপাতদৃষ্টিতে যার কাছে যাই ঠেকুক, মনে মনে যে কাজে গভীর মনযোগী ছিলাম এ ক’দিন, সে কাজ করতে গিয়ে মানুষের একজীবন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দেখা যায় কাজের কাজ হয়নি মোটেও। সে কাজটি হল, মানুষ চেনা ! মানুষকে বোঝা! এই কাজটি যদি অতোই সহজ হতো, তবে তো এ গ্রহে, যুগে যুগে, দেশে দেশে, সমাজে সমাজে ব্রুটাস, মীরজাফর বা খন্দকার মোশতাকদের জন্ম হতো না । যেখানে মানুষ নিজের কাছের মানুষকেই চিনতে পারে না একজীবনে , সেখানে এখানেতো কাজ করতে হবে আমার কমপক্ষে দশ বারোটা জাতের সাথে।
এ পর্যন্ত পেশাগত জীবনের প্রায় পুরোটাই বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করলেও, এই প্রথম যাকে বলে মুখোমুখি হতে যাচ্ছি বহুজাতিক টিমের। কাজ করতে হবে যাদের সাথে অচিরেই। ফলে এখানকার সহকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া ব্যবসা সম্পর্কিত, গণ্ডা গণ্ডা পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড ডেক, ফাইলপত্র, দলিল দস্তাবেজ পড়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে পড়তে চেষ্টা করেছি মানুষ। ব্যবসা বিষয়ক ছাড়াও করেছি টুকটাক প্রশ্ন নানান বিষয়ে; বিশেষত এখানকার ইতিহাস, সংস্কৃতি মানুষের জীবন যাপন ইত্যাদি ঘিরে। অতপর গভীর মনোযোগে শোনাউল্লাহ হয়ে উত্তর শুনতে শুনতে বুঝতে চেষ্টা করেছি উত্তরদাতাকে। আতে এ ক’দিনেই এখানাকার অরগানাইজেশনাল সাইকোলজির ও অরগানাইজেশন পলিটিক্সের যতোটা বুজতে পেরেছি তা হল
৭০/৭৫ শতাংশ মিশরী অধ্যুষিত এখানকার অপারেশনে, মিশরীরা একেকজন ব্যক্তিগত ভাবে যতোই হউক না কেন তুমুল একনায়ক, সমষ্টিগতভাবে তারা চায় কায়েম থাকুক প্রতিষ্ঠানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার রাজ, মানে গণতন্ত্র। অন্যদিকে বাকি নানান দেশীয় ২৫/৩০ ভাগ নিয়ে তৈরি হওয়া সংখ্যালঘিষ্ঠরা, মিশরী সহকর্মীদের ইচ্ছাটিকে তাদের গণতন্ত্রপ্রীতি ভাবে না মোটেও। তারা বরং এটিকে গণ্য করে মিশরিদের ঘৃণ্য মাফিয়াবাদ বিসেবেই। এ ব্যাপারটি অফিসের জল হাওয়ায় সারাক্ষণই ইংরেজিতে যাকে বলে ওপেন সিক্রেটভাবে অব্যক্ত অকথিত কথা হয়ে ঘুরে বেড়ালেও, কোনরকম রাখ ঢাক না করে একদম খোলাখুলিভাবে জানিয়েছে আমাকে যে দু’জন, তাদের প্রথমজন হলো খাস সৌদি ফাহাদ আল হিন্দি, দ্বিতীয়জন ভারতীয় সৈয়দ রিজভি। করে কাজ তারা যথাক্রমে কোম্পানির রেগুলেটরি ও স্ট্রাটেজি ডিপার্ট্মেন্টে।
এরা ছাড়াও আকারে ইঙ্গিতে আরো অনেকেই বুঝিয়েছে যে, আমি এখানকার গদ্দিনসি মার্কেটিং হেডের স্থলাভিশিক্ত হওয়ায় যারপর নাই খুশি হয়েছে তারা। সাথে এও ইঙ্গিত করেছে যে, যতো দ্রুত আমি মিশরীদের এই মাফিয়া গ্যাং ভাঙ্গতে পারবো, ততোই হবে মঙ্গল প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য। আর এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য আছে তারা একপায়ে খাড়া। শুনেছি সে সবই আমি, কান খুলে হাসিমুখে, মুখ বন্ধ করে।
হ্যাঁ, মিশরী সহকর্মীদের নানান জনের নানান কথার ফাঁকে এবং তাদের শরীরী ভাষায়, প্রায়শ নিজেও যেমন টের পেয়েছি তাদের ঐ মিশরী ইজমের ব্যাপারটা, একই সাথে এও মনে হয়েছে যে, তাদের মধ্যেও ঘাপটি মেরে আছে একাধিক উপদল। কিন্তু তাদের নিজেদের মধ্যকার ঐ দলাদলির ভিত্তি যে কী, ধরতে পারিনি এ যাত্রায়। অবশ্যই বুঝতে হবে তা দ্রুত, আগামীতে। কারণ এ ধরনের দলাদলির পলিটিক্স প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। কাজ করতে এসে কাজ বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানে যারা দলাদলি পলিটিক্স করে বেড়ায়, তাদেরকে প্রশ্রয় দেবার মানুষ তো আমি মোটেও নই।
সে যাক পর সমাচার এই যে, যদিও বহুকাল ধরেই জানতাম আমাদের প্রবাসীকর্মীদের শ্রমে ঘামে ভর দিয়ে যতো ডলার ঢোকে বাংলাদেশে, তার সবচেয়ে বড় অংশটি যায় এই সৌদি থেকে এবং প্রায় ২৫/২৬ লক্ষ বঙ্গসন্তান অহোরাত্রি ঘাম ঝড়িয়ে বেড়াচ্ছে মাত্র সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার বিশাল এ মরু দেশটিতে, তারপরেও কী না গত তিন সপ্তাহে মাত্র একজনই বঙ্গসন্তান, পাপ্পু ভাইয়ের দেখা পেয়েছিলাম সেই প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে!
হ্যাঁ, দেশে আমার সহকর্মী ডাঃ রিয়াদের বন্ধু, ইঞ্জিনিয়ার পাপ্পু ভাই যে আসবেন সেদিন দেখা করতে রিয়াদ শহরের এই হোটেলে জানতাম তা, আগে থেকেই। তবে উনি যে এসেই, হোটেল থেকে আমাকে তুলে তার বাড়িতে ডিনারের জন্য নিয়ে যাওয়ার জন্য গোঁ ধরবেন, এজন্য ছিলাম না প্রস্তুত মোটেও। স্বীকার করতেই হয়, আচমকা পাপ্পু ভাইয়ের ঐ ধনুর্ভংগ পণের মুখোমুখি হয়ে মনে মনে বড়ই পুলকিত হয়েছিলাম প্রথমত খাস বাংলায় আড্ডা দেবার লোভে; দ্বিতীয়ত সপ্তাহভর নানান বিজাতীয় খাবার যতোই খেয়ে থাকি না কেন পাঁচতারা ম্যারিয়টে ও তাহলিয়া স্ট্রিটে; তাতে এ ক’দিন পেট ভরার সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরি মিললেও মন ভরছিল না কোনমতেই।
এবং ভাবীর, মানে পাপ্পু ভাইয়ের স্ত্রীর কল্যাণে সে রাতে মরুর বুকে টেবিল ভর্তি বাংলার অষ্টব্যঞ্জন সহযোগে তুমুল ভুঁড়িভোজের আয়োজন দেখে বুঝছিলাম পরিষ্কার, খাবারের বিষয়ে এ অধম যে খাসবাঙ্গাল, এ খবর রিয়াদ শহরে ঠিকই পৌঁছে দিয়েছিল সুপ্রিয় ডাঃ রিয়াদ। আর সে মতোই আয়োজন তো করেছেনই পাপ্পু ভাই ও ভাবি, তদুপরি বাঙালির অতিথিসেবা যে শুধু বাঙ্গাল খাবারে হয় না তাও মনে রেখেছিলেন তারা ফলে ছিল রোস্ট, কাচ্চি বিরয়ানী, ও গরুর রেজালাও। মোটকথা খাওয়া দাওয়ার এক্কেবারে হৈ চৈ অবস্থা যাকে বলে, হয়েছিল তা সে সন্ধ্যায়! তবে সমস্যা হয়েছিল কী না আড্ডা মারতে গিয়ে। কারণ পাপ্পু ভাই কথা বলছিলেন এমনই মেপে মেপে তাতে মনে হচ্ছিল, উনি সারাক্ষন অত্যন্ত সজাগ যে, আমি তার বন্ধুর বস হই! “খালাস, বাংলা”– ঢাকাগামী বিমান ধরার লক্ষে রিয়াদ বিমান বন্দরের বহির্গমন ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন ধরে ঢিমে তালে এগুতে এগুতে এই সব নানান কিছু ভাবছিলাম যখন মনে মনে, সামনের কাউণ্টারের ওপাশ থেকে ছুঁড়ে দেয়া ঐ কথা কানে যেতেই, সারা গায়ে লক্ষ সূঁচের তীব্র খোঁচা হজম করে দ্রুত কাউন্টার থেকে নিজ পাসপোর্ট তুলে বিষণ্ন পা বাড়ালাম সামনের দিকে।
লেখক : প্রবন্ধিক, ভ্রমণ সাহিত্যিক