ভাইরাসের অতিবিস্তারের প্রেক্ষাপটে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে একটানা ১৪ দিনের ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। কমিটি এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ৩৮তম সভায় এই বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জাতীয় কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে আমাদের যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।’ জাতীয় কমিটির সুপারিশ সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল রাতে তিনি বলেন, ‘কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সক্রিয় বিবেচনায় নেব। সংক্রমণ কমানোর জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন সেটাই করা হবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিয়ে এটাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’ সংক্রমণ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিডিনিউজ জানায় : জাতীয় কমিটির সুপারিশ এমন এক সময়ে এলো যখন চলমান কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউনের’ মধ্যে আবার দৈনিক কোভিড সংক্রমণ ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় দেশে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে আশির উপরে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় পরামর্শক কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্পূর্ণ শাটডাউনের বিষয়ে বলেছে, ‘কোভিডের ডেল্টা প্রজাতির সামাজিক সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশে ইতোমধ্যেই রোগের প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগ প্রতিরোধের জন্য খণ্ড খণ্ডভাবে গৃহীত কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের সামপ্রতিক পদক্ষেপের উদাহারণ দিয়ে এতে আরও বলা হয়, ‘অন্যান্য দেশ, বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া এর বিস্তৃতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী যেসব স্থানে পূর্ণ শাটডাউন প্রয়োগ করা হয়েছে সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কমিটি সর্বসম্মতি ক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ শাটডাউন দেয়ার সুপারিশ করছে।’
মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কোভিডের বিস্তারের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে শনাক্তের হার ফের বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি শোচনীয় দিকে মোড় নিতে পারে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।