দেশে বছরে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম

মুক্তির একমাত্র উপায় প্রতিরোধ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

জাহেদুল কবির | বুধবার , ৮ মে, ২০২৪ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। যদি বাবা ও মায়ের দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। স্বাভাবিক মানুষের লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন হলেও ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু অনেক কমে যায়। অপরিপক্ব অবস্থায় লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়, তাই রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এটি এক ধরণের এনিমিয়া। প্রধানত দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া হয়। তবে আমাদের দেশে ইবিটা ও বিটা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীই বেশি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে গত সাড়ে চার বছরে ৪৯৯ জনের থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ স্বাভাবিক ছিল। বাকি ২৫ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং ১৩ শতাংশের বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগী। বর্তমানে হেমাটোলজি বিভাগের থ্যালাসেমিয়া ক্লিনিকে ২৩০ জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক ও রোগী নিয়মিত চিকিৎসকদের ফলোআপে রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে ইবিটা ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগী প্রায় ৫৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া দিবস। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে আজ সকালে আলোচনা সভা ও র‌্যালি আয়োজন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আমাদের দেশে অনেকে মানুষ জানেন না, তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। তাই অজান্তেই থ্যালাসেমিয়া বাহকদের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী বাড়ছে। বাবামা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ, বাহক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ আর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ। আর বাবামার যেকোনো একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ, তবে থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা নেই। চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে হলে থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। শিশু জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো সহজলভ্য স্থায়ী চিকিৎসা বা টিকা নেই। এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানি দৈনিক আজাদীকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। আমাদের বিভাগের থ্যালাসেমিয়া ক্লিনিকে সপ্তাহে দুইদিন রোগীদের ফলোআপ করা হয়। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বাহকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছি।

চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সৌরভ বিশ্বাস দৈনিক আজাদীকে বলেন, থ্যালাসেমিয়া নিরাময়যোগ্য নয়। বাহকে বাহকের বিয়ে না হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আমরা জাতীয় পরিচয় ইস্যু করার আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে তিনি যদি বাহক কিংবা রোগী হয়ে থাকেন, তবে সেটি জাতীয় পরিচয় পত্রে (এনআইডি) উল্লেখ করার দাবি জানিয়েছি। মহান সংসদে এই সংক্রান্ত আইন পাশ হলে তবে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুমায় অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধসব অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী