দ্রুত ছড়িয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করা করোনাভাইরাসের ভারতীয় একটি ধরন বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল শনিবার এ তথ্য জানান। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর সমপ্রতি ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের ওই ভারতীয় ধরনটি শনাক্ত করেছে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি। ভারতে প্রথম এ মিউট্যান্ট শনাক্ত হয়েছিল বলে একে ভারতীয় ধরন বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশে করোনার এ ধরনটি পৌঁছে গেছে, তাতে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের। যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ভাইরাসের ভারতীয় তিনটি ধরনের মধ্যে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সমপ্রতি বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করা হয়। তার মধ্যে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের পরীক্ষায় একই ফল পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই মানুষকে খুবই বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া ৪ জনের শরীরে ভারতীয় ধরনের খুব কাছাকাছি ধরন শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এর আগে আইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর জানান, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি নমুনা পরীক্ষায় করোনার ভারতীয় শনাক্ত হয়েছে, যা জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিএসআইডি) প্রকাশিত হয়েছে।
আক্রান্তরা সবাই যশোর ও বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা সবাই বাংলাদেশি। গত কিছুদিন আগে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে এসে যারা হাসপাতাল থেকে পলায়ন করেন তাদের নমুনাও পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তবে তাদের কারও মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ৬ মে যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ভারত ফেরত ১৬ জনের নমুনা পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তাদের ৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক মো. ইকবাল কবীর জাহিদের নেতৃত্বে গবেষকরা জেনেটিক সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করেন। তাতে দুজনের শরীরের পাওয়া করোনাভাইরাস যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্যাম্পল অ্যানালাইসিস করার পর আমরা দুজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি১.৬১৭.২ পেয়েছি। দুজনের মধ্যে একজন নারী, একজন পুরুষ।
ভারতীয় নতুন ধরনটির আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্তে আরও কড়াকড়ি আরোপের পরামর্শ দেন তিনি। বর্ডার পুরো বন্ধ করতে হবে। ভারত থেকে আসা পণ্যের সঙ্গেও লোকজন যাতায়াত করছে। এই মিঙিংটাও কেয়ারফুলি হ্যান্ডল করতে হবে। বর্ডার অঞ্চলের মানুষকে দ্রুত টিকা দিতে হবে।
ভারতীয় ধরনটি কেমন : করোনার ভারতীয় ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। ভারতে প্রথম এ মিউট্যান্টটি শনাক্ত হয়েছিল বলে একে ভারতীয় ধরন বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৭টি দেশে করোনাভাইরাসের এ ধরনটি পৌঁছে গেছে, তাতে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা এই ধরনটির বাইরের দিকে রয়েছে কাঁটার মতো অংশ, যাকে বলা হয় স্পাইক প্রোটিন। মানব কোষকে আক্রমণের সময় এ ভাইরাস ওই স্পাইক প্রোটিন কাজে লাগায়। ওই স্পাইক প্রোটিনের কারণেই এ ভাইরাস অনেক বেশি সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। বি.১.৬১৭ ধরনটির ওই স্পাইক প্রোটিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয় গত বছর ডিসেম্বরে। কাছাকাছি আরেকটি ধরন অক্টোবরেই শনাক্ত হয়েছিল। গবেষণকদের ধারণা, এ ধরনটির জিন বিন্যাসে এমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে, যা হয়ত এ ভাইরাসকে আরও সংক্রামক করে তুলতে পারে, অসুস্থতার মাত্রা আরও গুরুতর করে তুলতে পারে কিংবা টিকার সুরক্ষাও অকার্যকর করে দিতে পারে।