বাংলাদেশে সম্প্রচারে ফিরেছে জনপ্রিয় ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলা। দুই সপ্তাহ পর চ্যানেলটি সম্প্রচার শুরু করল বিজ্ঞাপন ছাড়াই (ক্লিন ফিড)।
ক্যাবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ আজ শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) রাতে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “জি বাংলা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ‘ক্লিন ফিড’ পেয়ে পরিবেশকরা পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রচার শুরু করেছেন।”
বন্ধ থাকা বাকি চ্যানেলগুলোও পর্যায়ক্রমে সম্প্রচারে ফিরবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিডিনিউজ
অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে এমন বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করার সুযোগ বাংলাদেশের আইনে নেই। সেই নিয়ম বাস্তবায়নে সরকার কঠোর অবস্থানে গেলে পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা গত ১ অক্টোবর জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার স্পোর্টসহ ৬০টির মত বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু ক্লিন ফিড দেয় এরকম কিছু চ্যানেলও সেই সময় বন্ধ রাখা হয়। পরে সরকারের হস্তক্ষেপে সেসব চ্যানেল আবার দেখানো শুরু করেন পরিবেশকরা। এবার জি বাংলাও বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন ছাড়া ‘পরীক্ষামূলক’ সম্প্রচারে ফিরল।
বাংলাদেশে জি বাংলা সহ জি নেটওয়ার্কের সব চ্যানেলের পরিবেশক মিডিয়া কেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমীত রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বাংলাদেশে ক্লিন ফিড সরবরাহের বিষয়ে জি নেটওয়ার্কের বক্তব্য জানতে গত ৬ অক্টোবর ই-মেইল পাঠানো হলেও সেই সময় কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিনোদনভিত্তিক চ্যানেল হিসেবে বাংলাদেশী দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় জি বাংলা বিশেষ করে এ চ্যানেলের সিরিয়ালের জন্য মুখিয়ে থাকেন অনেকে।
রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি, মিরপুর ও রামপুরার বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে কয়েকজন দর্শক জানান, তারা দুই সপ্তাহ পর টেলিভিশনে জি বাংলার অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন।
দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, টেলিভিশনে জি বাংলার সম্প্রচার বন্ধ থাকলেও এর মধ্যে তারা ইউটিউবে পছন্দের সিরিয়ালগুলো ঠিকই দেখে নিয়েছেন।
কোয়াব সভাপতি আনোয়ার পারভেজ জানান, ঢাকায় পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু হলেও দেশের অন্যান্য এলাকায় তা শুরু হতে দুয়েকদিন লাগতে পারে।
২০০৬ সালের ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশী কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না।
বিদেশী চ্যানেল বন্ধের পর পরিবেশকরা দাবি করে আসছিলেন, বাংলাদেশের মার্কেট ছোট হওয়ায় ‘ক্লিন ফিড’ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে ব্রডকাস্টারদের রাজি করাতে পারছিলেন না তারা; আবার ফিড ‘ক্লিন’ করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও তাদের নেই।
তবে জি বাংলা ‘ক্লিন ফিড’ নিয়েই বাংলাদেশে সম্প্রচারে ফেরায় এখন অন্য চ্যানেলগুলোর বিষয়েও আশাবাদী হয়ে উঠছেন অপারেটররা।
কোয়াব-এর সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ বলেন, “দুয়েক দিনের মধ্যে ভারতের কালারস গ্রুপের (কালারস বাংলা) চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। জি বাংলা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিবেশকদের ক্লিন ফিড দিচ্ছে; পরে আমরা সম্প্রচার করছি। তবে কালারস গ্রুপ আইপি’র মাধ্যমে ‘ক্লিন ফিড’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।”
পরিবেশক ও ক্যাবল অপারেটররা বলছেন, আইন মেনে ‘ক্লিন ফিডেই’ বিদেশী চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করতে চান তারা। তবে পুরোদমে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের জন্য কয়েক মাস সময় দরকার তাদের।
সম্প্রচার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ‘ক্লিন ফিড’ পেলে তা সম্প্রচারে তেমন কোনো জটিলতা নেই তবে ‘ক্লিন ফিড’ না পেলে বিজ্ঞাপন ছেঁটে প্রচারের জন্য বাড়তি প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়।
জি বাংলা ছাড়াও বর্তমানে সম্প্রচারে থাকা বিদেশী চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআইরাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, ট্রাভেল এক্সপি ও দূরদর্শন।