দেশের স্বার্থেই বাঁচাতে হবে দেশের সব নদী

| শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গত মঙ্গলবার সকালে কর্ণফুলী নদীতীরের আনোয়ারার বদলপুরা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেছেন, বালুচর নদীর অংশ, নদীর জমি। নদীর জমি বিক্রি করা যাবে না। এমনকি কাউকে লিজও দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। নদী জনঅধিকার সম্পত্তি। এখানে সকলের সমান অধিকার থাকবে। সকলের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে সরকার এর স্বত্ব নিজের কাছে রেখে দেবে। ডিসি, এসি ল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব হচ্ছে নদীর জমি রক্ষা করা।
যতই বলি, নদী রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, নদী দখল হয়ে যাচ্ছে সমানে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনি দুর্বলতার কারণে নদী দখলদারদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব এসেছিল। সমপ্রতি উচ্চ আদালতের একটি রায়ে বলা হয়েছে নদীর অভিভাবক হচ্ছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা ভালো নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী। অনেক নদী হারিয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা নদীর বুকজুড়ে দেখা দিচ্ছে ধু ধু বালুচর। শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে এই নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশির ভাগ নদীর। সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে নাব্যতা হারিয়েছে অনেক নদী। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে একসময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত, সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা। চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে অনেকে।
কর্ণফুলী নদী তিন কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল উল্লেখ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে উভয় পাশে এক কিলোমিটার করে দখল করা হয়েছে। আর নদীর জমির মধ্যে কন্টেনার টার্মিনাল হতে পারে না। টার্মিনাল হবে নদীর পারে। প্রয়োজনে জেটি করা যেতে পারে, কিন্তু এর ফলে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বন্দর আইন ১৯০৮-এ জেটি নির্মাণের নির্দেশনাও দেওয়া আছে। নিজের ইচ্ছেমতো জেটি করা যাবে না। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের নেভিগেশন নষ্ট হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা সকল ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করে দেখব।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে আমরা আশান্বিত হই। দুর্বলতা দেখালে নদীখেকোরা পুরো নদী খেয়ে ফেলবে। দেশের স্বার্থেই নদীকে রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের সব নদী। সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। যেখানে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে, সেখানে তার ব্যবস্থা করতে হবে। নদী সংস্কার ও পরিচর্যার গুরুত্ব বিবেচনা করেই বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখা এবং ভাঙন প্রতিরোধে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনা থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। নদীর পানি যখন কমে যায়, তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। তাই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে দেশের নদীর দখল এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে নদী রক্ষা করার কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এটা রক্ষা করা এককভাবে কারো পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য চাই প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির সদিচ্ছা, দৃঢ় মনোবল ও আইনের বাস্তবায়ন। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দখলদারদের মুখোশ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নদীর জমি বিক্রি করা যাবে না, এমনকি কাউকে লিজও দেওয়া যাবে না- এমন বক্তব্যে অটল থাকতে হবে।