দেশের সমস্যা বারবার বাইরে গিয়ে বলে লাভ নেই : খসরু

জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে মহানগর বিএনপির স্মরণসভা নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত জনপ্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩১ মে, ২০২৫ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। কারণ একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সেটা কোন দল চায়, কোন দল চায় না; এটা বড় কথা না। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রত্যাশায় আছে।

তিনি গতকাল বিকেলে নগরের মুরাদপুর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্মরণ সভা’য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম আবদুল আউয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

আমীর খসরু বলেন, কোনো কথা বললে দেশের মধ্যে বললেই ভাল। দেশের বাইরে গিয়ে বেশি কথা না বলে দেশের ভেতরে বলা উচিত। এটা তো বাংলাদেশের সমস্যা। এই সমস্যা বাইরে গিয়ে বলে তো কোনো লাভ হবে না। বাংলাদেশের মধ্যে বলে এখানেই সমাধান করতে হবে। আমরা যদি বারবার বাইরে গিয়ে এসব কথা বলতে থাকি বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান হবে? সমাধান হবে না। এখানেই বলতে হবে, এখানেই সমাধান, বাংলাদেশের মানুষেই সমাধান। সংস্কার বলেন, বিচার বলেন, যত কিছুই বলেন, সমাধান বাংলাদেশের মানুষ। সমাধান দেয়ার দ্বিতীয় কোনো অস্ত্র নেই। মাত্র একটাই অস্ত্র, সেটা জনগণ।

আমীর খসরু বলেন, জিয়াউর রহমান এমন এক ব্যক্তিত, বিশ্বের গুটিকয়েক মানুষ ওই ক্যাটাগরিতে পড়েন। জিয়াউর রহমান প্রথমে একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। একটি দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যে সাহস, যে দূরদর্শিতা, যে ঝুঁকি একজন লিডার নেন, সেটা একটা বিশাল ব্যাপার। তিনি ওরকম মানুষ যিনি সবকিছুকে উপেক্ষা করে, নিজের কি ক্ষতি হতে পারে সেটা চিন্তা না করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

. এস এম আবদুল আউয়াল বলেন, ২৫ মার্চের সেই কালোরাত্রিতে জাতি যখন দিশেহারা তখনই নেতৃত্বশূন্য জাতিকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। চট্টগ্রামের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যান থেকে তিনি পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মাঠে থেকে দেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন দিগুণ করেছিলেন। নতুন কুড়ির মাধ্যমে শিশুদের মননের বিকাশ ঘটিয়েছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান ছিল শহীদ জিয়ার। তিনি আওয়ামী লীগের তলা বিহীন জুড়ি থেকে দেশকে স্বনির্ভর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ইতিহাসের অংশ।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই আমরা একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি বাকশালী দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এখন পর্যন্ত দেশের যে মৌলিক উন্নয়নগুলি হয়েছে তার ভিত্তি শহীদ জিয়া গড়েছিলেন। বিএনপি দীর্ঘ সতের বছর একটি ভোটবিহীন স্বৈরাচারর শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে এখনও মাঠে ঠিকে আছে। যদি আবার কোন নতুন ষড়যন্ত্র দেখতে পায় তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথেই অবস্থান নিবে বিএনপি। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা নাহলে জনগণ রাস্তায় নামবে। বাংলাদেশে আন্দোলনের সুনামী বয়ে যাবে।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার সততা ও দেশপ্রেমের ব্যাপারে তার শত্রুরাও প্রশ্ন তুলতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সম্মুখ সমরে তার বীরোচিত অংশগ্রহণ জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার শাসনামলে দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দেশের আপামর জনসাধারণকে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছিল।

এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ যখন হতাশা আর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত ঠিক তখনি শহীদ জিয়ার আবির্ভাব ঘটেছিল ধুমকেতুর মত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে ত্রাণ কর্তা হিসেবে শহীদ জিয়া বার বার দেশকে মুক্ত করেছেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন আবার অস্ত্রহাতে যুদ্ধও করেছেন। তিনি ছিলেন জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও দুটি সেক্টরের কমান্ডার। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ জিয়ার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

নাজিমুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। শহীদ জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান মানুষের হৃদয়ে।

স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুস সাত্তার, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, নগর মহিলাদলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক বেলায়েত হোসেন বুলু ও নগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা বৃষ্টির পরও জলাবদ্ধতা না হওয়া বড় সাফল্য
পরবর্তী নিবন্ধভারী বৃষ্টিতেও ডোবেনি নগর, স্বস্তি