দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি কোনোটিই সঠিক পথে নেই: জরিপ

| বুধবার , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন বেড়েছে বলে এক জনমত জরিপে উঠে এসেছে। এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ওই সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে যে দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি ‘ভুল’ পথে চলছে। ‘দ্য স্টেট অফ বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্নাল, ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি’ শিরোনামের একই সমীক্ষা চালান হয়েছিল ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও। সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ১০ হাজার ২৪০ জন মানুষের উপর ওই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। খবর বিডিনিউজের।

তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছেএমন ধারণা পোষণ করে ৩৯ শতাংশ মানুষ, যেখানে ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৬৪ শতাংশ। সবশেষ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ মনে করেরাজনীতিতে দেশ ভুল পথে চলছে, অথচ তিন বছর আগে এমন মনোভাব পোষণকারী ছিল ৩১ শতাংশ। রাজনীতি সঠিক পথে চলছে কি নাএ প্রশ্নের উত্তরে ১১ শতাংশ মানুষ বলেছে, ‘জানি না’, বাকি ৩ শতাংশ মানুষ কোনো উত্তর দেয়নি। নতুন সমীক্ষায় অর্থনীতি নিয়ে মানুষের ধারণা পুরোপুরি উল্টে যাওয়ার দশা দেখা গেছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেছিল, দেশের অর্থনীতি ঠিক পথে আছে। ২০২২ সালে এমন ধারণা পোষণকারীর হার নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে।

২০২২ সালে এসে ৭০ শতাংশ মানুষ বলছে, দেশের অর্থনীতি ভুল দিকে চলছে। অথচ তিন বছর আগেই এই হার ছিল শতকরা ২৮ ভাগ।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেসামাজিকভাবে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলছে, তিন বছর আগে এমন ইতিবাচক মূল্যায়নকারীর হার ছিল ৭৭ শতাংশ। বর্তমানে ৩৯ শতাংশ মানুষ মনে করে বাংলাদেশ সামাজিকভাবে ভুল পথে চলছে, ২০১৯ সালে এ হার ছিল ২২ শতাংশ।

২০১৯ সালের তুলনায় এবারের সমীক্ষার তিনটি দিকেই মানুষের ইতিবাচক ধারণা অপেক্ষাকৃত কম, যা সামগ্রিকভাবে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অর্থনৈতিক অবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ইতিবাচক মনোভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলেও সমীক্ষার ফল এসেছে।

৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করে, এমন ৮৪ শতাংশই ২০১৯ সালে জানিয়েছিল, তাদের মতে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে আছে। অথচ সবশেষ সমীক্ষায় মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে এ উত্তর পাওয়া গেছে। মাসে ৪০৫০ হাজার টাকা যারা আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মানুষ ইতিবাচক অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মনে করেন প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষ। ব্যবসায়িক মন্দা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি সমস্যার কথাও জরিপে উঠে এসেছে। সবশেষ সমীক্ষায় প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে, বাংলাদেশে এমন একটি পরিবেশ বিদ্যমান, যেখানে একদল রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। ২০১৯ সালে এই এই মত পোষণ করেছিল ৭২ শতাংশ মানুষ।

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭ শতাংশ পদ্মা সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আর ২৮ শতাংশ কৃতিত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলেও সমীক্ষায় দেখা গেছে। ২০১৮ সালে যেখানে ৩৪ শতাংশ মানুষ ইতিবাচক মতামত দিয়েছিল, সেখানে ২০১৯ সালে এই হার নামে ১৫ শতাংশে এবং ২০২২ সালে আরও কমে হয়েছে ১৩ শতাংশ। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ মনে করে, সরকার শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট করেছে ও করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার শঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসা প্রতষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে রাস্তা ও ফুটপাতে